মহানগর ডেস্ক: “সবটাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র”, বুধবার সন্দেশখালির এক সময়কার বেতাজ বাদশা এই মন্তব্য করলেন। শাহজাহান এদিন বলে, “সবটাই ষড়যন্ত্র। সবটাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।” এর পর সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করে, “কে ষড়যন্ত্র করছেন?” জবাবে শাহজাহান বলে, “বুঝতে পারছেন তো সব।” কিন্তু শেখ শাহজাহানের এই বক্তব্য থেকে কোনও ভাবেই বোঝা যাচ্ছে না এই ষড়যন্ত্র তার বিরুদ্ধে কে বা কারা করল? কে তাকে জোর করে তার কন্যার নামে কোম্পানি বানিয়ে চিংড়ি বিক্রির ব্যবসা ও সন্দেশখালির তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষের জমি দখল করে ১১ বছরে ১৩৭ কোটি টাকা পাচার করাল? আর তিনি তো কোনও রাজনৈতিক নেতা সেই অর্থে নয়, তিনি সন্দেশখালির একজন কুখ্যাত রাজনৈতিক মাফিয়া। তাহলে কি তাকে তার দেলে কেউ ষড়যন্ত্রে ফদঁসালো? কেন না তার সঙ্গে তো অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সংশ্রব ছিল না এবং সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহান কোনও রাজনৈতিক দলেন নেতাকে ঢুকতেও দিত না। এমন কি ওই এলাকার মানুষ ভোট দিতেও পারত না। এই অভিযোগ কিন্তু কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতার নয়, খোদ ইডির এবং সন্দেশখালির মানুষের। তাই প্রশ্ন কে শেখ শাহজাহানকে দিয়ে এসব কাজ করাল, আর এটা ষড়যন্ত্র বুঝলে শেখ শাহজাহান কেন সেটা আগেই জানায়নি?
এদিকে, শেখ শাহজাহানের ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খারিজ করে সন্দেশখালির প্রাক্তন বাম বিধায়ক নিরাপদ সরদার বলেন, “শেখ শাহজাহানের সম্পত্তির উৎস কী সবাই জানে। এত ইটভাটা, এত ভেড়ি সব ওর বাবার টাকায় না কি? ও এখন বুঝতে পেরেছে ইডি – সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচা অসম্ভব। তাই ষড়যন্ত্রের গল্প ফাঁদছে। ঠিক মতো জিজ্ঞাসাবাদ করলে ওর টাকা কোথায় যেত তা খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে বার হয়ে যাবে।”
এদিকে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, “শেখ শাহজাহানের সবচেয়ে বড় সাকরেদ, মেন্টর, গাইডার,লিডার হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আর তাঁর ভাইপো। শেখ শাহজাহান অভিষেকের নবজোয়ার যাত্রায় ছিল, তখন তার সঙ্গে অভিষেকের দরজা বন্ধ করে বৈঠক হয়।। শেখ শাহজাহানের মোবাইল আমিনুল নামে পুলিশ অফিসারের কাছে আছে, ওটা উদ্ধার করে শেখ শাহজাহানের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে ফোন খুললেই বোঝা যাবে ৫৫/৫৬ দিন শেখ শাহজাাহান পুলিশের কাদের সঙ্গে কথা বলেছে।” বুধবার সকালে শেখ শাহজাহানকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার করে জোকা ইএসআই হাসপাতাল থেকে বের করার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ শাহজাহান বলে, তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
মঙ্গলবারই শেখ শাহজাহানকে আদালতে পেশ করে বিস্ফোরক দাবি করে ইডি জানায়, গত ১১ বছরে শেখ শাহজাহানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অন্তত ১৩৭ কোটি টাকা জমা পড়েছে। সেই টাকা এসেছে শেখ সাবিনা ফিসারিজ নামে একটি মাছ চাষের সিন্ডিকেট থেকে। অভিযোগ, মাছ রফতানির আড়ালে বিপুল এই টাকা বিদেশে পাচার করেছে শেখ শাহজাহান। শাহজাহানের কালো টাকার কারবার নিয়ে ইডির সামনে বিস্ফোরক বয়ান দিয়েছে তার ভেড়ি কারবারের ম্যানেজার মহিদুল মোল্লা। ইডিকে তিনি জানিয়েছেন, পুরো কারবারটাই হত শাহজাহানের নির্দেশে। শাহজাহানের নির্দেশে কাজ করত ১০ – ১২ জন ভেড়ি ব্যবসায়ী। কোথায় কোন ভেড়ি দখল করা হবে। কী ভাবে দখল করতে হবে সব তাদের জানাত শাহজাহান। ভেড়ির মাছ বিক্রির টাকার লভ্যাংশ তাদের মাধ্যমেই আসত শাহজাহানের কাছে। সূত্রের খবর, ওই ব্যবসায়ীদের জেরা করে শাহজাহানের সম্পত্তির উৎস জানতে চাইছে ইডি।