মহানগর ডেস্ক: উত্তম সর্দারের গ্রেফতারির ঠিক সাতদিন পর সন্দেশখালির আর এক অভিযুক্ত শিবু হাজরাকে পুলিশ গ্রেফতার করল। শিবু এবং উত্তমের বিরুদ্ধে পুলিশ অবশেষে সন্দেশখালির মহিলাদের অভিযোগ অনুসারে গণধর্ষণ এবং খুনের হুমকি ধারায় দায়ের করেছে। এদিকে কেন এখনও শেখ শাহজাহান অধর সেই প্রশ্নে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশ যখন শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল ইডি তখন সেই তদন্ত বন্ধ করে দেয়। এখন ইডি কেন শেখ শাহজাহানকে ধরছে না?
এদিকে রাজ্য সরকারের পুলিশ উত্তম ও শিবুর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের হুমকির অভিযোগ করলেও তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “ওদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের হুমকির অভিযোগ বিরোধীরা করেছে। বিষয়টি প্রমাণসাপেক্ষ।” শেখ শাহজাহান প্রসঙ্গে রাজীব কুমার নিজেই প্রশ্ন তুলে বলেন, ইডিই তো শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল। তারা কেন তাঁকে গ্রেফতার করছে না? রাজ্য পুলিশ যখন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল, ইডিই সেই তদন্ত থামিয়ে দিয়েছে। শাহজাহানের সহচর উত্তম সর্দার ও শিবপ্রসাদ হাজরার বিরুদ্ধে শনিবার গণধর্ষণের ধারা যোগ করেছে পুলিশ। সে প্রসঙ্গেও রাজীব জানান, এক মহিলার গোপন জবানবন্দির ভিত্তিতে দু’জনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিজির বক্তব্য, ‘‘৮ ফেব্রুয়ারির আগে আমাদের কাছে সন্দেশখালি থেকে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তার পর থেকে আমাদের কাছে যা যা অভিযোগ এসেছে, সব কিছুই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সন্দেশখালির মহিলারা নির্ভয়ে পুলিশে কাছে গিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারেন।’’
গত সপ্তাহে দফায় দফায় হিংসার ঘটনার পরে সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। তা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলাও হয়। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে এলাকাভিত্তিক ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। এ প্রসঙ্গে ডিজি জানান, সন্দেশখালিতে আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশ-প্রশাসন বন্ধপরিকর। এলাকাভিত্তিক পর্যালোচনা করেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকাভিত্তিক রিভিউ করা হবে। আমরা চাইছি স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসুক। তাই যে সব এলাকায় ১৪৪-এর দরকার নেই, সেই সব জায়গায় এক-দু’দিনের মধ্যে ১৪৪ ধারা তোলার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’
কেন এখনও সন্দেশখালির বিভিন্ন জায়গায় ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিয়ে রাজীব কুমার বলেন, ‘‘কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা করছিল। বিভিন্ন লোক আইন ভাঙার চেষ্টা করছিল। তাই বাধ্য হয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।’’
সন্দেশখালিতে শাহজাহান শেখ য়াহজাহান ও উত্তম এবং শিবুর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের জমিজমা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘‘রবিবার থেকে ভূমি সংক্রান্ত দফতর সন্দেশখালিতে শিবির করবে। তাদের কাছে অভিযোগ জানানো যাবে। একই সঙ্গে পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানানো যাবে। আমরা সত্যের সামনে দাঁড়াতে রাজি আছি। যার বিরুদ্ধে যে রকম প্রমাণ পাওয়া যাবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বিধানসভায় বলেছেন, শেখ শাহজাহানকে টার্গেট করে ইডি সন্দেশখালিতে ঢুকেছে। ওখানে সংখ্যালঘু এবং এসসি/এসটিদের মধ্যে অশান্তি হচ্ছে। সন্দেশখালির ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধীদের চক্রান্তের অভিযোগ দেখছেন। তবে সন্দেশখালিতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই শাসকদল ওই এলাকার যেখানে ১৪৪ ধারা নেই সেখানে ঢুকতে পারলেও বিরোধীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিরোধীদের অভিযোগ, এই রাজ্যে আইনের শাসন নয়, শাসকের আইন চলছে। তবে রাজ্য সরকার সন্দেশখালিতে তৃণমূলের মিটিংয়ের আগেই ১৪৪ ধারা তুলে নিতে পারে বলে ডিজিপি-র কথায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।