মহানগর ডেস্ক: সন্দেশখালির ১৯টি জায়গায় ফের ১৪৪ ধারা জারি করল রাজ্যের তৃণমূল সরকার। ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকছে এই ১৯টি জায়গায়। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত আদালতে সন্দেশখালি মামলায় শুনানির সময় প্রশ্ন করেছিলেন, কেন গোটা সন্দেশখালি জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হল? তবে মঙ্গলবার এই প্রশ্নে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিকে যথাযথ তথ্য দিতে পারেনি রাজ্য। এরপরই সন্দেশখালিতে জারি হওয়া ১৪৪ ধারা বাতিল করার নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জশ সেনগুপ্ত। তবে বুধবার সকাল থেকেই সন্দেশখালির সাতটি পঞ্চায়েতের ১৯টি জায়গায় নতুন করে জারি করা হল ১৪৪ ধারা!
১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে সন্দেশখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের সন্দেশখালি ঘাট, খুলনা ঘাট, বোলাখালি ঘাট, ত্রিমণি বাজার, পাত্র পাড়ায়। প্রসঙ্গত, সন্দেশখালির আন্দোলন মুলত শুরু হয়েছিল এই পাত্র পাড়া থেকেই। অন্যদিকে, দুর্গামণ্ডপ জিপির গাববেড়িয়া মার্কেট, দুগুড়ি পাড়ায় জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। এর মধ্যে দাউদপুরও রয়েছে, যা বিজেপি-র শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। এখানে যদি নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তাই প্রশাসন আগাম ১৪৪ ধারা জারি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও ধামাখালি ঘাট, হালদার পাড়া, পিঁপড়ে খালি ঘাট সহ আরও একাধিক জায়গায় নতুন করে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। সব মিলিয়ে সন্দেশখালির ২ নম্বর ব্লকের মোট ১৯ জায়গায় নতুন করে জারি হল ১৪৪ ধারা।
গতকাল আদালতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেছিলেন, ঠিক কোন এলাকায় গণ্ডগোল হচ্ছে, কতটা অঞ্চল জুড়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তার উল্লেখ করা হয়নি ১৪৪ ধারা জারির বিজ্ঞপ্তিতে। বিচারপতি সেনগুপ্ত-র বক্তব্য ছিল, ১৪৪ ধারা জারি করার আগে আরও ভালভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা উচিত ছিল। যত্ন নিয়ে খতিয়ে দেখা উচিত ছিল পরিস্থিতি। বিচারপতি উল্লেখ করেছেন, ১৪৪ ধারা জারি করতে হলে এলাকা নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করতে হবে। ড্রোনের মতো আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে নজরদারি চালানোর কথাও বলেছেন বিচারপতি। এবার কী তাহলে বিচারপতির ধমক খেয়ে টনক নড়ল রাজ্য প্রশাসনের? তাই কী একটু আঁট ঘাট বেঁধে ফের ১৪৪ ধারা জারি করা হল?
এদিকে সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন তিনি আজ বুধবার সন্দেশখালি ঢুকবেন দুপুর ১২ টায়। শাসকের সাধ্য থাকলে তাঁকে যেন আটকে দেখায়। যে অসভ্যতা সন্দেশখালির মহিলাদের সঙ্গে তৃণমূলের সন্দেশখালির “জমিদার” নেতা শেখ শাহজাহান এবং তার দুই অনুচর উত্তম সর্দার এবং শিবরসাদ হাজরা করেছে, যে ভাবে ফলন হওয়া ধানের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে ধান নষ্ট করে, মহিলাদের অভিযোগানুসারে রাতের পর রাত তাদের ধর্ষণ করেছে, তার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোন অজ্ঞাত কারনে এই শেখ শাহজাহান এবং শিবপ্রসাদ হাজরাদের আড়াল করছে সেটাই সবচেয়ে বড় এবং রহস্যময় প্রশ্ন। আর রাজ্য সরকারের এই কুৎসিত আচরণের সমর্থন পাওয়া গিয়েছে রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের বক্তব্যে। কেন শেখ শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করছে না? কেনই বা শিবপ্রসাদ হাজরাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? এই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের এই নবীন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেছেন, “শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরার নামে কি কোনও অভিযোগ কেউ করেছে?”
সারা দেশ শুনেছে রাত হলেই শেখ শাহজাহান, উত্তম সর্দার, শিবপ্রসাদ হাজরা বাইক পাঠিয়ে সন্দেশখালির গ্রামের মহিলাদের তুলে নিয়ে যায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে, তার পর সেখানে কি হয় সেটা লজ্জাসরমের মাথা খেয়েও গ্রামের নির্যাতিতা মহিলারা বলেছেন। কেন তার পরেও তৃণমূল নেতামন্ত্রী এমন কি দলের সবময় নেত্রী এবং সেনাপতির কানে এই কথা ঢুকছে না সেটাই বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে! কেন শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরাদের আড়াল করছে মা-মাটি-মানুষের সরকার? রাত ২টো ৪০ মিনিটে তৃণমূল নেতা কী কারনে সন্দেশখালির মহিলাদের ডাকত? এটা কি তৃণমূল নেতৃত্বের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? কেনই বা মেয়েদের সঙ্গে দরকার পড়ত শেখ শাহজাহান, উত্তম,শিবপ্রসাদের মতো নিম্নরুচির তৃণমূল নেতাদের? কেন এর পরেও মা-মাটি-মানুষের সরকার শাহজাহান, শিবুর প্রতি নীরব? এই উত্তর চাইছে বাংলা তথা দেশের সুস্থ নাগরিকরা। তবে এখনও কুণাল ঘোষ বলে চলেছেন, “সন্দেশখালি নিয়ে যা বলা হচ্ছে তার কতটা সত্যি ও কতটা বানানো”, যদিও এই কুণাল ঘোষই সারদাকাণ্ডে জেলে থাকার সময় বলেছিলেন, “সারদার প্রধান সুবিধাভোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়”, তাই কুণাল ঘোষ কি বলছেন কি বলছেন না সেটা নিয়প বাংলার মানুষ বিশেষ চিন্তিত নয়৷