মহানগর ডেস্ক : শুক্রবার সকাল থেকে সন্দেশখালিতে ফের উত্তেজনা, জ্বলছে আগুন। সন্দেশখালি থেকে জেলিয়াখালি তৃণমূল নেতা শিবু হাজরার পোলট্রি ফার্ম, বাড়িতে আগুন। শিবু হাজরার পোলট্রি ফার্মে আগুন লাগিয়ে দেয় স্থানীয় জনতা। শুক্রবার সকাল থেকেই গণরোষে অগ্নিগর্ভ জেলিয়াখালিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় জনতা। ঝাঁটা, লাঠি, বাঁশ, কাটারি হাতে বিক্ষোভে নামেন মহিলাদের।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ পয়সা না দিয়ে কাজ করানো হতো শিবু হাজরার ফার্মে। পয়সা চাইলে ভয় দেখানো হতো, মারধরও করা হতো, তৃণমূল পার্টি অফিসে ডেকে মেরে কোমর ভেঙে দেওয়া হত বলে অভিযোগ। এদিন ক্ষুব্ধ জনতা আগুন লাগিয়ে দেন পোলট্রি ফার্মে। জেলিয়াখালির শিবু হাজরার তিনতলা বাগান বাড়িতে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শিবু হাজরা জোর করে তাঁদের জমি দখল করেছে, তাঁদের জমি থেকে বেদখল করেছে। সেই জমিতেই শিবু হাজরা তার সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। রোষানলে জ্বলছে স্থানীয় বাসিন্দা শিবু হাজরার বাড়ি।
সন্দেশখালির ঘটনায় শতাধিক অভিযুক্তের নামে এফআইআর দায়ের করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা বা শিবু হাজরা। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই এফআইআরের তালিকায় ১ নম্বরে নাম রয়েছে সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএম নেতা নিরাপদ সর্দারের। ইঙ্গিতপূর্ণভাবে, আগে সন্দেশখালির ঘটনার পিছনে সিপিএম ও বিজেপির বিরুদ্ধে যৌথ চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। আর এবার, তৃণমূল নেতার এফআইআরের তালিকায় ১ নম্বরে নাম প্রাক্তন সিপিএম বিধায়কের। অথচ যারা বুধবার থেকে সন্দেশখালি জুড়ে শেখ শাহজাহান, উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, তারা নিজেরাই বলছেন, “আমরা তৃণমূল করি।” তাহলে শিবু হাজরার এই অভিযোগের ভিত্তি কি? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।
সন্দেশখালির গন্ডগোল কি এবার ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্য এলাকাতেও! এই নিয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। তাঁর দাবি, সন্দেশখালির মণিপুর থেকে খুলনা যাওয়ার গোপালের ফেরিঘাটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। যদিও পুলিশ সূত্রে দাবি, কম চললেও চালু রয়েছে ফেরি সার্ভিস। বিধায়কের অভিযোগ নিয়ে তারপর থেকে প্রশ্ন উঠছে। আসলে গোপালের ঘাটের পরিচালনা সংক্রান্ত গন্ডগোলের জেরে কিছুটা প্রভাব পড়েছে ফেরি চলাচলে। এই ঘটনাকেই দুস্কৃতীদের উপর সুযোগ বুঝে চাপিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল বিধায়ক, এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।
সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের হাত গ্রেফতার মোট ৫ জন। সন্দেশখালিতে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের আবহেই, বুধবার রাতে, সন্দেশখালির দাপুটে তৃণমূল নেতা শিবু হাজরার পলট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে, ৩ জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২ জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বসিরহাট মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে, তাঁদের ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এদিকে ২ তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা উত্তম সর্দারের নামে, সন্দেশখালি থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় এক মহিলা।
এই ঘটনায় সন্দেশখালি থানার ওসির অপসারণ দাবি করেছেন সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। বিরোধীদের প্রশ্ন কোথায় শেখ শাহজাহান, কোথায় উত্তম সর্দার, কোথায় শিবু হাজরা! এদিকে জেলিয়াখালির পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “বিজেপি এই ঘটনা ঘটিয়েছে।” অন্যদিকে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, “দলেরই একটি অংশ এই ঘটনা ঘটিয়েছে।” এদিকে স্থানীয় বাসীন্দারা বলছেন, “শিবু হাজরা আমাদের সম্পত্তি জোর করে কেরে নিয়েছে। আমাদের জমিতে আমাদের খাটিয়ে পয়সা দেয়নি। জমিতে খাটিয়ে টাকা চাইলে কোদালের বাট দিয়ে মারা হয়েছে। আমরা সবাই তৃণমূল করি। এখানে কোনও অন্য কেউ নেই। আমাদের টাকা, জমি, ইজ্জত সব কেড়ে নিয়েছে শেখ শাজাহান, তার চ্যালা উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরা। ওদের পুলিশ গ্রেফতার না করা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলবে।”