মহানগর ডেস্ক : রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলেন রাজভবনেরই এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী। এই মহিলা অস্থায়ী কর্মী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রথমে রাজভবনে কর্তব্যরত পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। রাজভবন যেহেতু হেয়ার স্ট্রিট থানার অন্তর্গত তাই হেয়ার স্ট্রিট থানায় ওই মহিলাকে অভিযোগ জানাতে বলা হয় রাজভবনের পুলিশ আউটপোস্ট থেকে। খবর পেয়ে হেয়ার স্ট্রিট থানা থেকে একজন মহিলা অফিসার দ্রুত রাজভবনে আসেন, অস্থায়ী মহিলা কর্মীর কাছ থেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয় ওই মহিলার কাছ থেকে। তারপর ওই অস্থায়ী মহিলা কর্মীকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রাজভবনের ওই অস্থায়ী মহিলা কর্মী। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে তদন্ত শুরু করেছে। ওই মহিলা অস্থায়ী কর্মীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে সঠিক ভাবে বিষয়টি জানতে চাইছে।
রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, “রাজ্যপালের নামে মহিলার শ্লীলতাহানি, এখানেই আজ প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, ছিঃ।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ রাজভবনের এক মহিলা অস্থায়ী কর্মী কাঁদতে কাঁদতে রাজভবনের পুলিশ আউটপোস্টে আসে। পুলিশের কাছে ওই মহিলা জানান, একবার নয়, দু’বার চাকরি স্থায়ীকরণের নাম করে রাজ্যপাল তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল ওই অস্থায়ী মহিলা কর্মীকে রাজ্যপাল তাঁর চেম্বারে ডাকেন এবং শ্লীলতাহানি করেন বলে ওই অস্থায়ী মহিলা কর্মী পুলিশের কাছে জানান। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ওই অস্থায়ী মহিলা কর্মী ২০১৯ সাল থেকে রাজভবনে কর্মরত। রাজভবনের হস্টেলে ওই মহিলা থাকেন। গত ২৪ এপ্রিল ওই মহিলাকে রাজ্যপাল দেখা করতে ডেকে পাঠান। রাজ্যপালের নির্দেশ মতো ওই মহিলা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে রাজ্যপাল তাঁর সঙ্গে যেমন আচরণ করেন তা তাঁর পছন্দ হয়নি, তিনি তখন রাজ্যপালের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্যপাল আবার ওই অস্থায়ী মহিলা কর্মীকে নিজের চেম্বারে ডাকেন। ওই অস্থায়ী মহিলা কর্মী এদিন সঙ্গে করে রাজ্যপালের কাছে তাঁর সুপারভাইজারকে নিয়ে যান। রাজ্যপাল সুপারভাইজারকে সরিয়ে দেন, ওই অস্থায়ী মহিলা কর্মীর সঙ্গে একা কথা বলেন। মহিলার অভিযোগ, সেই সময় রাজ্যপাল তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। তখন ওই মহিলা রাজ্যপালকে বলেন, এই বিষয়টি তিনি পুলিশে জানাবেন। কাঁদতে কাঁদতে ওই মহিলা রাজ্যপালের চেম্বার থেকে বেরিয়ে রাজভবনের পুলিশ আউটপোস্টে এসে সব বলেন। পুলিশ তখন ওই মহিলাকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় গাড়ি করে পাঠায়। এদিকে আইনত কর্মরত রাষ্ট্রপতি, কর্মরত রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল উভয়েরই সেই সুরক্ষাকবচ আছে। তাই পুলিশ এই অভিযোগ পাওয়ার পর কি করবে সেটা বুঝতে লালবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে।
এদিকে আজই রাজভবনে আসার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর, তিনি আজ রাতে রাজভবনে থাকবেন, শুক্রবার এখান থেকেই রাজ্যের তিনটি নির্বাচনী জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই সময় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠা নজিরবিহীন ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী রাজভবনের দক্ষিণ দিকের গেট দিয়ে রাজভবনে প্রবেশ করবেন। প্রধানমন্ত্রী আসার জন্য রাজভবনের পুলিশি নিরাপত্তা ব্যাপক হারে বাড়ানো হয়েছে।
তবে এই ঘটনার পর রাজভবনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে রাজভবন বা রাজ্যপালের তরফে এই অস্থায়ী মহিলা কর্মীর অভিযোগের পর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এর আগে রাজ্যের কোনও পূর্বতন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বলে জানা নেই।
শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠলে সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে পুলিশ যে ধরনের পদক্ষেপ করে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে পুলিশ তেমন ব্যবস্থা নেয় কিনা সেটা দেখার।