মহানগর ডেস্ক : বাংলায় বিজেপির পালে হাওয়া তিনিই এনেছেন। তিনি সভাপতি থাকাকালীন ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ১৮ জন সাংসদ দিল্লিতে গিয়েছে। ২০২১-এর বিধানসভায় বিজেপি বাংলায় দ্বিতীয় শক্তিশালী দলে পৌঁছেছে। এর সবটাই হয়েছে বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের আমলে। এটা বাংলা তথা ভারতের সবাই জানেন। তাই মঙ্গলবার দিলীপ ঘোষ বাংলায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাংলায় আমিই লড়েছি, আর কে লড়েছেন? তারপরই আমায় দেখেই তৃণমূলকে হারাতে সবাই বিজেপিতে এসেছে। কেউ সিপওএম থেকে, কেউ বিজেপি থেকে এসেছেন।” দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে সোরগোল শুরু হয়েছে। তৃণমূলের আইটি সেলের প্রধান এবং তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, “দিলীপ ঘোষের সময় বাংলায় বিজেপি বেড়েছে এটা ঠিক। তবে তাঁকে যে ভাবে মেদিনীপুরে তাঁর জেতা আসন থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে সেটা কি শুভেন্দু অধিকারীকে নন্দীগ্রাম থেকে সরিয়ে দিলে তিনি মেনে নিতেন? আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পঁচা পেয়াজ, আলুগুলো রান্নাঘর থেকে ফেলে দিয়েছেন, তেমনই একটা পঁচা পেঁয়াজ হলেন শুভেন্দু অধিকারী, যাঁকে বিজেপি জায়গা দিয়েছে। দিলীপ ঘোষকে দলে এখন কোনঠাসা করা হচ্ছে। দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য আসলে আদি-নব্য লড়াই। ওনার অভিমান হওয়াটা স্বাভাবিক, ওনার জন্য আমার সহানুভূতি রইল।”
দিলীপ ঘোষকে তাঁর জেতা মেদিনীপুর লোকসভা থেকে যে ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে তাতে দিলীপ ক্ষুব্ধ। তিনি দলের সিদ্ধান্তে তাঁর কেন্দ্র বদলের নির্দেশ মেনে নিয়েছেন কিন্তু একের পর এক বোমা ফাঁটিয়ে চলেছেন। কখনও তিনি বলছেন, “আমি দলের অনুগত সৈনিক। দল যে কেন্দ্রে লড়তে বলবে সেখানেই লড়ব।” আবার কখনও তিনি বলছেন, “দল বুঝেছে, বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি কঠিন, তাও ওখানে দল আমায় উপযুক্ত মনে করেলছে বলেই প্রার্থী করেছে।”
দিলীপ ঘোষের বক্তব্যে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে দিলীপ ঘোষের হাত ধরে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির জয়জয়কার হওয়ার পরই ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ তে শুভেন্দু অধিকারী অমিত শাহর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন। শুভেন্দুর দেখাদেখি তৃণমূলের বহু মন্ত্রী-নেতা-কর্মী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। তাই দিলীপ ঘোষের দাবি খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। তাঁকে দেখে এবং তাঁর সভাপতিত্বে বাংলায় বিজের যে উত্থান হয়েছে সেটা অনস্বীকার্য। তাই সেই দিক থেকে বিজেপিতে শুভেন্দু অধিকারীর আগমনের কারণও যে দিলীপ ঘোষ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ দিলীপ ঘোষই বাংলায় প্রথম তৃণমূল বিরোধিতায় সংসদীয় রাজনীতিতে বিজেপিকে একটা উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন, তারপরই বাংলার মানুষের মনে হয়েছে তৃণমূলকে খারিজ করার জন্য দিলীপ ঘোষকে ভরসা করা যায়। এই ভরসা করা যায় ভাবনায় ভর করেই যে বিজেপিতে শুভেন্দু অধিকারীর আগমন, দিলীপ ঘোষ মঙ্গলবার সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এর আগেও দিলীপ ঘোষ বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে বলেছিলেন, “কেউ নিজে জেতে দলকে জেতায়,দলের অন্যকে জেতায়, আবার কেউ শুধু নিজে জেতার জন্য দল করে, ভাষণ দেয়। আমি নিজে জিতেছি, দলের অন্যদের জিতিয়েছি, দিলীপ ঘোষ হারতে এখানে আসেননি, জিততে এসেছেন।”