মহানগর ডেস্ক : রাজনীতি সদা পরিবর্তনশীল, বলা যায় বায়বীয়, বাতাস যেমন যে পাত্রে রাখা যায় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে, রাজনীতিও এখন তপমন বস্তু। না হলে বহরমপুরের টেক্সটাইল মোড়ে এক সময় সিপিএম-এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের অন্যতম নেতা, টেক্সটাইল মোড়ে সভা করে সিপিএমের মুন্ডপাত করা একমাত্র নেতা, আবার সিপিএম আমলে পুলিশের ভয়ে এই রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে নিজেকে রক্ষা করা কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী কিনা সেই টেক্সটাইল মোড়েই সিপিএমের উত্তরীয় গলায় পরে, সিপিএমের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের হাত ধরে ভোট প্রচারে নামেন? সেলিমের মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার পথে শক্তি প্রদর্শনের জন্য সেলিমের হাত ধরে, গলায় সিপিএমের প্রতীক আঁকা উত্তরীয় পরে মিছিলে এদিন যান বাংলার একদা বিরোধী বর্তমান বন্ধু দুই বাম-কংগ্রেস নেতা। আসলে রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু বা স্থায়ী বন্ধু বলে কিছু হয় না, অধীর-সেলিমের এই ‘ঐক্যে’র ছবিই সেই চিরন্তন সত্যটিকে আরও প্রকট করে তুলল।
২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে এই প্রথমবার এক ফ্রেমে এলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী-মহম্মদ সেলিম। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেন মহম্মদ সেলিম। বহরমপুরে মিছিল করে শক্তিপ্রদর্শন করলেন বাম-কংগ্রেস নেতা কর্মীরা। তাতে সবার সামনের সারিতে ছিলেন এককালে বিরেধী, বর্তমান বন্ধু অধীর-সেলিম। সেলিমের গলায় এদিন কংগ্রেসের কোনও উত্তরীয় দেখা না গেলেও অধীরের গলায় ছিল কাস্তে হাতুড়ি তারা চিহ্নের সাদা-লাল উত্তরীয়। অধীর চৌধুরীকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি দীর্ঘদিন বামপন্থী আন্দোলন করা কোনও কমরেড।
লোকসভা ভোট ঘোষণার পর এই প্রথম একসঙ্গে দেখা গেল সেলিম-অধীরকে। এই দুই নেতার মধ্যে আসনরফা নিয়ে যা আলোচনা হয়েছে, সবটাই হয়েছে ফোনে। বাকি কথা হয়েছে অধীরের ব্যক্তিগত সচিবের মাধ্যমে। এর আগে বহরমপুরে দুই নেতার বৈঠকে বসার কথা থাকলেও সেবার অধীর নিজেই সেই সিদ্ধানৃত থেকে শেষে পিছিয়ে এসেছিলেন। এর ফলে দুই নেতাকে একফ্রেমে দেখা না যাওয়ায় নীচুতলায় বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা জড়তা ছিল। একসঙ্গে প্রচারে অনীহা ছিল। সেই অনীহা কাটাতেই বৃহস্পতিবার একসঙ্গে হাতে হাত রেখে বর্ণাধ্য শেভাযাত্রা হাঁটলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। ওই মনোনয়নের মিছিলেই অধীরকে লাল রঙে রাঙিয়ে দিলেন সেলিম। মিছিলে ছিলেন সিপিএমের যুব নেতা শতরূপ ঘোষ এবং যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। অধীর-সেলিমকে এক ফ্রেমে দেখে খুব স্বাভাবিক কারণেই অসন্তুষ্ট তৃণমূল সমালোচনায় মুখর হয়েছে। তবে তৃণমূলের কষ্ট হলেও বর্ণাঢ্য মিছিল শেষে মনোনয়ন জমা দিলেন মহম্মদ সেলিম।