Home Politics বেড়েই চলেছে জনবিচ্ছিন্ন সিপিএমে অস্তিত্বের সঙ্কট, আস্থা হারাচ্ছে বঙ্গের মানুষ?

বেড়েই চলেছে জনবিচ্ছিন্ন সিপিএমে অস্তিত্বের সঙ্কট, আস্থা হারাচ্ছে বঙ্গের মানুষ?

by Mahanagar Desk
2 views

মহানগর ডেস্ক:   জন বিচ্ছিন্নতা না গণ মোহভঙ্গ ?

চৌত্রিশ বছর রাজ্য শাসন করা সিপিএমের কী হল? দলের এমন হাল যে হবে, তা কি মৃত্যুর আগে দলের চাণক্য অনিল বিশ্বাস বুঝতে পেরেছিলেন? না জ্যোতি বসু ভেবেছিলেন। নাকি অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য টের পেয়েছিলেন। ব্রিগেডের শেষ সভা কানায় কানায় ভরে ওঠা দৃশ্যের প্রতিফলন দেখা যায়নি বিধানসভা ভোটের ব্যালট বক্সে। মানুষ তাদের পক্ষে ন্যূনতম রায় দেননি। হিসেবমতো দলছুট রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়ে গিয়েছে তারা।

রাজ্যে এখন জ্বলন্ত ইস্যুর ছড়াছড়ি। কিন্তু সেই ইস্যুগুলিকে  কাজে লাগাতে ব্যর্থ মার্কসবাদী গল। একসময় ময়দান কাঁপানো গর্জন,প্রতিবাদের দলের অস্তিত্ব এখন ডোডো পাখির মতো বিলুপ্ত প্রায় পাখির মতো হয়ে যেতে শুরু করেছে। প্রতিবাদ মিছিল এখন হচ্ছেই, কিন্তু সেই প্রতিবাদ-মিছিলের আলো কেড়ে নিয়েছে বিজেপি। স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মেরুকরণ। একদিকে শাসকদল, আরেকদিকে বিজেপি। শাসক বিরোধী বিক্ষোভ, প্রতিবাদে বাংলাকে ব্যতিব্যস্ত করা গেরুয়া শিবিরই গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী শক্তি হয়ে উঠেছে। সেখানে একসময়ের শাসক সিপিএম যেন প্রান্তিক দল হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের হালও তথৈবচ।

তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠায় তেমন ধার নেই। তাদের প্রতিবাদ বাংলার মানুষের মনে কোনওরকম রেখাপাত করছে না। আর অন্যদিকে একসময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজনৈতিক দলকে দূরবিন দিয়ে খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে। পথসভা, মিছিল, মিটিংয়ে ভিড় নেই। সেখানে মুষ্টিমেয় কমিউনিস্ট ভক্ত থাকেন বটে, তবে সাধারণের মধ্যে সিপিএমকে নিয়ে কারোরই কেমন আগ্রহ চোখে পড়ছে না। চৌত্রিশ বছরের শাসনের রাশ হাতছাড়া হওয়ার পর সিপিএম এখন ক্রমশ রাজ্যে গুরুত্বহীন দল হিসেবে লিগ টেবলের একেবারে নীচের দিকে অবস্থান করছে। কেউ কেউ মনে করছেন এমন চলতে থাকলে বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষিত থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে চৌত্রিশ বছরের শাসকেরা।

এই জন-বিচ্ছিন্নতার কারণ কি? যাঁরা বাংলার রাজনীতি নিয়ে চর্চা করেন, তাঁদের অনেকের মতে, চৌত্রিশ বছরের শাসনে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের একটার পর একটা কাজ এ রাজ্যের মানুষকে তাদের সম্পর্কে বিষিয়ে দিয়েছে। যে বিষ তুলে ফেলা প্রায় অসম্ভব। সাতাত্তরে রাজ্যের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সিপিএম তথা বামফ্রন্টকে ক্ষমতায় এনেছিল তিতিবিরক্ত মানুষ। মানতেই হবে প্রথম দশ বছর টানটান শাসনে রাজ্যকে একটা সুস্থিতির জায়গায় দাঁড় করিয়েছিল সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। কিন্তু ওই দশ বছরই।

তারপর থেকেই বেনোজল ঢুকে পড়ছিল শাসক দলে। একটু একটু করে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের আনাচে কানাচে শুরু হয়েছিল সুবিধেভোগীদের চোরা গোপ্তা অনুপ্রবেশ। আর তখন থেকেই শাসকদলে একটু একটু ক্ষয় শুরু হয়েছিল। অনেকেই বলেন চৌত্রিশ বছরের শাসনে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট রাজ্যের মানুষের জন্য কিছু করেনি। না পারার ব্যর্থতার জন্য আঙুল তুলেছে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের দিকে। কখনও তহবিলে টাকা নেই, কখনও কেন্দ্রের দোষ বলে সব নেতিবাচক ব্যাপারে নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে ঢাকার চেষ্টা করেছিল। পাশাপাশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল দলকে সামনে রেখে

পেশিশক্তির আস্ফালন। নখ,দাঁত বের করে মানুষের ওপর অত্যাচারকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল,যা থেকে ক্রমশ মোহভঙ্গ শুরু হয়েছিল মানুষের, যাঁরা সাতাত্তরে তাদের সাদরে এনেছিলেন মহাকরণে। বিপর্যয়ের সেই শুরু। সেই ক্ষত এখনও সারেনি। তবে মাঝেমাঝেই প্রতিবাদ,গর্জন করে তারা সেই পরিচিত বিপ্লবী চেহারাকে সামনে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শাসকদল ও বিজেপির বিরুদ্ধে, যাদের নিয়ে একসময় তারা দেওয়াল লিখনে লিখেছিল-বিষবৃক্ষের দুটি ফুল, বিজেপি আর তৃণমূল। তখন কেন্দ্রে জোটসঙ্গী ছিল ঘাসফুল শিবির। আর সেই জোট থেকে সরে আসে যুযুধান দুই দল। এই মুহূর্তে পরস্পর নিন্দা কাদা ছোড়াছুড়ি না করলে ভাত হজম হয় না দু দলের। বিজেপির হাতে এখন শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একের পর এক অস্ত্র। সিপিএমও সেই অস্ত্র নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে। কিন্তু সেই অস্ত্র কতটা কাজে লাগাতে পারছে রাজ্য রাজনীতিতে একরকম ব্রাত্য হয়ে পড়া সিপিএম, সেই প্রশ্ন এখন বড় বেশি চর্চার বিযয় হয়ে উঠেছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে।

You may also like

Mahanagar bengali news

Copyright (C) Mahanagar24X7 2024 All Rights Reserved