মহানগর ডেস্ক: সুড়ঙ্গের গহ্বর থেকে একেএকে উদ্ধার করা হয়েছে পনেরোদিনের বেশি আটকে পড়া একচল্লিশজন শ্রমিককে। পনেরো দিন ধরে রীতিমতো যমে মানুষে টানাটানি চলেছে উত্তরাখণ্ডের নির্মীয়মাণ সিলকিয়া সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের জীবিত ফেরত আনার জন্য। সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার করতে আমেরিকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল বিশাল এক যন্ত্র। কিন্তু সেটি আচমকাই খারাপ হয়ে বাড়িয়ে দেয় সবার রক্তচাপ। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন তাঁদের কারোকে আর জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না। শেষপর্যন্ত উদ্ধার অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। যন্ত্রের বদলে হাত ভরসা করে ফিরিয়ে আনে সবাইকে। সফল হয় উদ্ধারকারীদের অভিযান।
প্রিয়জনদের ফিরে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পরিবার। কেউ ফেরত পেয়েছেন স্বামীকে, মা বাবা ফিরে পেয়েছেন সন্তানকে। বাকিটা ইতিহাস। সেইসঙ্গে বিভীষিকা থেকে মুক্তি পাওয়ায় প্রাণ জুড়োয় দেশের মানুষদের। মৃত্যুগহ্বর থেকে ফিরে এসেছেন আঠাশ বছরের ভক্তুও। কিন্তু তার আগেই তার পরিবারে ঘটে গিয়েছে অঘটন। পরিবার যখন খবর পায় ভক্তুকেও উদ্ধার করা হচ্ছে। উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা আগে আটকে পড়া ভক্তুর জন্য আতঙ্ক,উদ্বেগে মারা যান তাঁর বাবা সত্তর বছরের বাসেত ওরফে বাসরা মুর্মু।
নভেম্বরের বারো তারিখে তারা সুড়ঙ্গ ধসে পড়ার খবর পায় ভক্তুর পরিবার। গত মঙ্গলবার একচল্লিশজন শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়। সেদিন সকালে মারা যান পূর্ব সিংভূম জেলার বাহদা গ্রামের বাসিন্দা বাসরা মুর্মূ। মৃত্যু-সুড়ঙ্গ থেকে পৃথিবীর আলো দেখার কয়েক ঘণ্টা আগে বাড়ির সামনে খাটিয়ায় বসেছিলেন তিনি। কিন্তু ছেলে সত্যি সত্যি ফিরে আসবে,সেই উত্তেজনা সহ্য করতে না পেরে লুটিয়ে পড়েন খাটিয়া থেকে। স্থানীয় প্রশাসনিক অফিসাররা জানিয়েছেন এখনও ঠিক কীকারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মনে করা হচ্ছে বাসরা মুর্মূ হৃদরোগেই মারা গিয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই কথা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ভক্তুর মা। কেবল চারদিকে শূন্য চোখে তাকিয়েছিলেন।
বাসরার মৃত্যুর সময় সামনে ছিলে জামাই। জানিয়েছেন তাঁর শ্বশুর ছেলে ভালো আছে কিনা, সে ব্যাপারে ভীষণ চিন্তিত ছিলেন। দুশ্চিন্তায় খাটিয়া থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবার জানিয়েছে ভক্তুর বাবা মনে মনে ছেলের ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। আতঙ্কে সময় কাটছিল তাঁর। ডুমরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার জানিয়েছেন বাসরা মুর্মূর মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি। পূর্ব সিংভূমের সিভিল সার্জেন জানিয়েছেন তাঁরা মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। তবে তাঁদের কাছে মেডিকেল রিপোর্ট এখনও এসে পৌঁছয়নি। উদ্ধারের পর ভক্তুসহ ঝাড়খণ্ডের ১৪জনকে হৃষিকেশের এইমসে আনা হয়। সেখানে বুধবার দুপুর দুটোয় তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। তাঁদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখে উত্তরাখণ্ড সরকার। রাজ্যের শ্রমসচিব জানিয়েছিলেন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে তাঁদের আকাশপথে রাঁচি পৌঁছে দেওয়া হবে।