মহানগর ডেস্ক: বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষ জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যা দীর্ঘদিনের। সংসার প্রতিপালন করতে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজের উদ্দেশ্যে রওনা দেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। কখনো আবার দেশের বাইরেও যেতে হয় কিছু বেশি টাকা উপার্জনের আশায়। সাধারণত ভিন রাজ্যে বা বিদেশে কাজে গিয়ে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয় পরিযায়ী শ্রমিকদের। সেই সময় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা বাড়ি ফিরতে পারলেও সমস্যা দূর হয় না।
সম্প্রতি মিজোরামের রেল ব্রিজ ভেঙে পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সেই দৃশ্যটাই। ২৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে প্রত্যেকেই বাংলার। একই পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কাজে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন। বাংলায় কাজের অভাব দীর্ঘদিনের। তাই রাজ্যে ছেড়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক পরিযায়ী হচ্ছেন কাজের সন্ধানে! বাংলায় কর্মসংস্থানের অভাব নিয়ে এবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব। বাংলা ভাত দিতে পারছে না। তাই পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্য রাজ্যে কাজে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে, বলছেন শুভেন্দু অধিকারী-সুকান্ত মজুমদাররা।
ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার নেপথ্যে যে কারিগরি ত্রুটি রয়ে গিয়েছে সেই প্রশ্ন কেউ তুলছে না। কে নেবে সেই দায়? ক্ষতিপূরণ দিলেই কি দায় ঝেড়ে ফেলা যায়? দিন দিন বাংলা থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। দুর্নীতির অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে বাংলায় ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার গ্যারেন্টি আইনের ২৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও রাজ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ধরা পড়লে কেন্দ্র সেই রাজ্যের জন্য বরাদ্দ বন্ধ করতে পারে। এদিকে বাংলায় জব কার্ড হোল্ডারের সংখ্যা ১ কোটি ৩৬ লক্ষ। এখন প্রশ্ন উঠছে, ১০০ দিনের কাজের টাকা না দেওয়া এবং কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্যই কি বাংলায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে?
এই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত গ্রাম উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানান, “একেবারেই তাই। ২০২০ সালে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে বাংলা ৩৪ কোটি শ্রমদিবস তৈরি করতে পেরেছিল। একুশের বিধানসভা ভোটের পর প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দিল”। তিনি আরোও বলেন, “বিজেপির যুক্তি ভিত্তিহীন। তারা বলছে, মহারাষ্ট্র, গুজরাতের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্য কর্মসংস্থানের বিপুল সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে। তাই যদি হয়, তাহলে মহারাষ্ট্রে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জব কার্ড হোল্ডারের সংখ্যা কেন ১ কোটি ৩১ লক্ষ? উত্তরপ্রদেশে জব কার্ড হোল্ডারের সংখ্যা কেন ১ কোটি ৮৩ লক্ষ? কেনই বা গুজরাতের মতো কম ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্যে ৯৩ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডার রয়েছেন। অর্থাৎ কেন এই রাজ্যগুলি অদক্ষ শ্রমিকদের কাজ দিতে ১০০ দিনের মতো প্রকল্পে ভরসা করছে!” মিজোরামে পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপিয়েছেন তিনি।
তবে প্রদীপ মজুমদারের পাল্টা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর সাফ জবাব, “আগে ১০০ দিনের চুরির হিসাব দিক, তার পর ঠিক টাকা পাবে। বাংলায় টাকা বন্ধের দায় তো তৃণমূলের”। এমনকি বাংলায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাকেও ভুল বলে দাবি করেছেন তিনি। বাংলায় শাসক দলের নেতাদের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয় ছয় আর অন্যদিকে কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দেওয়া। দুই মিলিয়ে সাঁড়াশি চাপে পড়েছে পরিযায়ী শ্রমিকেরা।