মহানগর ডেস্ক : রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছিলেন রাজভবনেরই এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী। এর পর এই অভিযোগ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর আলোচনা হয়। রাজভবনের ওই অস্থায়ী মহিলা কর্মী হেয়ার স্ট্রিট থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। হেয়ার স্ট্রিট থানা ও লালবাজার রাজভবনের পুলিশ আউটপোস্টের ওসির কাছে সেদিনের ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ চেয়ে পাঠায়। বৃহস্পতিবার রাজভবন থেকে সেদিনের ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হল। ১ ঘণ্টা ৯ মিনিটের ওই ভিডিও ফুটেজকে গুরুত্বহীন বলে মন্তব্য করলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। চন্দ্রিমাদেবী বলেন, “রাজ্যপাল বলেন ১১ কেটি মানুষ রাজ্যে আছেন, ১০০ জনকে ফুটেজ দেখাবেন বললেন। এই ফুটেজ তো ফুঃ হয়ে গেল।” বিজেপি মুখপাত্র ও রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এই বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে কিছু বলব না। এটা সাংবিধানিক বিষয়।”
এদিকে রাজভবনের যে অস্থায়ী মহিলা কর্মী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিলেন তিনি এই ফুটেজ দেখে বলেন, “আমি কাঁদতে কাঁদতে পুলিশ আউটপোস্টে যাচ্ছি সেটা দেখলাম। এই ফুটেজ হাস্যকর, নাটক। পুলিশকে দিয়ে তদন্ত করালে সব প্রকাশ পেত।
রাজভবনের তরফে যে ফুটেজ দেখানো হয়েছে, সেখানে নর্থ গেটের সামনের দু’টি ক্যামেরার রেকর্ডিং রয়েছে। মোট তিনটি ধাপে ২ মে বিকেলের ফুটেজ দেখিয়েছেন রাজভবন কর্তৃপক্ষ। প্রথম ফুটেজের সময় বিকেল ৫টা ৩১ মিনিট থেকে ৫টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত। দ্বিতীয় ফুটেজের সময় ৫টা ৩২ মিনিট থেকে ৬টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত। তৃতীয় ফুটেজটি চলেছে সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিট থেকে ৬টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত।
১ ঘণ্টা ১৯ মিনিটের এই ফুটেজে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগকারিনী মহিলাকে দেখা গিয়েছে। একই সময়ের একই দৃশ্য দেখানো হয়েছে দু’টি ক্যামেরা থেকে। বিকেল ৫টা ৩২ মিনিট নাগাদ মেন গেট ক্যামেরায় সামনের দিক থেকে ওই মহিলাকে রাজভবন থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে ওসির ঘরের দিকে আসতে দেখা যায়। এর পর নর্থ গেট ক্যামেরায় পিছন দিক থেকে তাঁকে ওসির ঘরের দিকে যেতে দেখা যায়। ওই একই ক্যামেরায় বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট নাগাদ কয়েক জন পুলিশের সঙ্গে আউটপোস্ট থেকে বেরিয়ে মহিলাকে পাশের ঘরে যেতে দেখা গিয়েছে। যত ক্ষণ ভিডিয়ো চলেছে, তিনি সেখান থেকে আর বেরোননি। অর্থাৎ, এর পরের ফুটেজ আর দেখানো হয়নি।
যদিও ওই মহিলা তাঁর অভিযোগপত্রে জানিয়েছিলেন, রাজভবনের কনফারেন্স রুমে তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করা হয়েছে। রাজভবনের ভিতরের কোনও অংশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হয়নি। দেখা যায়নি রাজ্যপালকেও। তাই এই ফুটেজ দিয়ে এটা প্রমাণের কোনও জায়গা নেই যে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওই মহিলা অস্থায়ী কর্মীর করা অভিযোগ মিথ্যা বা ভিত্তিহীন।
রাজভবনের তরফে কেন এই ধরনের ফুটেজ প্রকাশ করা হল, কেনই বা বলা হল প্রথম ১০০ জনকে এই ফুটেজ দেখানো হবে, যদি ফুটেজ দেখানোই হল তাহলে কেন রাজভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মীর অভিযোগ মতো কনফারেন্স রুমের সিসি টিভি ফুটেজ রাজভবন প্রকাশ করল না, যে জায়গায় তাঁর সঙ্গে রাজ্যপাল শ্লীলতাহানি করেছেন বলে ওই মহিলা অভিযোগ করেছেন, এই সব প্রশ্নের উতর কিন্তু রাজভবন প্রকাশিত সিসি টিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া গেল না।
রাজভবনের তরফে বুধবার রাতে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকালে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজভবন চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পুলিশ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও নাগরিক ওই ফুটেজ দেখার জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। সেই মতো বৃহস্পতিবার ‘সচ্ কা সামনে’ অনুষ্ঠানে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনা হয়। রাজভবন সূত্রে খবর, মোট ৭৫ জন ফোন করে এই ফুটেজ দেখার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২ মে রাজভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মী হেয়ার স্ট্রিট থানায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু রাজ্যপাল সংবিধানের রক্ষাকবচ পান। তাই তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ফৌজদারি তদন্ত করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে তাই পুলিশের কী করণীয়, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। রাজ্যপাল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ভোটের সময় রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হচ্ছে। এর পর রাজভবন থেকে বিবৃতি জারি করে সেখানে পুলিশের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেন রাজ্যপাল।
লালবাজার জানায়, কোনও ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নয়, একটি ঘটনার অভিযোগের অনুসন্ধান করছে পুলিশ। সেই স্বার্থে চেয়ে পাঠানো হয় রাজভবনের সিসিটিভি ফুটেজ। এখনও পুলিশ তা পায়নি। এর মাঝেই রাজভবন জানায়, তারা সে দিনের ফুটেজ জনসাধারণকে দেখাবে। কেবল মমতা এবং তাঁর পুলিশ ফুটেজ দেখতে পারবেন না। তবে সেদিনের ঘটনা বলে রাজভবন যে সিসি টিভি ফুটেজ প্রকাশ করল তাতে রাজভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মীর অভিযোগের সব বিষয় ও স্থান এলো না বলে মনে করছে শাসক দল। তৃণমূলের বক্তব্য, পুলিশকে ফুটেজ দিতে রাজভবনের আপত্তি কিসের?