মহানগর ডেস্ক : বঙ্গ রাজনীতির ময়দানে এখন সম্পর্কের টানাপোড়েনর লড়াই। এই সম্পর্ক কখনও রাজনৈতিক পরিসরে আবার কখনও সাংসারিক পরিসরে। তবে সব পরিসরই অতীতে বিলীন, শুধু লড়াইটাই জারি, আর সেই লড়াই এসে মিশেছে লোকসভা ভোটের ময়দানে। এই লড়াইয়ে কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী, আবার কোথাও প্রতিদ্বন্বী প্রাক্তন শ্বশুর-জামাই। এই লড়াই কোথাও বিষ্ণুপুরে তো আবার কোথাও শ্রীরামপুরে। তবে এই ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের লড়াইয়ে সর্বত্রই ভোটযুদ্ধে রত সেই তৃণমূল-বিজেপি। এমনই একটি কেন্দ্রের বিষয় আজ তুলে ধরব, যেখানে পরস্পর রাজনৈতক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদ্বয় হলেন সম্পর্কে পরস্পরের প্রাক্তন শ্বশুর-জামাই। এমনই এক লোকসভা কেন্দ্র শ্রীরামপুর। যেখানে তৃণমূল প্রার্থী প্রবীণ তৃণমূল নেতা ও বঙ্গ ও জাতীয় রাজনীতির এবং শীর্ষ আদালত ও কলকাতা হাই কোর্টের পরিচিত ব্যক্তি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার এই কেন্দ্রেই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী, কবীর শঙ্কর বোস, যিনি কল্যাণের প্রাক্তন জামাই, পেশায় শীর্ষ আদালতের আইনজীবী, মুকুল রায় এই কবীর শঙ্কর বোসকে রাজনীতিতে এনেছিলেন, এখন কবীর কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তাও পান।
কবীর শঙ্কর বোসের সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে বহুদিন। তবে তার পরও দু’পক্ষের মধ্যে ক্ষোভ, অশান্তি থামেনি। এবার এই পারিবারিক দ্বন্দ্বকেই রাজনীতির মূলধন করে কাজে লাগাতে চেয়েছে বিজেপি। ২০১৫ সালে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছিলেন কবীর। তার জেরে কবীরের ফ্ল্যাটের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের লোকেরা। এখন শ্বশুর ও প্রাক্তন জামাইয়ের লড়াইয়ে ময়দান সংসদের সীমা টপকে শ্রীরামপুর কেন্দ্রের আঙিনায় এসে পৌঁছেছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচয় নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। শ্রীরামপুরকে অনেকেই কল্যাণের গড় বলে মনে করে। কল্যাণ এখানে কাজ করেন, ভোট পান, সেই ভোট পেয়ে সংসদে যান, নিজের কেন্দ্রের মানুষের হয়ে সংসদে দাবি তোলেন। এই দিক থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক সাংসদের চাইতে দক্ষ, যোগ্য।
তবে তাঁর প্রতিপক্ষ কবীর শঙ্কর বোস রাজনীতিতে নবীন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুর কেন্দ্রে কবীরকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুদীপ্ত রায়ের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন কবীর শঙ্কর বোস। সেই কবীরকেই এবার লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জাঁদরেল সাংসদ-নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে বিজেপি। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে শ্রীরামপুর এলাকায় কবীরকে তৎপর হতে দেখা গেছে। তখনই স্থানীয় মানুষজন আন্দাজ করতে শুরু করেছিলেন শ্বশুরের বিরুদ্ধে প্রাক্তন জামাইকে এবার হয়তো প্রার্থী করবে বিজেপি। বাস্তবে তাই হল। ২০১৭ সালে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় কবীরের। সেই পারিবারিক দ্বন্দ্বকেই এবার ভোটের ময়দানে চালান করে দিল বিজেপি, এই রাজনীতি বাংলায় ছিল না, বলা যায় নতুন আমদানি। প্রাক্তন শ্বশুর-জামাই লড়াইয়ে এবার শ্রীরামপুরে লোকসভা নির্বাচনে নতুন মুখ সিপিএমের দীপ্সিতা ধর এবার প্রার্থী। সিপিএম এআার লোকসভা নির্বাচনে একটা নতুন স্লোগানের আমদানি করেছে, যে স্লোগানটা ১০০% রাজনৈতিক, তা হল, “রুটি-রুজি-রুচি”। দেখা যাক এই তিনটি সমাজের অত্যন্ত জরুরী দাবিকে সামনে রেখে সিপিএম প্রার্থী বৃহত্তর রাজনৈতিক লড়াইয়ের দাবিতে মানুষের সমর্থন পায় কি না। সিপিএমের এই স্লোগানটাই এই সময়ের প্রধান রাজনৈতিক দাবি বলে বামপন্থীরা মনে করেন, তাঁদের বতব্য, এই দাবি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে অরাজনৈতিক, সাংসারিক দ্বন্দ্বের কচকচানিকে হাতিয়ার করছে বিজেপি-তৃণমূলের মতো রাজনৈতিক দলগুলো, যা আসলে কোনও রাজনীতিই নয়। এখন দেখার শ্রীরামপুরে বামেদের দাবি অনুযায়ী রাজনীতিতে এবার পটপরিবর্তন হয় কি না!