মহানগর ডেস্কঃ কথায় আছে নিয়তি কখনো বলে আসেনা। কে জানতো গরুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণের বলি চড়াবেন। একটি গরুকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী-তৃনমূল নেতা গুরুদাস । সেখানেই বিপত্তি। গরু বাঁচাতে গিয়ে মৌমাছি খপ্পরে পড়েন। মৌমাছি ঘিরে ধরে আক্রমণ করে গুরুদাসকে । মৌমাছির আক্রমণের জেরে কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় গুরুদাসের। তার পর তাঁকে তেহট্টের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার করিমপুর থানা এলাকার জয়নাবাদ গ্রামে। বাড়ির গোয়াল থেকে একটা গরু বেরিয়ে গেছিল বাড়ির পিছনের জঙ্গলে। সেই জঙ্গলের একটি গাছে গরু পিঠ চুলকেছিল। ওই গাছে যে মৌমাছির চাক রয়েছে তা কারোর জানা ছিলোনা। গরু পিঠ চুলকোতে চুলকোতে গাছে গরুর গা ধাক্কা লাগছিল তখন গাছ টাও নড়তে শুরু করে। দিয়ে গরুর দিকে ধেয়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি। গরুকে আক্রমণ করতে থাকে। তা দেখে গুরুদাস ছুটে যান গরুকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু গরুকে বাঁচাতে গিয়ে মৌমাছি তাঁর উপরও হামলা করতে শুরু করে দেয়। শয়েশয়ে মৌমাছি ছেঁকে ধরে আক্রমণ চালাতে থাকে । যন্ত্রণায় ছটপট করে চেঁচাতে থাকেন। চিৎকার শুনে এলাকাবাসী বাড়ির লোকজন ছুটে আসে। গামছা দিয়ে একটা একটা করে মৌমাছির হুল বার করেন পরিবারের লোকজন । তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসক জানান, ঘটনার কিছুক্ষনের মধ্যেই গরুর মালিক তথা অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী গুরুদাস টিকাদারের মৃত্যু হয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ‘গরু বাঁচাতে পিছন পিছন ছুটেছিলেন গুরুদাস। জঙ্গলের একটি গাছে মৌমাছির বড় চাক ছিল, গরুটি সেই গাছে ধাক্কা মারলে মৌমাছির দল প্রথমে গরুটিকে ছেঁকে ধরে, মৌমাছির আক্রমণ থেকে গরু বাঁচাতে ছুটে যান গুরুদাস। ওই সময় তাঁর মুখে এবং মাথায় ১০০-২০০ মৌমাছি হুল ফুটিয়ে দেয়। তারস্বরে চিৎকার করতে থাকেন গুরুদাস। ওই চিৎকার শুনে ছুটে আসেন তাঁরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, “মৌমাছিগুলি আকারে বেশ বড় ছিল। শরীরে কালো রঙের উপস্থিতি বেশি, সামান্য হলদেটে ছোপও রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, সচরাচর এই ধরনের মৌমাছি এলাকায় দেখা যায় না।” কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ শান্তনু ঝা এই বিষয়ে বলেছেন, ‘‘বিবরণ শুনে মনে হচ্ছে ওখানে ‘এপিস ডরসাটা’ মৌমাছির চাক ছিল। শত্রুর আক্রমণ বুঝতে পারলে ওরা দলবেঁধে দ্রুত আক্রমণ করে। একটি মৌমাছির হুলের বিষ সামান্য হলেও অনেক মৌমাছি একসঙ্গে কামড়েছে বলে সম্মিলিত বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে ওই ব্যক্তির।’’ পরিবারের লোকজন এই ঘটনায় স্তম্ভিত। গুরুদাসের ছেলে সৌরভ বলেন, ‘‘বাবা বছর দশেক আগে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিলেও নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। সামান্য মৌমাছির কামড়ে বাবার মৃত্যু হল, এটা ভাবতেই পারছি না।’’