মহানগর ডেস্কঃ স্বামী বিবেকানন্দের ১৬২তম জন্মদিন। শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনে ভোর থেকে ব্রতী হয়েছেন ভক্তরা। প্রাতে ভক্ত সমাগম থেকে শুরু করে মঙ্গল আরতি দিনভর চলছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শহর থেকে শহরতলি। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কেন্দ্র গুলিতে সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে মহামানবের জন্মদিনের বিশেষ আয়োজন। স্বামীজীর জীবনদর্শন থেকে জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়, ভক্তিগীতি, পদাবলি পাঠ, যোগব্যায়াম, নাম সংকীর্তনের মধ্য দিয়েই চলছে উদযাপন। স্বামীজীর জন্মদিনে থাকলো তাঁর জীবনের বেশ কিছু বিশেষ ঘটনা।
ছোট থেকেই নরেনের যুক্তিবিদ্যায় মুগ্ধ হতো সকলে। জীবনের পথে নতুন বাঁক আসে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে। তাঁর জীবন দর্শন, চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি, যুক্তিবোধ শুধু জন্মদিন কেন! আমাদের চলার পথে প্রতিটি মুহূর্তের পাথেয় বলা চলে। সমাজের জন্য তাঁর রেখে যাওয়া বাণী চিরকালের মূলমন্ত্র। ছোট থেকে জাতপাত নিয়ে কোনোদিনই বিশেষ ভাবতেন না স্বামীজি। বাবা বিশ্বনাথ দত্তের ছায়াতে বড় হচ্ছিলেন। বৈঠক খানাতে আসছেন বহু মানুষ। জাত ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে বৈঠক খানার দাওয়াতে রাখা হুঁকো গুলোতে টান দিতেন আগত মানুষজন। সকলের জন্য আলাদা করা থাকলেও একদিন বিলে সব হুঁকোয় টান দিয়ে বসলেন খেলার ছলে। বাবা রেগে গিয়ে সন্তানকে প্রশ্ন করলেন এমন আচরনের কারণ কি। বিবেকান্দর উত্তর ছিল”দেখলাম জাত যায় কিনা!”
স্বামী অভেদানন্দর অসুস্থতার খবর পেয়ে খুব ভেঙে পড়েছিল বিবেকানন্দ। কাউকে কিছু না জানিয়ে পৌঁছে যান বারাণসীতে। এমন সাহসী যুবককে কাঁদতে দেখে সকলে প্রশ্ন করেন। স্বামীজী বলেছিলেন যে সন্ন্যাস মানুষকে পাথর বানিয়ে দেয়। হৃদয় কঠিন হয়ে যায়। তা তিনি মানেন না। বিবেকানন্দ সম্পর্কিত এরকম বহু প্রেরনাদায়ক ঘটনা রয়েছে যা একটা প্রতিবেদনে ব্যক্ত করা সম্ভব না।
স্বামীজির কাছেও এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তখন বিলের জ্ঞানের বাণী ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে বিদেশে। তাঁর কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে যুবা থেকে বৃদ্ধা। জাতি ধর্ম বর্ন লিঙ্গ সবকিছুর উপরে বিবেকানন্দর কথায় মোহিত মানুষ। সবাই আদর্শ ভাবতেন স্বামীজিকে। সেসময় বিবেকানন্দের চিন্তা প্রভাবিত করেছিল এক বিদেশিনীকে। সেই নারী এতটাই আছন্ন ছিলেন যে তিনি আবেগের বসে স্বামীজিকে বিয়ে করার কথা জানান। মনে মনে নেওয়া সিদ্ধান্ত জানালেন বিবেকানন্দকে। স্বামীজীর উত্তরে শুনে গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো অবস্থা ওই যুবতীর।
মহিলার ইচ্ছা জেনে স্বামীজি বলেছিলেন তিনি সন্ন্যাসী মানুষ তার পক্ষে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব না। তবে ওই নারীর ইচ্ছেপূরনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্বামীজি। মহিলা উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন। সন্ন্যাস ভঙ্গ করে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে না পারলেও। তিনি ওই বিদেশিনীর পুত্র হতে পারবেন। তাতে করে সন্ন্যাস ভঙ্গ হবে না অথচ ওই মহিলাটি একটি সন্তান পাবেন। আমি আপনাকে আমার ছেলে মনে করবো। আপনি আমাকে মাতৃ স্নেহ দেবেন। এই বলে বিবেকানন্দর পায়ে লুটিয়ে পড়েন মহিলা এবং বলেন তুমি সত্যি খুব বুদ্ধিমান। আমি তোমাকে নিয়ে গর্বিত।