মহানগর ডেস্ক : রাজ্যে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিল কলকাতা হাই কোর্টের দেবাংশু বসাক ও সব্বার শরিদির ডিভিশন বেঞ্চ। এই রায়ে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল হল। বাতিল করা প্যানেলে যোগ্যরা থাকলে তারা পুনরায় চাকরির সুযোগ পাবেন। তাই বিতর্কিত চাকরি প্রাপকের মধ্যে কেউ যোগ্য থাকলে তিনি যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবেন। এই রায়ে বঞ্চিত ও যোগ্য চাকরি প্রাপকদের মুখে হাসি ফুটল। দীর্ঘদিন যারা যোগ্য হয়েও চাকরির দাবিতে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছিলেন তাদের যোগ্যতার নিরিখে এবার চাকরি পাওয়ার সম্ভবনা তৈরী হল। পাশাপাশি মেয়াদ উত্তীর্ণ চাকরি প্রাপকদের চাকরি বাতিল হল। মোট ২৩ লক্ষ চাকরি প্রার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এসএসসিকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্টের দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য সরকার মন্ত্রিসভায় বৈঠক করে সুপার মিউমেরিক পোস্ট তৈরী করে চাকরি দিয়েছিল। সেই চাকরি এবং রাজ্য সরকারের সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরীর বিষয়টিকেও আদালত অবৈধ ঘোষণা করল। এই কাজ কারা, কেন করেছে তার তদন্ত করবে ডিবিআই। দরকারে তাদের হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই। ২০১৬ সালের গ্রুপ সি, ডি এবং একাদশ,দ্বাদশে এই চারটি ভাগে এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করল কলকাতা হাই কোর্টের দেবাংশু বসাক ও শব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। চারটে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল হল। চার সপ্তাহের মধ্যে যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে তাদের প্রাপ্য বেতন ১২% সুদ সমেত ফেরত দিতে হবে। রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভা যে সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরী করেছিল, তার ফলে যে অতিরিক্ত নিয়োগ করেছিল সেটা বাতিল করল কলকাতা হাই কোর্ট। এসএসসিকে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। রাজ্য সরকারের কাছে কলকাতা হাই কোর্টের এই রায় বড় ধাক্কা। রাজ্য সরকার চেয়েছিল, সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরী করে চাকরি অবৈধ চাকরি প্রাপকদের কাজ বজায় রাখতে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর এই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরীর ফলে যাদের চাকরি হয়েছে সেটাও বাতিল হল। এই ভাবে অবৈধ চাকরি দোওয়ায় যারা জড়িত তাদের সিবিআই তলব করতে পারবে এবং প্রয়োজনে যে কাউকে হেফাজতে নিতে পারবে। এই রায় রাজ্য সরকারের কাছে ভোট চলাকালীন বড় ধাক্কা।
রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সটরকার সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খায়। সুপ্রিম কোর্টের এই ডিভিশন বেঞ্চ গঠিত হয়।
কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে ১৭ রকমের দুর্নীতি এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হয়েছে। দেবাংশু বসাক রায়দানের সময় বলেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হাতে গোনা কয়েকজন সঠিক চাকরি প্রাপক থাকতেই পারেন। তবে অবৈধ চাকরি প্রাপকদের সংখ্যাটা এতো বেশি তাই সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হল। ৩৮১ পাতার এই রায়ে ৯টি ইস্যু উল্লেখ করা হয়েছে। এসএসসি নতুন করে অবিলম্বে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে স্বচ্ছ ভাবে। কোথাও যেন তাতে কোনও দুর্নীতির প্রশ্ন না আসে। প্রসঙ্গত, প্রাক্তন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় যে রায়দান করেছিলেন, সেই রায়ই এদিন বহাল রইল। যাদের চাকরি বাতিল হল তাঁদের ১২% সুদ সমেত চার মাসের মধ্যে বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট ডিএম এবং স্কুল পরিদর্শকদের ৬ সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরতের বিষয়টি জানাতে হবে। তবে ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাসের নিয়োগ মানবিক কারণে একমাত্র বৈধ রইল। এই রায়ে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবাইকে এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি সিবিআই সেই তদন্ত চালাবে। দরকারে তাদের তলব করবে এবং হেফাজতে নেবে সিবিআই, এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।