মহানগর ডেস্ক: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় বার হওয়ার পর তৃণমূল শিবির কিছুটা হলেও দ্বিধাগ্রস্ত, আর সেটা বোঝা যাচ্ছে তৃণমূল সুপ্রিমো থেকে শুরু করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষের মন্তব্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা হাই কোর্টের রায়কে বেআইনি বলে শীর্ষ আদালতে যাওয়ার হুঙ্কার দিয়েছেন। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ডিভিশন বেঞ্চের এই রায় ভুল। আর কুণাল ঘোষ বললেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কীর্তি এইসব। তাঁর সময়েই হয়েছে। আমি বলেছিলাম। আমাকে হুমকি দিয়েছিল। ব্রাত্যকে সরিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়ে নিল। আবার তাঁকে সরানোয় ক্ষিপ্তদের মতো আচরণ করা হয়েছিল। আদালত অবশ্য অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের লাইনে চলেছে। তবে চাকরিপ্রার্থীরা গরমে রাস্তায় বসে কেন শাস্তি পাবে? পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেন জেলের সেলে থাকবেন? জেলের মাঠে এই রোদ্দুরে দাঁড় করিয়ে রাখা উচিত। জেলের মাঠে তাঁকে বসিয়ে রাখা উচিত। আমি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্যই এটা হয়েছে। এর জন্য দলকে কেন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে?’’
কুণাল ঘোষ কি তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছেন? কেন না কুণালের বক্তব্য তিনি এসবের প্রতিবাদ করায় পার্থ নাকি তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। ব্রাত্য বসুকে সরিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নিল। মন্ত্রিসভায় নেওয়ার মালিক তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে কি কুণাল মমতাকে নিশানা করছেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে? কেন না এই কুণালই আবার বলছেন পার্থকে আবার সরিয়ে দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্তদের মতো আচরণ করেন। সরালেন তো সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তাহলে কুণাল যেটা আগে বুঝেছিলেন সেটা কি মমতা বুঝতে পারেননি মন্রিসভার শীর্ষে থেকেও? কুণালের এই মন্তব্য তৃণমূলকে বাঁচিয়ে পার্থকে দোষী করা হলে পার্থর অন্যায়ের পিছনে মমতার ইন্ধনের ইঙ্গিত রয়েছে। কারণ কুণাল বলেছেন, “ব্রাত্যকে সরিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়ে নিল”, নিয়ে নেওয়ার মালিক যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা জেনে কুণাল এসব বলছেন তো? না কি এই রায়ে ভোটের মুখে অনেকটা এলোমেলো হয়ে গেলেন কুণাল ঘোষ!
রায় ঘোষণার পর কুণাল ঘোষ সোমবার আরও বলেন, ‘‘আদালত রায় দিয়েছে। তার নানা দিক আছে। অনভিপ্রেত রায়। আইনজীবী-সহ এসএসসি সবটা খতিয়ে দেখছে। কিছু লোক ভুল করেছিল। ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে নেচে বেড়াচ্ছিল। যারা অন্যায় করেছে তাদের শাস্তি হোক। যারা যোগ্য, তাদের চাকরি হোক। কিন্তু গোটাটাকে এক বন্ধনীতে রাখার চেষ্টা করেছে কেউ কেউ। কেউ কেউ পাপ করেছে বলে আজ সকলের ভোগান্তি হল। যোগ্যদের চাকরি হোক। আমরা আশা করেছিলাম, যোগ্যদের চাকরি হবে। দেখা গেল, সকলের ক্ষেত্রে জটিল পরিস্থিতি হল। ত্রিপুরাতে বাম আমলে এমন একটি ঘটনা ঘটে। ১০ হাজারের বেশি শিক্ষকের প্যানেল বাতিল হয়। ভোটের সময় বলে অনেকে এটা নিয়ে কুৎসা করবে। যারা যোগ্য তাদের কী হবে? আইনি খুঁটিনাটি দেখতে হবে। বিরোধীরা নানা সময় বাধা দিচ্ছে। সরকার সব সাবধানতা রেখে কাজ করবে। যারা অন্যায় করেছে তাদের এক বিচার। আর যারা যোগ্য তাদের অনিশ্চয়তায় ফেলে দেওয়া এটা দুর্ভাগ্যজনক। যে বা যারা অপকর্ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তারাই ছড়ি ঘুরিয়েছে সেই সময়। কিছু বলতে গেলেই অপ্রিয় হয়ে যেতে হয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ গুটিকয়েকের জন্য এই অবস্থা এল। চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। এখন সরকার সেই ব্যবস্থা নিয়েছে। বাম জমানাতেও দলদাসদের চাকরি হয়েছে। তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যা করে গিয়েছেন, তা কোনও ভাবে হতে পারে না।’’
<span;>কুণাল ঘোষ সম্ভবত এই মন্তব্য করার সময় ভুলে গিয়েছিলেন যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যখন এই দুর্নীতি করছেন তখন তিনি তৃণমূলের মহাসচিব, আর সেই দলটি তখন করছেন কুণাল ঘোষ,পদাধিকারবলে তখন কুণাল পার্থর চাইতে দলে কম পদমর্যাদার। তাই প্রশ্ন, তৃণমূলের মহাসচিব কি দলের বাইরে কোনও আলাদা কেউ?