মহানগর ডেস্ক : রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় বুধবার রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল নিয়ে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ নাগাদ আবার রাজভবনে যাবেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রের খবর, আগের দিন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নালিশ করে রাজ্যপালের কাছ থেকে যে আশ্বাস পেয়েছিলেন, সে বিষয়ে কাজ কত দূর এগোল, তার খোঁজ নিতেই রাজভবনে যাচ্ছেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, অভিষেক কি রাজ্যপালের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন?
গত সোমবারও অভিষেক রাজভবনে গিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন। ওই দিন রাজভবন থেকে বেরিয়ে অভিষেক জানিয়েছিলেন, রাজ্যপাল তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। জানিয়েছেন, কমিশনের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে আবার রাজভবনে যাবেন বলে সোমবারই অভিষেক জানিয়েছিলেন, নির্বাচন কমিশনের বেশ কিছু পদক্ষেপের বিরোধিতা করে মঙ্গলবার রাজ্যপালকে একটি চিঠি লিখেছিলেন অভিষেক। কমিশনের কোন কোন কার্যকলাপে তৃণমূল আপত্তি তুলেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা ছিল ওই চিঠিতে। তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবার সেই চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কেও রাজ্যপালের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চান অভিষেক।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার অভিষেকের সঙ্গে রাজ্যপালের সাক্ষাতে জলপাইগুড়ির প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং তাতে দুর্গতদের পাশে রাজ্যের দাঁড়াতে চাওয়ার প্রসঙ্গ উঠতে পারে। কিছু দিন আগে জলপাইগুড়িতে আচমকা ঘূর্ণিঝড়ের বহু মানুষের ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। ভেঙে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি। লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় রাজ্য এই মুহূর্তে আদর্শ আচরণবিধি চলছে সারা দেশে। সেই কারণে ইচ্ছা থাকলেও জলপাইগুড়ির ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর তৈরি করতে পারছে না রাজ্য সরকার। অভিষেক বুধবার রাজ্যপালের কাছে সেই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অনুমতি চাইতে পারেন বলেও তণমূল সূত্রে খবর।
এ ছাড়াও বুধবার সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে এনআইএ-র প্রসঙ্গও তুলতে পারেন অভিষেকের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবারই অভিষেক এনআইএ-র এসপি ধনরাম সিংহের বদলির দাবি জানিয়েছিলেন। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে বিজেপির আঁতাতের অভিযোগ করেছিলেন তিনি। অভিষেকের দাবিতে উঠে আসে ধনরাম সিং-এর নিউটাউনের বাড়িতে বিজেপি নেতা জীতেন্দ্র তিওয়ারির যাওয়ার বিষয়টি। এই সব কিছু নিয়েই সোমবার রাজভবনে অভিযোগ জানিয়ে এসেছিলেন অভিষেক। তৃণমূলের এই দাবি রাজ্যপাল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে কতটা পৌঁছে দিয়েছেন তার “ফলোআপ” করতেই বুধবার অভিষেক দলবল নিয়ে ফের রাজভবনে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে সোমবার নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের ১০ জনের প্রতিনিধি দল। কমিশনের কাছে নিজেদের অভিযোগ এবং দাবি জানিয়ে কমিশনের দফতরের বাইরে এসে ধর্নায় বসে তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণনূলের সেই ধর্না দিল্লি পুলিশ জোর করে তুলে দেয়, তৃণমূল নেতাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ওই দিনই রাতে তৃণমূল সাংসদ ও প্রতিনিধিদের তৃণমূলের অমৃত মার্গ থানা থেকে পুলিশ ছেড়ে দিলে তাঁরা থানার বাইরে ইডি, সিবিআই,এনআইএ,আইটি-র চার শীর্ষ কর্তাকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভে বসেন। তৃণমূলের অভিযোগ, ‘হেনস্থা’ করা হয়েছে তাঁদের। দিল্লির এই ঘটনা নিয়েও সোমবার রাতে কলকাতায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন অভিষেক-সহ তৃণমূলের ১১ জন নেতানেত্রী। ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে আবার সেই একই অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলের রাজভবনে যাওয়ার কর্মসূচি দেখে ীাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, আসলে রাজ্যপালের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন অভিষেকরা।