মহানগর ডেস্ক: ডাইনিপ্রথা নিয়ে কুংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রচারের মধ্যেই ডাইনি সন্দেহে (Witchcraft Hunting) ফের এক তপশিলি সম্প্রদায়ের মহিলাকে জীবন্ত পুড়িয়ে (Burnt Alive) মারা হল বিহারে (Bihar)। নারকীয় ঘটনাটি ঘটেছে মাইগ্রা থানার অধীনে পাহাড় ঘেরা প্রত্যন্ত পাঁচমা গ্রামে। গ্রামটি ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল ঘেঁষা সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। জানা গিয়েছে ওই গ্রামের বাসিন্দা অর্জুন দাসের স্ত্রী পঁয়তাল্লিশ বছরের রীতা দেবীকে ডাইনি সন্দেহে স্থানীয়রা বেধড়ক পেটায়। ওই ঘটনার পরেই অর্জুন দাস তড়িঘড়ি পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসে পুলিশ। সেখানে এসে তারা ওই মহিলার আগুনে পোড়া দেহ খুঁজে পায়। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য গয়ায় পাঠানো হয়। এই ঘটনায় নজন মহিলাকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৪৩৬ ও ডাইনি সন্দেহে হত্যা ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, যারা তাকে মারতে চেয়েছিল, তাদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ফরেনসিকের একটি দল ওই গ্রামে গিয়ে যেখানে রীতা দেবীকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, সেই জায়গাটি পরীক্ষা করে দেখে নমুনা সংগ্রহ করে।
গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে গ্রামের বাসিন্দা পরমেশ্বর ভূঁইয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গত মাসে মারা যায়। তার পরিবারের সন্দেহ তাকে ডাইনি বিদ্যা ব্যবহার করে তাকে খুন করেছে। মৃত পরমেশ্বর ভূঁইয়া সম্প্রদায় ভুক্ত এবং রীতা দেবী দাস সম্প্রদায়ভুক্ত। পরমেশ্বরের মৃত্যুর পর থেকে দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। তাদের যারা সমর্থন করেছিল,তাদেরও মারধর করা হয়। বিকেলে এই বিবাদ নিয়ে পঞ্চায়েত ডাকা হয়। মৃত পরমেশ্বরের পরিবার ঝাড়খণ্ড থেকে একজন ওঝা ডেকে আনে। সে তুকতাকের ভয় দেখিয়ে রীতা দেবীকে খুনের কথা স্বীকার করতে বাধ্য করে। রীতিমতো উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় ওই ওঝা সেখান থেকে চলে যায়। ওই মহিলাও পঞ্চায়েতের সভা থেকে পালিয়ে যায়। তার পেছন পেছন তার পরিবারের লোকজনও পালায়। এরপরই ভূঁইয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রীতা দেবীর বাড়িতে হামলা চালায়। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কাছাকাছি জঙ্গলে পালিয়ে যায়। মহিলারা ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এরপর ঘরের দরজা ভেঙে ঢোকে ভূঁইয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। রীতা দেবী যতক্ষণ না জ্ঞান হারান, ততক্ষণ তাকে মারতে থাকে তারা। সংজ্ঞা হারাবার পর তার দেহে গ্যাসোলিন ঢেকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই রীতা দেবীর স্বামী ও ছেলে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে আধপোড়া দেহ উদ্ধার করে।