মহানগর ডেস্ক : কে বলে রাজনীতিতে সৌজন্য উবে গেছে? এখনও বঙ্গ রাজনীতিতে সৌজয যে বজায় আছে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রইল বৃহস্পতিবারের ইদের সকালে বরানগর আলমবাজারের জামে মসজিদ। এখানেই একই ফ্রেমে ধরা পড়লেন বরানগর বিধানসভা উপনির্বাচনের তৃণমূল ও সিপিএমের দুই প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তন্ময় ভট্টাচার্য। এই ছবিটা বঙ্গ রাজনীতিতে এখন সত্যিই নজিরবিহীন হলেও বাস্তবে সেই ছবি উঠে এলো।
দুজনে মুখোমুখি হয়ে তন্ময় ভট্টাচার্য বললেন, “না এ ছবি না হওয়ার কারণ নেই। সায়ন্তিকা বরানগরের প্রার্থী, উনি এসেছেন বরানগরের মাটিতে,ওনাকে স্বাগত জানানো বরানগরবাসী হিসাবে আমার কর্তব্য। আমি বরানগরের যদি প্রার্থী না হতাম, তাহলেও বরানগরে উনি এসেছেন বলে ওনাকে আমি স্বাগত জানাতাম।”
এদিকে সায়ন্তিকা বলেন, “বরানগরের মানুষকে, তন্ময় স্যরের মতো একজন ব্যক্তিকে আমার আগেই কাজ হল প্রণাম করা ও আশীর্বাদ নেওয়া যেন আমি জয়ী হই। সেই আশীর্বাদ গতকাল আমি তাঁর কাছ থেকে নিয়েছি।”
তন্ময়বাবু বলেন, “হ্যাঁ, আমি আশীর্বাদ করেছি।”
সায়ন্তিকা বলেন, “আমার ওনার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি সবে রাজনীতি শুরু করেছি। শেখার কোনও শেষ নেই। প্রত্যেক মানুষের কাছ থেকে শেখা যায়। ওনাদের মতো ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে আমি শিখতে চাই।”
তৃণমূলের কারও কাছ থেকে শুনেছেন আপনার কাছ থেকে শিখতে চান, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “আমি তৃণমূলের অনেকের কাছ থেকে শিখতে চাই। তাপস রায়কে আমি শ্রদ্ধা করি এই কারণে যে তিনি পদত্যাগ করে তারপর দলত্যাগ করেছেন, তাঁর সঙ্গে আমার রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে কিন্তু আমি এই কারণে তাঁকে শ্রদ্ধা করি।”
সায়ন্তিকা বলেন, “তাপস রায় তৃণমূলের একজন বিধায়ক ছিলেন। উনি তৃণমূলের সমস্ত প্রকল্প,উন্নয়ন মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, নিশ্চিতভাবে ভালোই ছিলেন। আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আমাদের একটা অম্ল মধুর সম্পর্ক তো বাংলার সঙ্গে। তাই সেই জায়গা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতটুকু করবার করার চেষ্টা করেন। কেন্দ্রের যতটা প্রকল্প আমাদের সাংসদ আনতে পেরেছেন,এনেছেন,আগামী দিনেও আনবেন।
সায়ন্তিকার এই বক্তব্যের পর তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “আমি সায়ন্তিকাকে প্রথমেই ধন্যবাদ দেব সত্যি কথা বলার জন্য। ওঁ বলেছেন কেন্দ্রের সঙ্গে ওদের বিরোধীতার সম্পর্ক নয় অম্ল মধুর, টকমিষ্টি সম্পর্ক। কোথাও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মিষ্টি সম্পর্ক কোথাও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে টক সম্পর্ক।”
এই সময় তন্ময় ভট্টাচার্যের কথা শেষ না হতেই সায়ন্তিকা বলেন, “মিষ্টি সম্পর্ক আমার মনে হয় তখনই হত যখন ওনারা জিততে পারতেন, আমরা ওনাদের কাছে মাথা নত করতাম, তাহলে হয়তো মিষ্টি হত কিন্তু ওটা আর হয়ে ওঠেনি।”
সায়ন্তিকা বলেন তাঁর লড়াই বরানগরে তিনি যেন ৩৫ হাজার বাড়তি ভোটে জিততে পারেন। তাঁর লড়াই সজল ঘোষ না তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে, সেই প্রশ্নের জবাব সায়ন্তিকা এভাবেই দেন।
আপনার লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে না বিজেপির বিরুদ্ধে? এই প্রশ্নে তন্ময় ভট্টাচার্য পরিণত রাজনীতিক হিসাবে উত্তরে বলেন, “আমি তৃণমূলের বিরুদ্ধেও লড়ি না, বিজেপির বিরুদ্ধেও লড়ি না, মানুষের ভালো থাকার পক্ষে লড়ি।”
সায়ন্তিকা বলেন, “বরানগরে স্যর যেটা বললেন, “লোকসভায় আমাদের লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে আর স্যর যেটা বললেন, বরানগরে আমাদের কারও বিরুদ্ধে লড়াই নয়, উন্নয়নের পক্ষে লড়াই।”
এটা কি তাহলে ইন্ডিয়া জোট? এই প্রশ্নে তন্ময় ভট্টাচার্য ও সায়ন্তিকার বক্তব্য, “ইন্ডিয়া জোট তো লোকসভায়।” বাংলায় কিন্তু ইন্ডিয়া জোট নেই, বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তিকা কি সেটা মনে রেখে তন্ময় ভট্টাচার্যের সুরে সুর মেলালেন? সেই প্রশ্ন থেকেই গেল।