মহানগর ডেস্ক : হাতে বেশি সময় নেই। ক্রমে দিন কমছে প্রচারের। আগামী ১ জুন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন। তার আগে শুক্রবার অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্য তিথিতে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। আলিপুরের জেলা শাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দিয়ে তিনি সোজা চলে যান ভবানীপুরে, ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সেখানে শ্যামা প্রসাদের মূর্তি তে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্ট। হলেন ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে অভিহিত করে থাকেন রাজনীতিবিদরা। এবার পাখির চোখে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র। এই বিস্তীর্ণ লোকসভা কেন্দ্রে একদিকে যেমন রয়েছে বাইপাস সংলগ্ন এলাকা, অন্যদিকে রয়েছে প্রান্তিক এলাকাও। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে মানুষের কাছে গিয়ে ভোট আবেদন করছেন ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। শুনছেন মানুষের অভাব অভিযোগের কথা। মানুষও দু হাত ভরে আশীর্বাদ করছে তাকে। যদিও ত্রিমুখী লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসবে কে সায়নী ঘোষ, সৃজন ভট্টাচার্য নাকি ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় তা জানার জন্য এখনও বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। পুদুচেরির শ্রী অরবিন্দ আশ্রমেই পড়াশোনা ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তার পিতামহ ছিলেন কিংবদন্তী বিপ্লবী উপেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বেড়ে ওঠা যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বাঁশদ্রোণীতেই। এ ছাড়াও তার আরো একটি পরিচয় রয়েছে । তিনি ছিলেন শ্রী অরবিন্দের সহকর্মী। উপেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দোষী সাব্যস্ত করে সেলুলার জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিপ্লবী সক্রিয়তার পাশাপাশি, উপেন্দ্র নাথ বাংলা সাহিত্য ও সাংবাদিকতায়বাংলায় একটি জনপ্রিয় নাম ছিলেন। পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি হিন্দু মহাসভায় যোগ দেন এবং ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠেন। সেই সূত্রেই ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আদর্শ ও মতাদর্শের আকর্ষণে বাধা পড়েন ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়।
পুদুচেরিতে শ্রী অরবিন্দ আশ্রমের মা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘শ্রী অরবিন্দ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অফ এডুকেশন’।সেখানেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় ।, দর্শন, ইতিহাস এবং সঙ্গীত অধ্যয়নের পাশাপাশি ইংরেজি, ফরাসি, সংস্কৃত, বাংলায় দক্ষ তিনি।গুজরাটি, তামিল, ওড়িয়া ভাষাও তিনি বুঝতে পারেন ও বলতে পারেন। তিনি আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে স্নাতকোত্তর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি করেছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর থিসিসের বিষয় ছিল শ্রী অরবিন্দ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ভারতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষা আন্দোলন। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সংস্পর্শে আসেন। এটি তাঁর জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে। ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় একদিকে যেমন একজন রাজনীতিবিদ অন্যদিকে একজন চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, গবেষক। খেলাধুলায় পারদর্শী, ডঃ অনির্বাণ ১০০ মিটার স্প্রিন্ট, লং জাম্পে বয়স-গোষ্ঠীর রেকর্ড করেছিলেন। ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির উত্তরাধিকারকে জনপ্রিয় করতে, তাঁর জীবন ও সময়ের উপর নতুন গবেষণা এবং নতুন আবিষ্কারগুলিকে ব্যাপকভাবে প্রচারে ব্যাপক অবদান রেখেছেন অনির্বাণবাবু। তাঁর বিস্তৃত আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং প্রচারে তিনি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ফোরামে ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি বিজেপির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। গিয়েছেন রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, জাপান, মঙ্গোলিয়া, চিন, চিনের তাইওয়ান প্রজাতন্ত্র, স্পেন প্রভৃতি দেশে।
ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্ট ছাড়াও তিনি সেন্ট্রাল অ্যাডভাইজরি বোর্ড অফ এডুকেশন (সিএবিই), শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ভারত সরকারের সদস্য, ইউনেস্কো শিক্ষা মন্ত্রকের সাথে ভারতীয় জাতীয় সহযোগিতা কমিশনের সদস্য, অরোভিল ফাউন্ডেশনের পরিচালন পর্ষদের সদস্য (শিক্ষা মন্ত্রক), শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী সংসদের (কোর্ট) সদস্য।এছাড়াও তিনি নেহেরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও লাইব্রেরি, সোসাইটি ও ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের একজন সদস্য। শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি ছিলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ব্যারিস্টার এবং শিক্ষাবিদ, যিনি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মন্ত্রিসভায় ভারতের প্রথম শিল্প ও সরবরাহ মন্ত্রী (বর্তমানে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী হিসাবে পরিচিত) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সহায়তায় , [ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ] তিনি ১৯৫১ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির পূর্বসূরী ভারতীয় জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার সভাপতিও ছিলেন। ১৯৫৩ সালে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করার চেষ্টা করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় যেহেতু ভারতীয় জনতা পার্টির জনসংঘের উত্তরসুরী, তাই তাকে বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। আর তাঁরই আদর্শে অনুপ্রাণিত ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নকে সামনে রেখে ভোট আবেদন করছেন তিনি । জোর দিচ্ছেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তা, পানীয় জল সহ মৌলিক অধিকারের ওপর।