মহানগর ডেস্ক : শেখ শাহজাহান সন্দেশখালিতে তফসিলি জাতি উপজাতিদের যে জমি দখল করত সেই টাকা চিংড়ির ব্যবসায় সাদা করত। এখনও পর্যন্ত ৩১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা শেখ শাহজাহান এভাবেই বিদেশে পাচার করেছে, এমনই দাবি ইডির। সোমবার ইডির বিশেষ আদালতে এই তথ্য জানিয়েছে। এদিকে এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র ঋজু দত্ত বলেছেন, “এসব দল জানত না। দল দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়ে চলে।”
ইডির দাবি, আদিবাসীদের জমি দখল করত শেখ শাহজাহান। তার পর টাকার বিনিময়ে সেই জমি অন্যদের ব্যবহার করতে দিত। আদালতে এই দাবিই করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। সেই কালো টাকা কী ভাবে সাদা করা হত, তা-ও আদালতে জানিয়েছে ইডি। ইডির তরফে শাহজাহানকে হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। ইডির দাবি, দেশের স্বার্থে, সন্দেশখালির মানুষের স্বার্থে শাহজাহানকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। সেই আর্জি মঞ্জুর করেছে আদালত। শেখ শাহজাহানকে ইডির হেফাজতে পাঠিয়েছে। ১৩ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানির নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার ইডির বিশেষ আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আরও দাবি করেছে, সন্দেশখালিতে একটা বড় রকমেট সিন্ডিকেট চালাত শেখ শাহজাহান। সেই সিন্ডিকেটের মূল পান্ডা ছিল শেখ শাহজাহান। শাহজাহানের ঘনিষ্ঠদের এই সিন্ডিকেটের সদস্য হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ নিজেদের ভেড়ির মালিক পরিচয় দিয়েও উপার্জন করেছে বলে আদালতে দাবি করেছে ইডি। তাদের আরও দাবি, জমি দখলের কালো টাকা চিংড়ির ব্যবসার মাধ্যমে সাদা করা চলত। আসলে কালো টাকা সাদা করে সেই টাকাটা চিংড়ি ব্যবসার লেনদেন হিসাবে দেখানো হত। সেই ব্যবসা শাহজাহানের মেয়ে শেখ সাবিনার নামে চলত। ইডির দাবি, চিংড়ি বেচা-কেনা করে দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ টাকা নয়ছয় করা হয়েছে।
এদিন শেখ শাহজাহানের আইনজীবী জাকির ইডি যে ভাবে শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছে, তার বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁকে গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করানো হয়নি বলে আদালতকে জানিয়েছেন জাকির। শেখ শাহজাহানের আইনজীবীর আরও দাবি, যে সকল এফআইআরের ভিত্তিতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে ইডি ইসিআইআর বা এনফোর্সমেন্ট কেস ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট দায়ের করেছে, তার মধ্যে প্রথম দিকের একটিতে চার্জশিটে শেখ শাহজাহানের নাম নেই।
ইডির বিশেষ আদালতে সোমবার শেখ শাহজাহানকে হাজির করানো হয়। ছ’বছরের জন্য শেখ শাহজাহানকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল। আদালতের লকআপে প্রবেশের সময় ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে এদিন হোঁচট খান শাহজাহান। এ দিকে সে সময় আইনজীবীদের একাংশ তাঁর ফাঁসি চেয়ে স্লোগান তোলেন। তাঁকে দুষ্কৃতী বলেও তোপ দাগেন। স্লোগান দেওয়া আইনজীবীদের এক জন বলেন, “শাহজাহান যা করেছেন, তাতে ফাঁসিও ওঁর শাস্তির জন্য যথেষ্ট নয়।” এক জন আইনজীবী হিসাবে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই এ ভাবে ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হওয়া যায়? এই প্রশ্নের উত্তরে ওই আইনজীবী বলেন, “আমি সাধারণ মানুষ হয়ে বলছি, ওঁর ফাঁসি হওয়া উচিত। মহিলাদের সঙ্গে উনি অভব্য আচরণ করেছেন। তাই চাইব শাহজাহানকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক।”
শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ইডির তরফে দু’টি ইসিআইআর বা এনফোর্সমেন্ট কেস ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে একটি রেশন বণ্টন দুর্নীতি এবং আর একটি বেআইনি ভাবে জমি দখল ও মাছ চাষ। এমনকি মাছ আমদানি-রফতানির মাধ্যমে বিদেশে কোটি কোটি টাকা বেআইনি লেনদেনের মামলাও রয়েছেবশেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার সিবিআইয়ের হেফাজত থেকে শাহজাহানকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল। শনিবার সকালে বসিরহাট আদালতে বেআইনি ভাবে জমি দখল এবং মাছ আমদানি রফতানি ব্যবসার মামলায় শাহজাহানকে সংশোধনাগারে গিয়ে জেরা করার আবেদন করেন ইডির আইনজীবীরা। আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করে। এর পরেই শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শাহজাহানকে সংশোধনাগারে গিয়ে জেরা করেন ইডির তদন্তকারীরা। আপাতত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত শেখ শাহজাহানের ঠিকানা ইডি হেফাজত। ১৩ এপ্রিল ফের ইডির বিশেষ আদালতে পেশ করা হবে শেখ শাহজাহানকে।