মহানগর ডেস্ক: বিরোধীদের অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করে সন্দেশখালির নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে পথে নেমেছে তৃণমূল এবং সন্দেশখালির মানুষের কাছ থেকে সদর্থক সাড়া পাছে। সন্দেশখালির ঘটনা তৃণমূল বিরোধী ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়। এটা আসলে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূলের দুই নেতা উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরার কুকর্মের ফল। এই দুই নেতাকে শাসকদল তৃণমূল ইতিমধ্যেই গণধর্ষণ এবং খুনের চেষ্টার ধারায় গ্রেফতার করেছে, গ্রেফতার করা হয়েছে আরও ১৭ অভিযুক্তকে। উত্তম ও শিবু এই দুই তৃণমূল নেতা এখন পুলিশ হেফাজতে। এই দাবি করছেন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব৷
সোমবার তৃণমূলের এই দাবি আরও একবার সত্যি প্রমাণ হল। সন্দেশখালি থেকে বারাসত উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামীর কাছে বাসে করে মিয়ে আসা হয়েছিল ৩৯ জন বাসিন্দাকে। এরা কেউ জমির পাট্টা পাননি, কেউ পাট্টা পেলেও জমি দিয়েছেন উত্তম সর্দার, শিবপ্রসাদ হাজরাকে, এমনটাই তাঁদের অভিযোগ। এই অভিযোগ তাঁরা নারয়ণ গোস্বামীকে জানিয়েছেন। নারায়ণ গোস্বামী এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “আমরা সন্দেশখালির যে সব মানুষের কাছ থেকে জমি সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছি, তাঁদের পাট্টা,জমি ফেরত এবং জমি ব্যবহারের পর টাকা না দেওয়ার অভিযোগ অনুসারে তাঁদের টাকাও ফেরত দিচ্ছি এবং দেবো। ইতিমধ্যে রবিবারই ১০ জনকে টাকা দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার বাসে করে এই মানুষদের নিয়ে এসেছি। এদের সমস্যা সমাধান করে এদের যাতায়াত এবং আজকের খাবার আমরাই দিয়েছি।”
নারায়ণ গোস্বামীর এই বক্তব্যের সঙ্গে সদেশখালির বিক্ষুব্ধ মানুষদের বক্তব্যে সামঞ্জস্য পাওয়া যাচ্ছে। সন্দেশখালির অভিযোগকারীরা বলছেন, আমরা তৃণমূল করি। দলের বিরুদ্ধে আমদাের ক্ষোভ নেই। উত্তম এবং শিবপ্রসাদ আমাদের জমি নিয়েছে, টাকা দেয়নি। দল আমাদের পাশে আছে। আমাদের জমি এবং টাকা ফেরত দেবে বলেছে। আমরা এখন আশায় আছি তৃণমূল দল এবং রাজ্য সরকার আমাদের টাকা ও জমি ফেরত দেবে। আমরা সবাই তৃণমূল করি। তবে যদি আমাদের জমি ও টাকা ফেরত না দেওয়া হয় তখন আমরা আবার আন্দোলনে নামবো।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই বলছিলেন, সন্দেশখালিতে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। যারা অভিযুক্ত তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষণের কোনও অভিযোগ নেই। সবটাই আরএসএস, বিজেপি এবং সিপিএমের চক্রান্ত। শেখ শাহজাহানকে টার্গেট করে ইডি সন্দেশখালিতে ঢুকেছে। এখানে আরএসএস-এর ঘাঁটি আছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের তিন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসু এবং বিরবাহা হাসদাকে নিয়ে টিম গঠন করে সন্দেশখালিতে পাঠান। তার আগে দলীয় টিম সন্দেশখালির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে উত্তম সর্দার এবং শিবপ্রসাদ হাজরাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
এই পরুস্থিতিতে এখন অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি এবং সিপিএম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি সুজিত বসুর কথা মতো এখন স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে সন্দেশখালির ১৬টি ব্লক নয় ৩ থেকে ৪টি ব্লকের মানুষ, বিজেপির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, রাজ্যের নামে কুৎসা করে, জমি ছিনিয়ে নেওয়া এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনছে। এর সবটাই বিজেপি এবং সিপিএমের পরিকল্পিত ঘটনা। রবিবারের পর সোমবারও সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকের পক্ষ থেকে যে সমস্যা সৃাধানের ক্যাম্প করা হয় তাতে বহু সাধারণ মানুষ তাঁদের অভিযোগ জমা দিয়েছেন। প্রশাসনের কাছে গ্রামবাসীরা বলছেন, শিবু, উত্তম তাঁদের জমি ছিনিয়ে নিয়েছে, টাকা দেয়নি।
সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকের বিডিও রবিবার এবং সোমবার এখানকার দুটি ব্লকের ৯টি ক্যাম্পে ১৯৬টি অভিযোগ জমা পরার পর তা খতিয়ে দেখে দরকারে যাদের বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন সেখানে যাচ্ছেন। এই অভিযোগ উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে বিডিও জানাবেন বলেও জানিয়েছেন। এই মুহূর্তে রাজ্যে ভোটের রাজনীতির পালস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতটা বোঝেন, সেই জায়গায় তাঁর ধারেকাছে কেউ নেই। তাই সিঙ্গুরের জমি সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিল ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকার। আর সেই একই রকমের জমি সংক্রান্ত সমস্যা সন্দেশখালিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধীদের উপেক্ষা করেই সমাধান করলেন। এখন সন্দেশখালির বাসিন্দারা বলছেন, আমরা সবাই তৃণমূল করি। উত্তম, শিবু এখন পুলিশি হেফাজতে। শাহজাহান ভাই পলাতক। তাই আমাদের সাহস বেড়েছে। তাই আমরা বাইরে এসে আমাদের ক্ষোভের কথা বলছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটাই চেয়েছিলেন, বিজেপি, সিপিএম নয়, সন্দেশখালির অত্যাচারিত মানুষরা বলুন, আমরা তৃণমূল করি, তৃণমূল সরকার আমাদের পাশে আছে। এদিকে সন্দেশখালির চারটি অঞ্চল থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বাকি ১৫টি স্পর্শকাতর এলাকায় এখনও ১৪৪ ধারা মোতায়েন করা আছে। তৃণমূলনেত্রী এবং তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বরাবর বলে আসছেন, “দল নয়, যা করার করেছে উত্তম, শিবু। আর তাই দল সমস্যা সমাধানে নেমেছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার জরা হয়েছে। শান্ত সন্দেশখালিকে অশান্ত করতে পারেনি বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস। আর তাই রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল দল সন্দেশখালির মানুষের সমস্যা সমাধানে পথে নেমেছে। সাধারণ মানুষ, মহিলা– সবার পাশে তৃণমূল ছিল,আছে,থাকবে।”