মহানগর ডেস্ক: কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে রবিবার ন্যাজাটের সভা থেকে শেখ শাহজাহান ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “শুধু একটা সন্দেশখালিই নয়, পশ্চিমবঙ্গে এরকম ২৫ থেকে ৩০টা সন্দেশখালি আছে। শুধু শাহজাহানকে গ্রেফতার করলেই চলবে না।” পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি নাম উল্লেখ করে শুভেন্দুর দাবি, এঁদেরকেও গ্রেফতার করতে হবে। শুভেন্দুর আরও দাবি করেন, , “নরেন্দ্র মোদী গরিব মানুষকে যে রেশন সামগ্রী দিয়েছিলেন, তা লুট করেছে শাহজাহান বাহিনী।” পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীকে “শাহজাহানের মাসি” বলেও কটাক্ষ করেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা।
এদিনের সভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোপ আক্রমণ করে বলেন, “কেন সন্দেশখালিতে আসেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?” এরপর তিনি বলেন, “সন্দেশখালির সঙ্গে গোটা ভারতবর্ষ আছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি বারাসত, কৃষ্ণনগর, আরামবাগ সহ সর্বত্র সন্দেশখালির মা,বোনেদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ জরেছেন। আপনাদের সংগ্রামকে কুর্নিশ জানিয়েছেন, তাই আজকের এই সমাবেশ আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে করেছি।”
এর পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে শুভেন্দু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এই রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, তিনি নাকি মহিলা দরদী, তিনি নাকি ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা অনেক কিছু দিয়েছেন। আজ ২ মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেল তিনি সন্দেশখালিতে আসার মতো প্রয়োজন অনুভব করেননি। অন্যদিকে বিকাশ সিং সহ ৭৬ জনকে জেল খাটিয়েছেন। জাগ্রত মাতৃ মণ্ডলীর উপর পুলিশকে দিয়ে তিনি অত্যাচার করিয়েছেন। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। আমরা ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩, বসিরহাটের রেলের ময়দানে দাঁড়িয়ে বলে গেছিলাম, শাহজাহান, তোমার দিন শেষ হয়ে আসছে। পয়লা জানুয়ারি শাহজাহান আমাদের চ্যালেঞ্জ করেছিল, মোদীজি আপনাদের রেশনের জন্য যে চাল,গম পাঠান, সেই চাল,গম বাংলাদেশের সাতক্ষীরাতে পাঠানোর কাজে শেখ শাহজাহান, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বাকিবুর রহমানরা লিপ্ত ছিল। ৫ জানুয়ারি ইডি শেখ শাহজাহানের বাড়িতে এসে আক্রান্ত হয়েছে। তারপর আপনারা দেখেছেন কি ভাবে আমরা আপনাদের পাশে থেকে লড়াই করেছি। আমরা সন্দেশখালির লড়াইকে দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে গেছি। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি আর সুকান্ত মজুমদার সন্দেশখালির অবর্ণনীয় অত্যাচারের কথা তুলে ধরেছি। ৫ বার আমাদের সন্দেশখালিতে ঢুকতে আটকেছে। তারপর আমরা হাই কোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে সন্দেশখালি, জেলিয়াখালিতে গেছি। ১০ বছরে যত অত্যাচার করেছে, সব হিসাব হবে। সন্দেশখালি থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে বলব, একা শেখ শাহজাহানকে ধরলে হবে না। জিয়ারুদ্দিন মোল্লা সহ, আলমগীর সহ, এখানকার শাহনুর সহ গুন্ডাকে গর্তে ঢোকাতে হবে। শুধু এমন একটা সন্দেশখালি নয়। পশ্চিমবঙ্গে এরকম ২৫ থেকে ৩০ টা সন্দেশখালি আছে। তাই এই লড়াই চলছে, চলবে। ভারতীয় জনতা পার্টি তার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়বে। সন্দেশখালির অত্যাচারী শেখ শাহজাহান আর মমতার আলালের দুলালদের ছাড়বে না।” এরপর শুভেন্দু সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করে বলেন, “ইভিএমে এই বদলা হবে তো? সন্দেশখালিতে পদ্ম ফুটবে তো?” উত্তর আসে হ্যাঁ।
শুভেন্দু অধিকারী ১০ মার্চ সন্দেশখালিতে সভা করার ডাক দিতেই পুলিশ অনুমতি আটকে দেয়। এর পরেই শুভেন্দু সন্দেশখালিতে সভা করতে চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। শেষে বিজেপিকে সভা করার অনুমতি দেয় আদালত। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর বেঞ্চ জানায়, আগামী ১০ মার্চ অর্থাৎ রবিবার সন্দেশখালি গিয়ে সভা করতে পারবেন শুভেন্দু। আদালত একই সঙ্গে জানায়, কোনও ভাবেই সভা থেকে উস্কানিমূলক কোনও মন্তব্য করা যাবে না। তবে যে জায়গায় শুভেন্দু সভা করতে চেয়েছিলেন, সেখানে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ন্যাজাটের দক্ষিণ আক্রাতলায় শুভেন্দু সভা করতে পারেন বলে বিচারপতি সেনগুপ্তের বেঞ্চ জানায়।
রবিবার ন্যাজাটের দক্ষিণ আক্রাতলাতেই শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদার সভা করেন। সভায় বিজেপিনেত্রী ভারতী ঘোষ, প্রয়াঙ্কা টিবরেওয়াল সহ অন্যান্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বও উপস্থিত ছিলেন।