মহানগর ডেস্ক : ভোটের আবহে খাস কলকাতায় তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ। শনিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে বাগুইআটির অর্জুনপুর পশ্চিমপাড়া এলাকায়। অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে অশান্তিী শুরু। তার পরই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে যায়। বাগুইআটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আইন আইনের পথে চলবে, দোষীদের রেয়াত করা হবে না, বলছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও বিধাননগর পুরসভার এমএমআইসি দেবরাজ চক্রবর্তী।
স্থানীয় সূত্রে এবং পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাগুইআটির অর্জুনপুরের পশ্চিম পাড়া। এলাকাটি বুধাননগর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তরভূক্ত। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ হয়। চলে ইটবৃষ্টি। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। অভিযোগ, রাতে পুনরায় এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে সংঘর্ষ আরম্ভ হয়। এর পরেই সঞ্জীব দাস ওরফে পটলা নামে এক ব্যক্তিকে ইট দিয়ে মারা হলে তিনি ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হন। তার পরে তাঁকে টেনে নিয়ে এসে রাস্তায় ফেলে রড, লাঠি, ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয় বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বাগুইআটি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে স্থানীয়রা বাসিন্দারা। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিত আরও জটিল হলে পুলিশকে র্যাফ নামতে হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর পুলিশি আশ্বাসে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও চাপা উত্তেজনায় রয়েছে এলাকায়। আজ সকালেও এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এদিন সকালে স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবরাজ চক্রবর্তীকে ফোন করে কেন তিনি শনিবার রাতে ফোন ধরেননি সেই কৈফিয়ত চাওয়া হয়। ফোনে বলা হয় তিনি ভোট চাইতে এলে তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে ভোট দেওয়া কাকে বলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী পরিকল্পনা করে সঞ্জীব দাসকে খুন করেছে, পরিকল্পনা ছাড়া এরকম খুন হতে পারে না।
ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। দোষীদের রেয়াত করা হবে না। এধরনের ঘটনা দল সমর্থন করে না। তবে তৃণমূলে একটাই গোষ্ঠী, যার প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কোনও গোষ্ঠী নেই।” তাঁর আরও সংযোজন, “বাগুইআটি, জ্যাংড়া, হাতিয়ারা এলাকায় বিজেপি মাথাচারা দিয়েছে। এই ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছে, কেউ এটা করিয়েছে কিনা, তা খুঁজে দেখুক পুলিশ।”
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত সঞ্জীব দাস সম্প্রতি তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছিলেন। তার জেরেই এই খুন কি না সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
স্থনীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে তীব্র প্রতিবাদ দেখায় স্থানীয় মহিলারা। তারা বলে যাদের ধরা হয়েছে তাদের শাস্তি না হলে থানা জ্বালিয়ে দেবো, পুলিশ তখন তাদের আশ্বাস দিয়ে বলে, আমরা আমাদের কাজ করছি, যদি আমরা না পারি তখন আপনারা আপনাদের যা করার করবেন। এদিকে স্থানীয় মহিলারা এলাকার তৃণমূল নেতা দেবরাজ চক্রবর্তীকে ফোন করে রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলে, গতকাল রাতে ফেন করলাম আপনাকে এবং সুপর্ণা আন্টিকে (স্থানীয় বিধাননগর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলার সুপর্ণা বোস), আপনারা ধরলেন না। খুন হয়ে গেল একজন মানুষ। এখন ফোন ধরে সহানুভুতি দেখাচ্ছেন? এই ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটে জিতেছেন। আসুন আবার ভোট চাইতে, একটা ভোটও দেবো না।
এদিকে তৃণমূল নেতা দেবরাজ চক্রবর্তী জানান, “মৃত সঞ্জীব দাস তৃণমূল করতেন, তাঁর ঘনিষ্ঠ। কেন এই খুন সেটা তদন্তের পর জানা যাবে। গতকাল রাতে আমার ফেন সায়লেন্ট করা ছিল, তাই ফোনকল শুনতে পাইনি।”
তবে দেবরাজ চক্রবর্তীর এই যুক্তি স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করছে না। তাদের বক্তব্য এটা পরিকল্পিত খুন।
স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, এলাকায় প্রায়ই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা হত। বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর তথা বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তীকে জানানো হয়েছে বার বার। কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, শনিবার রাতেও ঘটনার সময় তাঁকে ফোন করা হয় কিন্তু তিনি উত্তর দেননি। পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে সঞ্জীবকে।
রবিবার সকালেও এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। ঘটনাস্থলে এসেছেন দেবরাজ। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা। দেবরাজের কথায়, ‘‘শনিবার রাতে প্রথমে যখন অশান্তির খবর পাই, তখন সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই। তবে মাঝরাতে আবার যখন নতুন করে গন্ডগোল হয়, তখন আমায় ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু ফোনটা সায়লেন্ট থাকায় আমি ফোনকল শুনতে পাইনি। সকালেই এলাকায় এসেছি। মৃত সঞ্জীব আমার খুব কাছের এক জন ছিলেন। যাঁরা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সকলের শাস্তি হবে। স্বজনহারারদের কষ্ট নিয়ে কোনও রাজনীতি হয় না। পুলিশ তদন্ত করছে।’’ এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, কারা এই খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের খোঁজ চলছে। কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃত সঞ্জীবেরও নামও পুলিশের খাতায় ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃতের নামে ১১ টি কেস আছে, অস্ত্র আইনেও মামলা আছে। অথচ তৃণমূল নেতা দেবরাজ চক্রবর্তী বলছেন, মৃত সঞ্জীব দাস তাঁর ঘনিষ্ঠ, তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।