মহানগর ডেস্ক : সুপ্রিম কোর্টে এসএসসি মামলার শুনানি শুরু হল সোমবার। গত ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬ সালে এসএসসির সম্পূর্ণ নিয়োগের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দেয়। কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ে প্রায় ২৬ হাজার জন চাকরিচ্যুত হন। এর পরই রাজ্য সরকার, এসএসসি ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে যায়। সোমবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর এজলাসে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। কেন সুপারনিউমেরারি পোস্ট তৈরি করা হল? রাজ্যকে প্রশ্ন করে সুপ্রিম কোর্ট। তারপর রাজ্যের আইনজীবীদের আবেদনে
অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে সিবিআই তদন্ত সংক্রান্ত কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে আগামী সোমবার পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল শীর্ষ আদালত। তবে ২৬ হাজার জনের চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্তের উপর কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ আজ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। আগামী সোমবার ফের এই মামলার শুনানি হবে। ফলে যোগ্য-অযোগ্যদের চাকরি বাতিলের নির্দেশই বহালই রইল শীর্ষ আদালতে।
শীর্ষ আাদালতে শুনানির নির্যাস:-
• চাকরিহারাদের আইনজীবীর বক্তব্য, নির্বাচনের ডিউটিতে আছেন অনেকেই। মামলার স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক।
• এদিন কমিশন যোগ্য অযোগ্য বাছাইয়ের বিষয়ে বলায়, বিচারপতি প্রশ্ন করেন- ওএমআর শিট তো সম্পূর্ণ নষ্ট। তাহলে কীভাবে আপনারা কারা যোগ্য সেটা আলাদা করবেন?
• আদালত আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানি করবে। কত ভাগে এই মামলা ভাগ করা যায়, দেখা হতে পারে তা।
• কমিশন সওয়াল করে, ‘আমরা বলতে পারি কারা অযোগ্য, কারা যোগ্য। সিবিআই সেটা করতে পারে না।’
• এদিন শুনানিপর্বে চাকরিহারাদের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, হাইকোর্ট তাঁদের নিয়োগ করেনি। তাহলে কীভাবে চাকরি কেড়ে নিতে পারে? প্রত্যেকের পরিবার আছে। প্যানেল বাতিলের যে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্ট দিয়েছিল, সেখানে কোনও স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দেয়নি। ফলে চাকরি বাতিলের যে নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্ট দিয়েছিল তা আপাতত বহালই রইল। সোমবার ফের এই মামলা শুনবে শীর্ষ আদালত।
• সুপার নিউমেরারিতে সিবিআই তদন্ত নিয়ে আংশিক স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী সোমবার পর্যন্ত আংশিক স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ বলেছিল, এই পোস্ট তৈরির ক্ষেত্রে যে সমস্ত ক্যাবিনেট সদস্য রয়েছেন চাইলে সিবিআই ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। এই অংশেই স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
• পরবর্তী সোমবার ফের মামলা শুনবেন প্রধান বিচারপতি।
• স্থগিতাদেশের আবেদনের বিরোধিতা করেন বিকাশ ভট্টাচার্য।
• নির্বাচনের কাজে রয়েছেন শিক্ষকরা, তাই স্থগিতাদেশ চায় রাজ্য।
• অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি জানান, ‘আমরা যোগ্য অযোগ্যদের আলাদা করতে প্রস্তুত’।
• সুপার নিউমেরারি পোস্টে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে রাজ্য।
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “কলকাতা হাই কোর্টের ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে অনুনয়বিনয় করা হয়, তবে শীর্ষ আদালত সেই আবেদনে সারা দেয়নি।
টদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ” ওএমআর যেখানে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সেখানে যোগ্য অযোগ্যদের আলাদা করা হবে কি করে? এটা একটা বড় রকমের জালিয়াতি। প্যানেলে নাম নেই তবুও চাকরি, ওএমআর শিটের কপি না রেখে কেন সব ওএমআর শিট নষ্ট করে দেওয়া হল? এটা একটা বড় রকমের জালিয়াতি।”
এর আগে রাজ্যের তরফে এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেছিলে অযোগ্যদের সংখ্যা ৫ হাজার। সোমবার সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান সিবিআই বলেছে, অযেগ্যদের সংখ্যা ৮ হাজার।
শীর্ষ আদালতে এদিন রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা অনুনয়বিনয় করে বলেন, “এখন ভোট চলছে। এই অবস্থায় যদি কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের ফলে সুপার নিউমেরিক পোস্ট তৈরি করার জন্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের সিবিআই হেফাজতে নেয় তাহলে কি পুরো রাজ্য মন্ত্রিসভা জেলে থাকবে?” এর পরেই শীর্ষ আদালত কলকাতা হাই কোর্টের এই রায়ে সোমবার পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেয়। তবে দেশের প্রধান বিচারপতি রাজ্যের এই এসএসসি নিয়োগ পদ্ধতিকে বড় রকমের জালিয়াতি বলে সমালোচনা করেন। কেন ওএমআর শিট নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন এর পর কি ভাবে যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব?