মহানগর ডেস্ক: জলপাইগুড়ির ঘুর্ণিঝড় এবং তাতে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির দায় নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারের উপর চাপিয়ে দিলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গে পৌঁছেই বিজেপিকে নিশানা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, কাছাকাছি থেকেও কেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রবিবার রাতেই বিপর্যস্ত জলপাইগুড়ির পরিস্থিতি পরিদর্শনে এলেন না? পাশাপাশি, তৃণমূলের সেনাপতি জানালেন, কেন রাতেই তড়িঘড়ি কলকাতা থেকে জলপাইগুড়িতে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক এদিন বলেন, কেন্দ্র যদি আবাস যোজনার টাকা দিত, ঘর পেত সাধারণ মানুষ, তাহলে মানুষ চোট পেত না।” তবে উত্তরবঙ্গে পা রেখেই অভিষেক কিন্তু বলেছিলেন, “আমি এখানে কোনও রাজনীতি করতে আসিনি।” অভিষেক তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন কেন্দ্রের জন্য ঘর না পেয়েই দুর্যোগে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। অভিষেক বলেন, “এর দায় একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি নেতাদের।”
অভিষেক সোমবার বিকেলে বাগডোগরা বিমান বন্দরে নেমে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই সব জেলার আসনগুলিতে তো বিজেপি জিতেছিল। কিন্তু তাঁদের কাউকেই দেখা গেল না। সুকান্ত মজুমদার কোথায়? উনি তো কাছেই থাকেন। এখনও তাঁর সময় হল না ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দেখতে আসার?’’ এ প্রসঙ্গেই অভিষেক জানান, কেন মুখ্যমন্ত্রী রাতেই উত্তরবঙ্গে চলে এসেছেন তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘সকালে হাসপাতালে গেলে অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে। নানা প্রোটোকল থাকে। কাজে অসুবিধা হতে পারে। সেই জন্য উনি রাতে চলে এসেছেন। গ্রামে গিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির কথা বলতে। হাসপাতালে গিয়েছেন। তদারকি করেছেন।’’
সোমবার জলপাইগুড়ির আসার সময় মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওঁর চার্টার্ড ফ্লাইট আছে, তাই উনি রাতে চলে গিয়েছেন। আমাদের সাধারণ বিমান, যখন সময় হবে, আমি যাব। রাজ্যপালও তেমন গিয়েছেন। আমি তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে চাই, মাল নদীতে হড়পা বানের সময়ে যদি ওঁর এই তৎপরতা দেখতে পেতাম, তা হলে ভাল লাগত। তা হলে বুঝতাম আপনি রাজধর্ম করছেন, ভোটধর্ম করছেন না।’’ শুভেন্দুর এই মন্তব্যের জবাবও দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর দাবি অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী নাকি এখানে ছবি তুলতে এসেছেন। তা হলে আমার প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী এলেন না কেন? উনি ছবি তুলতে ভালবাসেন। ওঁর জঙ্গল সাফারি দেখেছি আমরা। ভুটান সফর দেখেছি। উনি আসতে পারতেন। ফোটোশুটের ব্যাপারে বিজেপির কথা না বলাই ভাল। প্রচারসর্বস্বতাই তো ওদের রাজনীতি। এ বার মানুষ এদের শিক্ষা দেবেন।’’
অভিষেক এদিন এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য বাংলায় আবাস যোজনা প্রকল্পে কেন্দ্রের টাকা না দেওয়াকেই দায়ী করেন। অভিষেক বলেন, “যদি আবাস যোজনার টাকা পেত, আবাসের ঘর পেলে মানুষ চোট পেত না। সুকান্ত মজুমদার বলেছেন আমি একটা ফোন করলেই কেন্দ্র থেকে টাকা চলে আসবে। তার মানে ওরা বাংলার টাকা আটকে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাউগাছিতে বলেছেন, ৪৪ লক্ষ বাড়ি তৈরী করে দিয়েছেন। আমি বলছি ৪ পয়সা গত ২ বছরে মোদীর সরকার দিয়েছে প্রমাণ করতে পারলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।” অভিষেক বাগডোগরায় নেমে নিজেই বললেন, “এসব নিয়ে আমি রাজনীতি করতে আসিনি।” অথচ অভিষেক উত্তরবঙ্গ থেকে যা বললেন তার পুরোটাই রাজনৈতিক। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল থেকে ঘটনাস্থলে, হাসপাতালে গিয়েছেন, দুর্গতদের সব রকমের সরকারি সাহায্য, সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁর মুখ দিয়ে কিন্তু একটাও রাজনৈতিক কথা ব কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করতে শোনা যায়নি। এটাই বোধহয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অন্য রাজনীতিকদের পার্থক্য।