মহানগর ডেস্ক : মুর্শিদাবাদের বড়ঞায় রাতের অন্ধকারে বন্ধ স্কুলের পিছনে বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণ! বোমার আঘাতে এক জনের হাতের অংশ উড়ে গিয়েছে। গুরুতর জখম আরও এক জন। সকালে স্থানীয়রা হাতের কয়েকটি আঙুল ছিন্নভিন্ন অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। বুধবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানা এলাকার এই ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যদিও এক জন দুষ্কৃতীকেও আটক করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, যার হাত উড়ে গেছে, যাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সে তৃণমূল কর্মী। এদিকে মুর্শিদাবাদের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, বোমা বিস্ফোরণের কোনও খরব তাদের কাছে নেই। তাহলে স্থানীয়রা কি মিথ্যে কথা বলছেন? ঘটনাস্থলে তাহলে কার হাতের আঙুল পাওয়া গেল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানা এলাকার মোনাইকান্দারা গ্রামের বেশ কয়েক জন যুবক স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনের জঙ্গলে সকেট বোমা বাঁধার কাজ করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বাইরে থেকে আসা বোমা তৈরির দুই কারিগর। বোমার তীব্রতা বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট মাত্রার থেকেও বেশি পরিমাণ বারুদ ব্যবহার করা হচ্ছিল। অতিরিক্ত গরমে যা থেকে বিস্ফোরণ ঘটে বলে দাবি পুলিশ সূত্রের। বিস্ফোরণের অভিঘাতে গুরুতর জখম হন দুই যুবক। মোনাইকান্দারা গ্রামেরই বাসিন্দা জিন্নাত আলি শেখ নামে ১৯ বছরের এক কলেজ পড়ুয়া যুবকের হাতের বেশ কয়েকটি আঙুল উড়ে গিয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। সেই আঙুলই রাস্তায় ছড়িয়ে আছে বলে ধারণা গ্রামবাসীদের। পুলিশ পৌঁছতে পৌঁছতে এলাকা থেকে গা ঢাকা দেয় দুষ্কৃতীরা। পুলিশ ঘিরে রাখে গোটা এলাকা। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদেরও ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত, যে স্কুলের পিছনের জঙ্গলে বোমা বাঁধা হচ্ছিল, ভোটের সময় সেখানেই বসে ভোটকেন্দ্র।
স্থানীয়দের দাবি, বিস্ফোরণের পরে আহতদের নিয়ে এলাকা থেকে গা ঢাকা দেয় দুষ্কৃতীরা। বিস্ফোরণের কথা স্বীকার করলেও, আহত জিন্নাত এখন কোথায়, সে ব্যাপারে কিছু জানাতে চায়নি তাঁর পরিবার। জিন্নাতের আত্মীয় মোজাম্মেল মণ্ডল বলেন, ‘‘খাওয়াদাওয়া সেরে জিন্নাত বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। তার কিছু ক্ষণ পরে প্রচণ্ড শব্দ হয়। খবর পাই বোমা বিস্ফোরণে অনেকে আহত হয়েছে। জিন্নাতের হাত উড়ে গেছে। আমরা গিয়ে কাউকে দেখতে পাইনি। কোথায় আছে, কারা নিয়ে গিয়েছে কিছুই জানি না। কলেজ পড়ুয়া একটি ছেলেকে প্রলোভন দেখিয়ে এ রকম খারাপ কাজে যারা নিযুক্ত করেছে তাদের আগে গ্রেফতার করুক পুলিশ।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণের প্রমাণ মিললেও কোনও বোমা উদ্ধার হয়নি। বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করাই এখন পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণত, কেউ আহত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, বোমা ফেটে আহত হয়েছেন অন্তত দু’জন, তারা তৃণমূল করে। কিন্তু এলাকার কোনও হাসপাতালেই বিস্ফোরণে আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়নি। ফলে পুলিশের কাছেও আহতদের চিহ্নিত করা বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে কি গোটা বিষয়টাকে আড়াল করতে এটা কোনও নতুন কৌশল? এর ফলেই কি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বোমার আঘাতে হাত উড়ে যাওয়া তৃণমূল কর্মীকে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে হাসপাতালে না নিয়ে? পুলিশ কি পারবে দুস্কৃতীদের খুঁজে বার করতে?