মহানগর ডেস্ক : রাজনীতিতে কতোই রঙ্গ সামনে আসে তা না দেখলে বোঝা যেত না। কোথাও প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী এবার পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন, কোথাও আবার রুপোলী পর্দার দুই নায়ক বা দুই নায়িকা এবার দুই পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থী। বিষ্ণুপুর, ঘাটাল, হুগলিতে এবার এই ছবি দেখা যাবে।
হুগলির প্রচারে নেমে তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি রাস্তা দিয়ে আসার সময় রাস্তার দুপাশে প্রচুর কারখানা হয়েছে, ধোঁয়ায় ভরে আছে চারপাশ। পাশাপাশি হুগলির প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের গত ৫ বছরের কাজের খতিয়ান চাইছেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচারের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থীর সাংসদ থাকাকালীন তাঁর কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন হুগলি লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজনীতির ময়দানে প্রথম পা রেখেই হুগলিতে প্রচুর কারখানা এবং ধোঁয়া দেখে তিনি মুগ্ধ। প্রচারে নেমে রচনা কোথাও মন্দিরে গিয়ে প্রণাম সারছেন আবার কোথাও বাতাসা লুট দিচ্ছেন হরির প্রতি।
এদিকে হুগলির গতবারের সাংসদও এবং এবারের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এখানকার ভোটারদের প্রধান অভিযোগ, তারা সাংসদকে গত পাঁচ বছরে কার্যত দেখতেই পাননি, এখন প্রচারে এসে মাটির উনুনে রান্নাও করছেন। লকেটের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ স্থানীয়দের যেমন আছে তেমন বিজেপির নিচুতলার কর্মীরাও একই ক্ষোভে লকেটের বিরুদ্ধে ফুঁসছে। হুগলির প্রাক্তন সাংসদ ও বর্তমান লোকসভার প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করতে বিজেপি ব্লুপ্রিন্ট তৈরী করছে। তৃণমূল প্রার্থীর তারকা ভাবমূর্তিকে হাতিয়ার করে পাল্টা চাইছে বিজেপি। বিজেপি বোঝাতে চাইছে রাজনীতি আর সংস্কৃতির রঙ্গমঞ্চ এক নয়, রচনা কি করবেন সংসদে গিয়ে? কি করবেন? কাদের কথা বলবেন?
প্রচারে নেমে তাই বিজেপি বলছে, যদি রচনা হুগলির সাংসদ হয়ে যান তা হলে ভোটের পর তাঁকে আর হুগলিতে পাওয়া যাবে না। তিনি তাঁর জনপ্রিয় টিভি শো নিয়েই আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। তবে এই কৌশলের বিরুদ্ধে এখানকার স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা। তারা বলছে, লকেট চট্টোপাধ্যায়কেও জেতার পর হুগলিতে খুব একটা দেখা যায়নি। কারণ, বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা লকেটের গত পাঁচ বছরের কাজ নিয়ে যথেষ্ট বিরক্ত। ফলে বিরোধী প্রার্থী জিতলে কেন্দ্রে আসবেন না, এই বক্তব্য নিয়ে অকারণ বিরুদ্ধ প্রচারে তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন। হুগলির বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মনে করে, হুগলির সাংসদের আচরণ এখানকার মানুষ খারাপ চোখে দেখেছেন। সেই দেখা ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য বিরোধী প্রার্থীর তারকা ভাবমূর্তিকে আক্রমণ করলে, তারকা প্রার্থী জিতলে কেন্দ্রে আসবেন না বলে প্রচার করলে উল্টে গত পাঁচ বছরে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে দরকারে লকেটের দেখা না পাওয়ার বিষয়টিই মানুষের মনে পড়ে যাবে। আর লকেটের হুগলিতে জয়ের পর এই অনুপস্থিতির যথেষ্ট প্রমাণ মানুষের কাছে আছে। তাই রচনা রুপোলী পর্দার মানুষ, জিতলে টিকিও দেখা যাবে না বলে বিজেপির প্রচার মানুষ ভালো ভাবে নেবে তো? এই সংশয় কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।