মহানগর ডেস্ক : শওকত মোল্লাকে যেদিন ভাঙড়ের দায়িত্বে আনা হল তৃণমূলের তরফে সেদিনই আরাবুল ইসলাম আশঙ্কা করেছিলেন, এবার তাঁর ক্ষমতা যাওয়ার অপেক্ষায়। অবশেষে আরাবুলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারির আগে আরাবুল অভিযোগ করেছিলেন, “পুলিশ আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। আমি খুন হয়ে যেতে পারি।” এই অভিযোগের পর আরাবুল পুলিশের জালে ধরা পড়েন। যে আরাবুল পুলিশের নামে সেদিন তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ করেছিলেন, এবার সেই আরাবুলের আইনজীবী আদালতে জানালেন, তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লার প্ররোচনায় আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের হয়েছে। প্রসঙ্গত এই আরাবুল ইসলাম এবং শওকত মোল্লা দু’জনই তৃণমূলের নেতা, আরাবুল প্রাক্তন বিধায়ক শওকত বতমান বিধায়ক। তাহলে কি এখন আরাবুলের বিরুদ্ধে তৃণমূল দল এবং তৃণমূল প্রশাসন সরব? এই প্রশ্নও উঠছে তৃণমূলের অন্দরে।
ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে কতগুলি মামলা রয়েছে, রাজ্যের কাছে সেটা জানতে চায় কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের নির্দেশ, আরাবুলের বিরুদ্ধে কতগুলি মামলা দায়ের হয়েছে এবং কতগুলিতে চার্জশিট পেশ হয়েছে, আট দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে রাজ্যকে। আগামী ১৬ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন আরাবুলের স্ত্রী জাহানারা বিবি। তাঁর অভিযোগ, লোকসভা ভোটের আগে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে একের পর এক মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। এমনকি আরাবুল গ্রেফতারের পরেও নতুন নতুন অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। তাঁর আবেদন, আরাবুলের বিরুদ্ধে আর কতগুলি মামলা রয়েছে, পুলিশ তা জানাক। সোমবার আরাবুলের আইনজীবী সওয়াল করে জানান, তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লার প্ররোচনায় আরাবুলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলাতেই সব মামলার তথ্য এবার আদালত চাইল।
এদিকে আদালতে আরাবুল ইসলাম আরও অভিযোগ করেন, তাঁকে একটি মামলায় গ্রেফতারের পরেও কিছু দিন আগে আরও দু’টি মামলায় পুলিশ যুক্ত করেছে। লোকসভা ভোট সামনেই। তৃণমূল নেতার দাবি, তাঁকে ভোটের আগে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার আরাবুল তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেই বিচারপতিই এ বার জানতে চাইলেন রাজ্যের কাছে যে, আরাবুলের বিরুদ্ধে ক’টি মামলা রয়েছে।
লক্ষণীয় ঘটনা হচ্ছে আরাবুল ইসলাম এবং শওকত মোল্লা দু’জনই তৃণমূলের নেতা। এই আরাবুলই ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের মহিলা অধ্যক্ষের গায়ে জলের জগ ছুঁড়ে মেরেছিলেন। আরাবুল হছেন তৃণমূলের “তাজা-নেতা”, তবে এখন দলের কাছে তিনি “তাজা নেতা”, আছেন কি না সেটাই এখন প্রশ্ন! কারণ, যে তৃণমূলের নেতা আরাবুল ইসলাম, সেই তৃণমূলেরই অন্য এক নেতা শওকত মোল্লার বিরুদ্ধে এখন আদালতে আরাবুলের আইনজীবী প্ররোচনার অভিযোগ করল। তাহলে ভাঙড়ের তৃণমূলের দায়িত্বে শওকত মোল্লা আসার দিনই আরাবুল তাঁর বিরুদ্ধে যে চক্রান্তের অভিযোগ করেছিল,তাই সত্যি হল?