মহানগর ডেস্ক: এদেশে নাইটক্লাব মানেই ডিজেতে হিন্দি, ইংরেজি ও পঞ্জাবি গানবাজনার চালানোর দস্তুর রয়েছে। যে কোনও ক্লাব কিংবা নাইটক্লাবে যান, সেখানে দেখা যাবে ক্লাবে আসা মানুষজন সঙ্গী বা সঙ্গিনীদের নিয়ে গানের সঙ্গে নাচ করছেন। সঙ্গে পানীয়ে চুমুক দেওয়া তো আছেই। আর এরকম দৃশ্যের সঙ্গে আমরা বরাবরই পরিচিত। কিন্তু পৃথিবীতে এমন দেশের খবর কেউ জানেন কি, যেখানে নাইটক্লাবে সালসা কিংবা সাম্বা গান নয়, বদলে সেখানকার ক্লাবে সংস্কৃত গান বাজানো হচ্ছে (Argentine Night Club)।
দেশটার নাম আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ ফুটবলের দৌলতে যে দেশের নাম সবার মুখে মুখে। মারাদোনা,মেসি ফুটবলের জাদুতে যে দেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করে তুলেছেন। আর সেই দেশের রাজধানী বুয়েনস এয়ার্সের নাইটক্লাবে বাজছে নিখুঁত সংস্কৃত গান। না, সত্যিই বিশ্বাস হয় না। আমরা সবাই জানি সংস্কৃত হল প্রাচীন ভারতে হিন্দুদের পবিত্র ভাষা। হিন্দু ধর্মে এই ভাষা দর্শন শাস্ত্রের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্মে এই ভাষার চল রয়েছে। সারা পৃথিবীতে বহু মানুষ সংস্কৃত শেখার জন্য ক্লাস করে থাকেন।
আর সেই ভারতের সেই প্রাচীন ভাষার গান বাজানো হয় আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এয়ার্সের নাইট ক্লাবে। সেখানে আসা মানুষেরা তা রীতিমতো উপভোগ করছেন। রাজধানীর অন্যতম বিখ্যাত নাইট ক্লাব গ্রোভে বাজানো হয় ভক্তিগীতি গণেশ শরণম, গোবিন্দ-গোবিন্দ, জয় জয় রাধে রাম হরিবোল এবং জয় কৃষ্ণ হরে সঙ্গীত। গান বাজিয়ে তা উপভোগও করেন সবাই। আর্জেন্টিনার এই নাইটক্লাব সবদিক থেকেই ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে চলেছে। চমকে যাওয়ার ঘটনা হল ক্লাবে একসঙ্গে আটশো মানুষ সংস্কৃত গান গাইতে গাইতে তালে তালে নাচেন।
বাস্তবে ২০১২ সালে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিশ্বনাথন আর্জেন্টিয়ায় যাওয়ার পর এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এ নিয়ে লেখালেখিও করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন এই নাইট ক্লাবে মদ তো দূরের কথা, কেউ সিগারেটেও টান দেন না। আর মাদক সেবনের কথা কেউ মুখেও আনেন না। এমনকী মাছ ও মাংসও চলে না। বদলে ফলের রস,নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়।
এই নাইট ক্লাবের গায়ক রড্রিগো জানান, সংস্কৃত মন্ত্র,যোগা, ধ্যানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই ক্লাবে সব কিছু করা হয়। যাঁরা এখানে গান করেন বা অংশ নেন তাঁরা প্রত্যেকেই সংস্কৃত মন্ত্রকে শ্রদ্ধা জানাতে এক তিল কার্পণ্য করেন না। উচ্চগ্রামে গান বা শরীর চাঙ্গা করার নাচ করলেও ভিড়ে ঠাসা নাইট ক্লাবে আসা মানুষরা ভারতের প্রাচীন ভাষা,মন্ত্রকে শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন।