মহানগর ডেস্ক: বুকে পাথর রেখে স্ত্রীর প্রেমেই শিলমোহর দিলেন বছর চব্বিশের যুবক স্বামী। এলাকার দশজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত চুক্তি করে, প্রেমিকের হাতে তুলে দিলেন নিজের বিবাহিত স্ত্রীকে। পাঁচ বছরের সংসার যাপনের পর, স্ত্রীকে এক বছরের প্রেমিকের হাতে তুলে দিলেন প্রাক্তন স্বামী। চুক্তি অনুসারে বছর তিনেকের শিশু সন্তান প্রাক্তন স্বামীর কাছে রেখেই প্রেমিকের সঙ্গে নতুন সংসার পাতলেন যুবতী বধূ।
সাত বছরের প্রেম, তারপর বিয়ে, স্ত্রী সন্তান সহ সংসার করার পর এভাবে চুক্তিতে প্রেমিকের হাতে স্ত্রী তুলে দেওয়ার ঘটনায় স্বভাবতই কিছুটা ভেঙে পড়তে দেখা যায় স্বামীকে। তবে স্ত্রীকে হারিয়ে পরাজিত স্বরের বদলে অন্যের খুশিতে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যুবক বলেন, “যাকে ঘিরে প্রেম থেকে দাম্পত্য সে নিজেই যখন থাকতে চাইছে তখন সমস্যা বাড়িয়ে কী হবে। আমি চিরকাল ওকে ভাল রাখতে চেয়েছি। যদি সেটা এভাবে হয়, তাহলে সেটাই না হয়।” এই ত্রিকোন প্রেমের তিন চরিত্রের পগুডি রেল স্টেশন সংলগ্ন বারোঘডিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলের ভেমটিয়া এলাকায় বাসিন্দা। গল্পের শুরুটা হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। শিলিগুডি সংলগ্ন বাতাসি এলাকার যুবতীর সঙ্গে বছর দুয়েকের প্রেমলাপের পরে পালিয়ে বিয়ে করে সংসার পাতেন পেশায় টোটোর মেকানিক ভেমটিয়ার যুবক। নিত্যদিন টোটোর সবরকম ছোটো বড়ো সমস্যা সমাধানকারী যুবক গোটা পাঁচ বছরেও টের পায়নি স্ত্রীর মনের সমস্যার কথা। সেই ফাঁকেই বছর খানেক যাবত মনে পাকাপাকি ভাবে বাসা বেঁধেছিল এলাকারই আরেক যুবক। ছোটখাটো ব্যবসা করার ফাঁকে তরুণী বধুর সঙ্গে ঘনিষ্টতা বাড়ে সেই যুবকের। মেলামেশা গভীরতর হলেও এতদিন টের পাননি কাক পক্ষীও। গোল বাঁধে ঘন কুয়াশার সকলের অগোচরে গভীর রাতে লুকিয়ে আসা প্রেমিককে বধুর পরিবারের লোকেরা দেখে ফেলায়। জিজ্ঞাসাবাদের চাপে বেড়িয়ে আসে মন দেওয়া নেওয়ার পুরো কাহিনী। খবর পেয়ে ছুটে আসেন বধুর বাপের বাড়ির লোকেরাও। এরপরেও ভালবাসায় বিশ্বাস রেখে যুবক স্বামী স্পষ্ট জানিয়ে দেন টানা সাত বছরের সম্পর্কেই থাকতে চান তিনি । তবে বেঁকে বসেন বধূ। দাম্পত্য এবং প্রেমের টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর ইছেতেই শিলমোহর দেন যুবক। দুই পরিবার এবং এলাকার মাতব্বরদের উপস্থিতিতে স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করে স্ত্রীকে প্রেমিক যুবকের হাতে তুলে দেয় প্রাক্তন স্বামী। কাছাকাছি একটি মন্দিরে বিয়েও দেওয়া হয় যুগলের।
তবে মেয়ের এই সিদ্ধান্তে নারাজ মেয়ের পরিবার। সংসারে ছেড়ে নতুন প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধা নিয়ে বধু বলেন, “হঠাৎ করে কিছু হয়নি। এক বছর ধরে আমরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসি। মন যখন আমার, তখন সিদ্ধান্তও আমারই হওয়া উচিৎ। সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে চাইলেও ওরা সেটা মানেনি।” প্রেমিকার সিদ্ধান্তকে সম্মান দিয়ে নতুন সংসার পাতা প্রেমিকের বক্তব্য, “বছর খানেকের সম্পর্ক হলেও মাস আটেক যাবত মেলামেশা গভীরতর হয়েছে। ওকে এ নিয়ে কয়েকবার বুঝিয়েছি, তবে শেষ পর্যন্ত ও যেটা চাইছে সেটা মেনে আমিও ওর সঙ্গেই সংসার করতে চাই। এই কারণে সকলে লিখিত চুক্তির কথা বলায় আমিও রাজি হই। আমরা দুজনই দুজনকে ভালো রাখব।”