মহানগর ডেস্ক : দল নয়, নরেন্দ্র মোদীই সব। রবিবার নতুন বছরের সকালে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ইস্তেহার প্রকাশ সেটাই প্রমাণ করল। এই ইস্তেহার নামেই দলের উস্তেহার হলেও ইস্তেহারের প্রচ্ছদে বড় হরফে লেখা “মোদী কি গ্যারিন্টি”! একটা দেশ পরিচালনা করার জন্য ভোট চাইছে যে দল সেই দলকে ছাপিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। তবে এই প্রয়াস নতুন নয়। “মোদীর সরকার”, “মোদীর গ্যারিন্টি”, বিজেপি নতুন বলছে না, তবে দলের নির্বাচনী ইস্তেহারে সেই “মোদী কি গ্যারিন্টি” লিখে সেই বিষয়টিই স্পষ্ট করল বিজেপি। তাহলে বলা যায় এই লোকসভা ভোটে সরকার গড়ার জন্য বিজেপির নামে নয়, দল লড়ছে মোদীর নামে।
এদিন আবারও নতুন করে প্রমাণ হল, দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ঊর্ধ্বে এখন ব্র্যান্ড মোদীর প্রতিশ্রুতি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কথায়, “এই গ্যারান্টি হল ২৪ ক্যারেট সোনার মতো। ষোলো আনা খাঁটি”।
এদিন ইস্তেহার প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, বিজেপির এই ইস্তেহারের জন্য এখন সাংবাদিক থেকে শুরু সমাজের সব শ্রেণির মানুষ আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করে থাকে। কারণ, বিজেপি ভোটের ইস্তেহারের শুচিতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। ইস্তেহারে ঘোষণা করা সঙ্কল্প বাস্তবে রূপ দিয়েছে। তাই এ শুধু ইস্তেহার নয়, এ হল সঙ্কল্পপত্র।
এই সঙ্কল্পের মূল বিষয় ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, যে চার মূল স্তম্ভের উপর এই সঙ্কল্পপত্র তথা তাঁর গ্যারিন্টি দাঁড়িয়ে রয়েছে তা হল-জ্ঞান, গরিব, যুব শক্তি, অন্নদাতা এবং নারীশক্তি। দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসে ভ্রষ্টাচারীদের ৪ জুনের পর জেলে পুরবে।”
ইস্তেহার প্রকাশ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সঙ্কল্পপত্রে গরিব কল্যাণের বহু যোজনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্পষ্ট বলা হয়েছে, ফের ক্ষমতায় এলে বিনামূল্যে রেশন ব্যবস্থা আরও পাঁচ বছর চালু রাখা হবে। সেই খাবার হবে পুষ্টিতে ভরা। যাতে শুধু পেট নয়, খেয়ে মনও ভরে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বয়স্কদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হল চিকিৎসার খরচ কোথা থেকে আসবে। এই চিন্তা মধ্যবিত্তের সবচেয়ে বেশি। তাই সঙ্কল্পপত্রে বলা হয়েছে, ৭০ বছর বয়সের বেশি আয়ুর সমস্ত মানুষকে আয়ুষ্মান যোজনার আওতায় আনা হবে। সূর্যঘর প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যে সাড়া পড়ে গেছে সারা দেশে। এই যোজনা আরও প্রসারিত করা হবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ তৈরি হলে মাশুল আর লাগবে না। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে রোজগার করতে পারবে। সেই সঙ্গে ইলেকট্রিক ভেহিকেল বিনামূল্যে চার্জিং করতে পারবে।মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে গত দশ বছরে নতুন উদ্যোগপতি তৈরি করা গিয়েছে বলে মোদী জানান। তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করা গিয়েছে। এতদিন মুদ্রা যোজনায় সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা ধার নেওয়া যেত। এবার সেই সীমা বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হবে।
বন্দে ভারত ট্রেনের বিস্তার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্দে ভারতের তিনটে মডেল চলবে, বন্দে ভারতের প্রসার আরও বৃদ্ধি পাবে। বন্দে ভারত স্লিপার, বন্দে ভারত চেয়ারকার আর বন্দে ভারত মেট্রো, এই তিনটি মডেলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইস্তেহারে, সেকথাও মোদী এদিন বলেন। তিনি বলেন, আমদাবাদ-মুম্বই বুলেট ট্রেন প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী দিনে উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত এবং পূর্ব ভারতে একটি করে বুলেট ট্রেন প্রকল্প শুরু করা হবে।
তবে এই ইস্তেহারে যে ভাবে নরেন্দ্র মোদীকে তুলে ধরা হয়েছে তাতে সংঘ পরিবার কি সন্তুষ্ট? এই প্রশ্ন ইস্তেহার প্রকাশের পর উঠেছে। লারণ ইস্তেহারে দলের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীকে। এটা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের নীতি নয়। তাহলে একদা সংঘ কর্মী মোদী কী এখন নিজেকে সংঘের ঊর্ধ্বে মনে করেন? এই প্রশ্নও উঠছে সংঘ পরিবারের একাংশের মধ্য। প্রশ্ন একটাই এভাবে দলের ঊর্ধ্বে মোদীকে তুলে ধরার ফলে মোদীর অবর্তমানে বিজেপির অস্তিত্ব থাকবে তো?