বিক্রম ব্যানার্জী: শনিবার জুনিয়র চিকিৎসকদের সাথে বৈঠকের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কথা মতো সোমবার তা বাস্তবেও রূপায়িত হয়েছে। এদিন নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয় বৈঠক। 17 জন জুনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে নবান্নে লাইভ স্ট্রিমিং করে আলোচনায় বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও আসতে বলা হয়েছিল 10 জন প্রতিনিধিকে। আলোচনা পর্বে টাস্ক ফোর্স গঠন থেকে শুরু করে থ্রেট কালচার বন্ধের মতো একাধিক দাবি উঠে আসে। তবে 2 ঘন্টারও বেশি সময়ের বৈঠক শেষে রাজ্য সরকার বনাম জুনিয়র ডাক্তারদের জট কাটবে কিনা এই নিয়ে জল্পনার মাঝেই আমরণ অনশন তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা।
বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় অনশন তুললেন জুনিয়র চিকিৎসকরা!
মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে নিজেদের সমস্ত অপ্রাপ্তি উগরে দেন অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। আলোচনা পর্ব শুরুর কয়েক মুহূর্তের মধ্যে উঠে আসে একাধিক দাবি। হাসপাতালে নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা চালু করার আর্জি জানানো হয় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের তরফে। সেই সাথে আমরণ অনশনকারী ডাক্তারদের গলায় উঠে আসে থ্রেট কালচারের প্রসঙ্গও। দেবাশিস মুখ খুলতেই যাচ্ছিলেন এমন সময়ে বিরুপাক্ষ এবং অভীকের নাম নিতেই তাকে থামিয়ে দেন মমতা। যদিও এরপরই স্টেট টাস্ক ফোর্সের মতো কলেজে কমিটি গঠনের দাবিও তোলা হয় জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে। এক আন্দোলনকারী ছাত্রীর অভিযোগ, টাস্ক ফোর্স কী কাজ করছে তা তাদের জানা নেই।
তরুণীর সাথে সাথেই প্রতিটি টাস্ক ফোর্সে মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধিত্ব নিয়েও সুর চড়ান দেবাশীষ। জুনিয়র ডাক্তারদের একের পর এক অভিযোগে থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বলেন, 536 জন চিকিৎসক আন্দোলন চলাকালীন অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করেছেন। এই খবর রয়েছে। তবে প্রশ্ন পাল্টা প্রশ্নের মধ্য দিয়ে বারংবার চিকিৎসকদের অনশন তুলে কাজে ফেরার ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, আন্দোলন শুরু করলে তা শেষও করতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের দাবিতে 21 দিন ধর্না করেছিলেন তিনি। সিঙ্গুর নিয়ে টানা 26 দিন অনশনে ছিলেন। কেউ আসেনি তখন। জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি প্রতিবার তাদের অনশন তুলে কাজের যোগ দেওয়ার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে দীর্ঘদিনের আমরণ অনশনের একটা বড় কারণ যিনি অর্থাৎ রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। সোমবার সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন তিনিও।
তার উপস্থিতিতেই মুখ্যমন্ত্রী সামনে নিজেদের সমস্ত দাবি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছিলেন জুনিয়ার ডাক্তাররা। টাস্ক ফোর্স, রেসিডেন্ট ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন সহ্ থ্রেট কালচারের মতো বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি নিয়ে সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে যথার্থভাবে উপস্থাপন করার পরই মিটিং শেষ করেন অনশনকারীরা। তবে দীর্ঘ সময়ের এই বৈঠকের পর কোন দিকে ঘুরবে রাজ্য বনাম জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশনের চাকা ? এই প্রশ্ন যখন রাজ্যবাসীর মনে ঠিক সেই মুহূর্তে আমরণ অনশন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই সাথে মঙ্গলবার সকালে সর্বাত্মক ধর্মঘটে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। এবার সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসলেন অনশনকারীরা। কিন্তু হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত বদল? অনশন কর্মসূচি থেকে নিজেদের সরিয়ে আনার বিষয়ে জুনিয়র ডাক্তার রুমেলিকা কুমার জানান, কোনও রকম সরকারি অনুরোধে নয়, শুধুমাত্র নির্যাতিতার বাবা মায়ের কথায় অনশন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: বাবাকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর মা ও মেয়ের, ভাইরাল ভিডিও