মহানগর ডেস্ক : “ইন্ডিয়” জোটের চেহারা ক্রমেই ছন্নছাড়া হয়ে উঠছে। কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল পারস্পরিক বিবাদে বাংলা ও কেরলে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গীরা পরস্পর বিরোধী হয়ে উঠেছেন, প্রার্থী দিয়েছেন একে অপরের বিরুদ্ধে, চলছে ঝাঁজালো আক্রমণ। রাহুল-বিজয়ন এই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে কালীমা লিপ্ত হচ্ছে “ইন্ডিয়া” জোট, যাদ দেখে হাততালি দিচ্ছে বিজেপি!
শুক্রবার কেরলে ভোটের প্রচারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য পিনারাই বিজয়নকে নিশানা করে বসলেন রাহুল গান্ধী। রাহুল বলেন, ‘‘বিরোধী দলগুলির নেতানেত্রীরা অহরহ কেন্দ্রীয় এজেন্সির নিশানা হচ্ছেন। কিন্তু একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সিবিআই, ইডির মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি গ্রেফতার এমনকী, জিজ্ঞাসাবাদও করছে না?’’
রাহুলের এই বক্তব্য প্রশ্ন তুলো দিচ্ছে, ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের প্রধানমন্ত্রী যে দুর্নীতিগ্রস্থ বলছেন সোজা গালমন্দ করছে, সেটা সঠিক?”
এদিকে কোঝিকোড়ে সিপিএমের সমাবেশ থেকে রাহুলের ওই মন্তব্যের উত্তর দিয়েছেন বিজয়ন। সেই সঙ্গে নাম না-করে অতীতে রাহুলের নামের সঙ্গে “পাপ্পু”, “আমূল বেবি”-র মতো শব্দ জুড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। বিজয়ন বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী, আপনার পুরনো নাম আছে। এখনও সেই ভাবমূর্তি থেকে আপনি সরে আসতে পারেননি। এমন পরিস্থিতি থাকা কাম্য নয়।’’ বিজয়ন বলেন, রাহুলের ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে বাম নেতাদের দেড় বছর কারাবন্দি করেছিলেন।
ঠিক আগেরবারের মতোই এ বারও কেরলে লোকসভা ভোটে কেরলে মূল লড়াই সিপিএম নেতৃত্বাধীন জোট এলডিএফ এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের মধ্যে। ভোটের লড়াইয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ছে দু’তরফেই। সম্প্রতি বিজয়ন বিজেপির রাহিলের লড়াইয়ের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিজয়নের বক্তব্য, <span;>তাঁর দাবি ছিল, রাহুল সত্যিই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইকে গুরুত্ব দিলে হিন্দিবলয়ের কোনও আসনে বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে নামতেন। কেরলের ওয়েনাড়ে বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন না। বিজয়নের মন্তব্য সম্পর্কে কেরলের কংগ্রেস নেতা রমেশ চেন্নিথলা শনিবার বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীকে খুশি করার জন্য বিজয়ন আমাদের নেতাদের খুব নিম্নরুচির ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন।’’
কেরলের কংগ্রেস নেতা এবং কেরল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ভিডি সতীশন বলেছিলেন, ‘‘বিজয়নের উদ্দেশ্য বিজেপিকে সাহায্য করা। তাই গত এক মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেস এবং রাহুলকে আক্রমণ করে চলেছেন।’’ তাঁর সরকারের নানা দুর্নীতি ও অপকর্মগুলি আড়াল করাও বিজয়নের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে অভিযোগ করেন সতীশন। কূটনৈতিক যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে আরব থেকে বেআইনি ভাবে সোনা আমদানি, কারুভান্নুর সমবায় ব্যাঙ্ক দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে বিজয়ন সরকার জড়িত বলেও অভিযোগ করে সতীশন বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত এড়াতেই বিজয়ন বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে চাইছেন। তাই ধারাবাহিক ভাবে নিশানা করছেন কংগ্রেস এবং রাহুলকে।”
কেরলে কংগ্রেস সিপিএমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনছে, বাংলায় কংগ্রেস এবং সিপিএম যুগ্মভাবে বাংলার শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনছে।
এখন প্রশ্ন, এই নড়বড়ে অবস্থা নিয়ে কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল এই তিন প্রধান শক্তি কি ভাবে ইন্ডিয়া জোটকে মোদীর বিরুদ্ধে কাজে লাগাবে এবং মানুষকে ভাবাতে সহায়তা করবে যে ইন্ডিয়া জোট বিজেপিকে পরাস্ত করে দেশে সরকার গড়বে। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় বলছেন কংগ্রেস, সিপিএম বিজেপির কাছ থেকে “কিছু পায়”, তাই তারা কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের বিরোধীতা করছে। আবার এই বাম, কংগ্রেসই কেরলে পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে মানুষকে ভাবতে ভুলিয় দিচ্ছে দেশে আসল বিজেপি বিরোধী কারা? সেই জায়গায় কি ইন্ডিয়া জোট সত্যিই আছে? এদিকে মমতা বাংলার সব সভামঞ্চ থেকে বলে চলেছেন, “বাংলায় ইন্ডিয়া নেই। সিপিএম,কংগ্রেস হাত মিলিয়েছে। আমিই ইন্ডিয়ার নেতৃত্ব দেব ভোটের পরে।”
একটা রাজনৈতিক দলের জোট কবে হল, কবে ভাঙল, এখন কি অবস্থায় আছে, আদৌ ইন্ডিয়া জোট বলে কিছু হয় কি না, তা সেই প্রশ্ন উঠছে।