মহানগর ডেস্ক : বিজেপি এত দিন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এ বার নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করছে। আর তা করেও ২০২১ সালের চাইতেও লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় খারাপ ফল করবে বিজেপি। সোমবার রাতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দবোসের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে বেরিয়ে এমনটাই বললেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল দলের এই বিজেপির পাশাপাশি সুর চড়ালেন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির বশ্যতা স্বীকার করেছে নির্বাচন কমিশন। মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিয়েছে।
সোমবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের ১০ জনের প্রতিনিধি দল। কমিশনের কাছে ইডি,সিবিআই, এনআইএ,আইটি-র শীর্ষ কর্তাদের সরানোর ৬ পাতা দাবি সম্বলিত অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল নিজেদের দাবিতে কমিশনের অফিসের বাইরে এসে ধর্নায় বসে। সেই ধর্না জোর করে তুলে পুলিশ তৃণমূল নেতাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তৃণমূলের অভিযোগ ‘হেনস্থা’ করা হয়েছে তাঁদের। সেই নিয়ে সোমবার রাতে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন অভিষেক ও তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে দিল্লির ঘটনার নেপথ্যে কমিশনকেই অভিযুক্তের কাঠগড়ায় তুলেছেন অভিষেক। অভিষেক বলেন, কমিশন মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিয়েছে। কেন এ কথা বলছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যুক্তিও দেন। এই প্রসঙ্গে তিনি এনআইএর এসপি ধনরাম সিংহের বাড়িতে বিজেপি নেতা জিতেন তিওয়ারির যাওয়ার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। অভিষেকের দাবি, তার পরেই ধড়পাকড় শুরু হয়েছে রাজ্যে। তাঁর কথায়, ‘‘২৬ মার্চ, এনআইএর এসপি ধনরামের সঙ্গে বৈঠক হয় জিতেন তিওয়ারির। ২৭ তারিখ নোটিস এল গ্রেফতারি নিয়ে। নোটিস কেন আগে এল না? কেন জিতেনের সঙ্গে বৈঠকের পর নোটিস এল।’’ এর পরেই অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেন সেই এনআইএর প্রধান বদল হবে না।’’ তিনি আবারও মনে করিয়ে দেন যে, তাঁদের অভিযোগ আসলে কমিশনেরই বিরুদ্ধে। বিজেপির বিরুদ্ধে নয়। ধনরামের বাড়ির লিজ এগ্রিমেন্টও কমিশনকে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন অভিষেক।
এর পরেই অভিষেক দাবি করেন বিজেপি এবারের লোকসভা নির্বাচনে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের থেকেও খারাপ ফল করবে। তাঁর কথায়, ‘‘ভোর ৪টেয় গিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করে এনআইএ। স্থানীয় পুলিশকে খবর দেওয়া হয় ৫টা ৪৫ মিনিটে। আর সংবাদ মাধ্যমকে গ্রেফতারির কথা আগেভাগে জানিয়ে রেখেছে ভোর ৪টের সময়। সাধারণ মানুষকে বোকা ভাবছেন? ২০২১-এর থেকেও খারাপ পরিণতি হবে বিজেপির।’’ তৃণমূল সেনাপতির আরও কটাক্ষ, এত দিন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করেছে বিজেপি। এ বার কমিশনকে ব্যবহার করেছে। ৪৮ ঘণ্টায় দু’বার রাজ্যের ডিজি বদল করা হয়েছে। এর পরেই অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘এনআইএর এসপি কেন বদল হবে না?’’ এদিন অভিষেক জানান, দিল্লিতে যে ঘটনা হয়েছে, তাতে তিনি বিজেপিকে দোষ দিচ্ছেন না। কারণ, দেশে এখন নির্বাচনী আচরণবিধি জারি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা এখন কমিশনের অধীনে। তাদের নির্দেশেই এ সব করেছে দিল্লি পুলিশ। অভিষেক জানিয়েছেন, দু’ সপ্তাহ আগে তৃণমূল সাংসদ দোলা সেনের পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁকে ‘অমানবিক ভাবে’ ভ্যানে তুলেছে পুলিশ। সাংসদ ডেরেককেও টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে ভ্যানে। তাঁর কথায়, ‘‘গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে কমিশন।’’
এর পরেই অভিষেক দাবি করেছেন, রাজ্যপাল আশ্বস্ত করেছেন। কমিশনের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। সেই নিয়ে তৃণমূলকে ইমেলে জানাবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান না হলে আবার মঙ্গলবার রাজভবনে আসবেন তাঁরা। অভিষেকের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে এখন বিজেপি মাঠ ফাঁকা করতে চাইছে। ভোটটা কে দেবে? সিবিআই, ইডি এনআইএ নাকি সাধারণ মানুষ। তাতে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের থেকেও খারাপ হবে।’’ ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি দাবি করেছিল, রাজ্যে ২০০ আসন পেয়ে সরকার গড়বে তারাই। যদিও শেষ পর্যন্ত ৭৭ টি আসন পেয়েছিল। সেই প্রসঙ্গই তুলেছেন অভিষেক।পাশাপাশি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এখনও দু’টি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। ডায়মন্ডহারবার, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র। ঘটনাচক্রে ডায়মন্ডহারবারে তৃণমূলের প্রার্থী তিনি নিজে। অভিষেক কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘মেঘনাদের মতো মেঘের আড়াল থেকে না লড়ে ইডি, এনআইএ ডিরেক্টরকে বলুন ওই দুই আসনে লড়তে। দেখি বাংলার মানুষ শেষ কথা বলে নাকি ইডি, সিবিআই!’’
সোমবার তৃণমবলের প্রতিনিধি দল কমিশনের কাছে আরও একটি আর্জি জানিয়েছে। ঝড়বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য কমিশনের অনুমতি চেয়েছে, সেই প্রসঙ্গও অভিষেক তুলেছেন। কেন অনুমতি দিচ্ছে না, তা-ও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কমিশন জানে, অনুমোদন দিলে বাড়ি তৈরির কাজ হবে। তাতে বাংলার মানুষ মমতাকে বুকে আগলে রাখবে। সেজন্য অনুমোদন দিচ্ছে না। ১৫০০ লোকের বাড়ি হয়নি, রাজ্যপাল কি কেন্দ্রকে লিখেছেন? তিনি তো গেছেন ওখানে। এটাই মোদীজির নতুন ভারত। কমিশন এনআইএর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। বিজেপি অভিযোগ করেছে বলে ডিজি বদল হবে।’’
অভিষেক বিজেপির বিরুদ্ধে রাজভবন থেকে বেরিয়ে একাধিক অভিযোগ করলেও মুখে বলেন, এখন সব কিছু নির্বাচন কমিশনের অধীন, তাই সব হচ্ছে কমিশনের কথায়। আবার ওই একই সঙ্গে অভিষেক অভিযোগ করেন, এনআইএ সহ কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ভোটের ময়দান ফাঁকা করতে চাইছে। তাই অভিষেকের বক্তব্যে স্পষ্ট হল না তিনি বিজেপি না কমিশন কাকে দূষছেন এনআইএ- ভূপতিনগরে তল্লাশির ঘটনায় এবং দিল্লিতে তৃণমূল প্রতিনিধিদের কমিশনের সামনে অবস্থান থেকে গ্রেফতার করায়।