মহানগর ডেস্ক : তাঁর বাড়িতে সিবিআই তল্লাশির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানালেন মহুয়া মৈত্র। মহুয়া মৈত্রর দাবি, সিবিআই তাঁর নির্বাচনী প্রচারে বাধা সৃষ্টি করছে। তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে জনসমক্ষে। রীতিমতো চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সিবিআইয়ের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে আবেদন জানিয়েছেন মহুয়া। নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে তিনটি আর্জি পেশ করেছেন ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী।
প্রসঙ্গত, অর্থের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগে তৃণমূলের কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর সাংসদ পদ খারিজ করেছে লোকসভার এথিক্স কমিটি। তবে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগরের বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়াই আবার তৃণমূলের লোকসভার প্রার্থী হয়েছেন সেই কৃষ্ণনগর থেকেই। ভোটের প্রচারের কাজও তিনি শুরু করে দিয়েছেন। এর মধ্যেই গত ১৯ মার্চ সংসদে ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন কাণ্ডে মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় লোকপাল। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে মহুয়ার বিরুদ্ধে এফআইআরও দায়ের করে সিবিআই। এর পরে শনিবার সকালে মহুয়ার কলকাতার আলিপুরের বাড়ি এবং অফিস মিলিয়ে মোট চারটি জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। নির্বাচন কমিশনে মহুয়া এই তল্লাশির পরের দিনই সিবিআই-র বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
নির্বাচন কমিশনকে লেখা চিঠিতে মহুয়ার প্রশ্ন, নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর যখন গোটা দেশে নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি বলবৎ করা হয়েছে, তখন রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে গিয়ে এই ধরনের তল্লাশিও কি আদর্শ আচরণের বিরোধী নয়?
মহুয়ার যুক্তি, যেখানে ভোট ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমতা রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে সংবিধানে, যেখানে সেই দায়িত্ব রয়েছে খোদ নির্বাচন কমিশনেরই হাতে, সেখানে কী ভাবে কমিশন এই ধরনের তল্লাশি চালানোর অধিকার দিচ্ছে সিবিআইকে! এ কথা কী করে ভুলে যাচ্ছে কমিশন যে, সিবিআই কেন্দ্রের অধীনস্থ তদন্তকারী সংস্থা। ফলে তার নিয়ন্ত্রণও কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা শাসকদলের হাতেই থাকা স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে তারা নির্বাচনী ফয়দা তুলতে এই ধরনের সংস্থার ব্যবহার করতেই পারে।
উল্লেখ্য, এই ধরনের কথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারির পর বলেছিলেন বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র সদস্যরাও। তাঁরা এ-ও বলেছিলেন, সিবিআই এবং ইডির মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা এক জনও বিজেপি নেতা বা মন্ত্রী বা সাংসদ-বিধায়কদের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে যায়নি। যা প্রমাণ করে এই সংস্থাগুলিকে স্পষ্টতই ব্যবহার করা হচ্ছে।
মহুয়াও একই সুরে এ ব্যাপারে কমিশনকে কয়েকটি দায়িত্ব পালনের আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ধরনের সিবিআই তল্লাশি শুধু তাঁর প্রচারে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে তা-ই নয়, যে হেতু তিনি লোকসভা ভোটের প্রার্থী, তাই তাঁর প্রচারের উপর নেতিবাচক প্রভাবও ফেলছে। কমিশনের কাছে মহুয়ার দাবি-
এক, দেশে আদর্শ আচরণবিধি চালু থাকাকালীন সিবিআই তাদের তদন্তের কাজ কী ভাবে এগোবে, সে ব্যাপারে কমিশন একটি গাইডলাইন বা নির্দেশিকা তৈরি করে দেবে।
দুই, নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু থাকাকালীন যেন কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নেতা বা প্রার্থীর বিরুদ্ধ কঠিন পদক্ষেপ না করতে পারে সিবিআই, তা নিশ্চিত করবে কমিশন।
তিন, এ বিষয়ে প্রয়োজন হলে আরও যদি কোনও নির্দেশিকা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে, তবে তা-ও জারি করবে কমিশন।
এদিকে সিপিএম-এর রাজ্যসভার সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, “নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হওয়ার অর্থ এই নয় যে কোনও কারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করা যাবে না।” তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “মহুয়া মৈত্রকে যদি সিবিআই গ্রেফতার করে তাহলে তিনি জেলে বসেই ভোটে লড়বেন এবং জিতবেন।”