Home Bengal ধর্ণা মঞ্চে ভোটের মুডে মমতা, চেনা ভঙ্গিতে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপিকে বিঁধলেন তৃণমূলনেত্রী !!

ধর্ণা মঞ্চে ভোটের মুডে মমতা, চেনা ভঙ্গিতে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপিকে বিঁধলেন তৃণমূলনেত্রী !!

by Mahanagar Desk
24 views
Mamata attacked the CMP, Congress and BJP in a familiar manner

নির্বাচন এলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজসেবা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নিজের মতো করে বক্তব্য রাখতে থাকেন। রেড রোডের ধর্ণা মঞ্চ থেকে শুক্রবার সেই পুরনো কায়দায় মমতা তাঁর বক্তব্য রাখলেন। বললেন কেন্দ্র রাজ্যের টাকা দিচ্ছে না। সিএজি রিপোর্ট মিথ্যে। তবে সম্প্রীতি, ধর্ম, জাত, ভাষা নিয়েও অনেক কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা এদিন বললেন, “আমি অনুকূল ঠাকুরকে জমি দিয়েছি, লোকনাথ করেছি, ইসকন মন্দির তৈরি হচ্ছে, ৭০০ একর জমি দিয়েছি। দিঘায় জগন্নাথ মন্দির হচ্ছে, কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর করেছি। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ যে যখন যা বলেছে সব করে দিয়েছি। হারমোনিয়াম বাজিয়েছি, তালও দিয়েছি। কোনটা করিনি বলুন?”

একটা সময় এসব শুনে মনে হচ্ছিল না এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র বিরোধী ধর্ণা মঞ্চ। এমন সময় মমতা হঠাৎ বলে উঠলেন, “সবই নাকি ২০৪৭ সালে করবে। তাহলে ২০২৪ এর বাজেট করার কি দরকার ছিল?” এই অভিযোগ কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে হলেও বিজেপি বা মোদির নামোল্লেখ করেননি মমতা।

এর পরই তৃণমূলনেত্রী বলেন, “রাজ্যে তো অনেক টিকটিকি, গিরগিটি এলো, রাজ্যের পয়সায় খেলো, রাজ্যের নামে কিছু পেলে? তোমরা ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে রেখেছ। কাজ করে মানুষ টাকা পাচ্ছে না। তুমি বলছো ঘরে ঘরে জল দিয়েছো, আমি বলি আমরা সব না তৈরি করে দিলে জল দিতে কি করে? সব কাজ আমরা করছি, তোমরা শুধু বিজ্ঞাপন করছো। সব রেল স্টেশনে সেলফি জোন করেছো আর ট্রেন দুর্ঘটনায় লোক মারা যাচ্ছে। গ্যাসের দাম ১১০০ টাকায় তুলে নিয়েছিলে। তারপর ভোট দেখে কমিয়েছো। আবার বাড়াবে ভোটের পর। ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওনি। এখন দেশের একটাই ট্যাক্স। রাজ্যের ভাগের টাকা রাজ্যকে দাও। তবে এতো করেও বাংলার ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করতে পারেনি। শুধু মিথ্যে কথা, ভাঁওতা, ছলনা। আইসিডিএস, আশাকে বলছে আয়ুস্মান দেবে। হবে কোত্থেকে? আমিতো ওদের স্বাস্থ্যসাথী করে দিয়েছি। আশা কর্মীদের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমি টাকা দিই। আমরা ক্ষুধা সূচকে ১৪০টি দেশের পরে। বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও বলে, লজ্জা করে না। মহিলাদের গ্যারিন্টি আমরা দিই। স্বাস্থ্যসাথী ৩ কোটি মহিলা পায়, উদ্বাস্তু, চা বাগান, বস্তিতে পাট্টা দিয়েছি। এর মধ্যেও স্কুল, কলেজ,হাসওাতাল হয়, বই, পোশাক, মিড ডে মিল দিই। ওর বেটি বাঁচাও বেটি পড়াওয়ে ১০০ কোটি বাজেট, ৫ টাকা করেও কোনও রাজ্য পায় না। আমাদের স্কুল, কলেজের মেয়েরা কন্যাশ্রী পায়, রূপশ্রী পায়। ১ লক্ষ ৪ হাজার বিধবা ভাতা করে দিয়েছি, ৭ হাজার মানবিক ভাতা করে দিয়েছি বিশেষ ভাবে সক্ষমদের। কেন্দ্র ভাবছে আমাদের ভাতে মারবে।”

এরপর রাজ্য বাজেট ও রেলের অব্যবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সাংবাদিকদের জন্য স্বাস্থ্যসাথী, সরকারি কর্মচারীদের জন্য সারা জীবন চিকিৎসার সুবিধা রাজ্য দেয়। আমি যখন রেল মন্ত্রী ছিলাম একটা ইঁদুর দেখা গেলে অভিযোগ হয়। এখন কি হচ্ছে রেলে? আমি বলছি না, সাধারণ মানুষ আমায় বলছে।”

এখন বলছে, “ওয়ান ইলেকশন, ওয়ান নেশন। বলুন ট্রানজিশন পিরিয়েডটা কি হবে? তার থেকে বলুন, এক দেশ, এক রাজ্য, এক ভাষা, এক পোশাক! মধ্যপ্রদেশে, রাজস্থানে ডিম, মাছ, মাংস তুলে দিল। তুমি ঠিক করে দেবে কে কি খাবে? শুধু ধুনুচি নিয়ে নাচবে আর ধুনুচি খাবে? এমন দেশ, এমন প্রধানমন্ত্রী, এমন ভিনডিক্টিভ আমি দেখিনি। আমি তিনবার দেখা করেছি। বললেন অফিসার-টু-অফিসার কথা হবে, তারপর পাওশা যাবে। বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিল না। স্বাধীনতা দেখেনি এখন ইতিহাস, ভূূগোল পাল্টে দিচ্ছে। একা লড়তে পারছে না বলে যে বিরেধীতা করছে তাঁকে জেলে ভরছে। একমাত্র আদিবাসী মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন তাঁকে গ্রেফতার করেছে।”

এর পরই সিপিএমকে দূষে মমতা বলেন, “সিপিএম বিজেপিকে জেতাতে চায়। আমরা কংগ্রেসকে বলেছিলাম ৩০০ আসনে তুমি একা লড়ো, বাকি ২৯৪টি আসন আঞ্চলিক দলকে দাও। সেটা না করে কংগ্রেস মুসলিমদের সুরসুরি দিতে শুরু করল। তোমাদের এতো অহঙ্কার? পারবে ৪টের বেশি আসনে জিততে? আমি বলেছিলাম ২টো আসন দেবো, জিতিয়ে দেবো। একজন বাংলায় অনুষ্ঠান করতে আসছে আমাকে এক বারের জন্য জানায়নি, আমি প্রশাসনের কাছে জেনেছি। পারলে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে বিজেপিকে হারিয়ে এসো। মণিপুরে আমি প্রথম গেছি। ওখানে ২০০-র বেশি চার্চ পুড়িয়েছে। এখন সব বসন্তের কোকিল হয়ে এসেছে। বাচ্চা আদর করেনি জীবনে, চায়ের দোকানে বসেনি কোনওদিন, এখন তারাই বাচ্চা কোলে নিচ্ছে, চায়ের দোকানে বসছে। বিড়ি শ্রমিকদের বাড়ি যাচ্ছে। নিজেরা বিড়ির বদলে কি খায় সব জানি।”

এসব বলে মমতা যে রাহুল গান্ধীকেই নাম না করে সমালোচনা করলেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারন রাহুল গান্ধী বাংলায় ন্যায় যাত্রায় এসে বাচ্চাদের কোলে নিয়েছেন, চায়ের দোকানে বসেছেন, বিড়ি শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়েছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়াকেও একহাত নেন। বলেন, “সকালে যা দেখাতে বলে, লিখতে বলে সেটাই দেখায়,লেখে। ওদিকে কর্মীদের মাইনে দেয় না, ছাটাই করে।”

“বিজেপির কেন এতো ঔদ্ধত্য?”, এই প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, ” যাদের কোটি কোটি টাকা। তারা ভাবে গুডিগুডি সরকার আসবে, ওদের একটু টাকা দিই। তাহলে ওরা সরকারে এলেই তাদের সুবিধা।”

এদিন নন্দীগ্রামে লোডশেডিং করে ভোটে তাঁকে পরাজিত করার প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, “সব দিকে নজর রাখবেন। আমি গর্ব করে বলি এখনও আমি সরকারি মাইনে নিইনা। দেড় লক্ষ টাকা পেনশন পাই, আমি নিই না। আমি ভাবি এসব নিয়ে কি হবে? আমারতো কোনও অসুবিধা হয় না। কেউ আমায় সাততলা বাড়ি দেবে বললে আমি বলবো না। আমার যে বাড়িটা আছে ওটাই আমার সুইট হোম।”

মমতা এদিন প্রশ্ন তুলে বলেন, “কোভিডের সময় পিএম কেয়ারের টাকা কোথায় গেল? ডিফেন্সের টাকা বাইরে যায় কি জরে? রাজীব গান্ধীকে বলতো বোফর্স গান্ধী। মহুয়া মৈত্র এই প্রশ্ন তুলেছিল, তাই তাঁকে সংসদ থেকে বহিস্কার করল।”

মমতা এদিন বলেন, “ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন” এর মিটিং দিল্লিতে আছে আমায় কমিটিতে রেখেছে। আমি ৫ তারিখ তাই দিল্লি যাবো, আমার বক্তব্য জানাতে।”

এদিন মমতা ভাগ করে দেন কবে তৃণমূলের কোন শাখা সংগঠন ও কেন জেলা এই ধর্ণা মঞ্চ পরিচালনা করবে। এই ধর্ণা মঞ্চ চলবে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরবর্তী পর্যায় জেলায় জেলায় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্ণা মঞ্চেই থাকবেন বলে জানান।

tag: Mamata Banerjee, Congress, CPM, BJP, TMC, Red Road

You may also like