মহানগর ডেস্ক : সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় শেখ শাহজাহানের অস্ত্র ভান্ডার থেকে অসংখ্য দেশী,বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ, হাত বেমা উদ্ধার হল। যে পদ্ধতিতে এই অস্ত্র উদ্ধার হল তা সেই ঘটনার সঙ্গে তুলনীয় যা আমরা টানটান উত্তেজক সন্ত্রাসবাদী মোকাবিলার অপারেশনের সিনেমায় দেখে থাকি। তবে হ্যাঁ, শুক্রবার চর্মচোক্ষে সন্দেশখালি তথা গোটা বাংলা মানুষ সেই ঘটনার সাক্ষী রইল। সারা বাংলার মানুষ টিভি চ্যানেলে এনএসজি, রোবোট, সিবিআই, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সন্দেশখালির সরবেড়িয়ার রহস্যজনক বাড়ি ও সেই বাড়ি সংলগ্ন মাটির বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের টানটান এই অপারেশন দেখল। বাংলার রাজনীতি কি বাস্তব আর সিনেমার পর্দাকে এক জায়গায় নিয়ে চলেছে? এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করল এই ঘটনার পর।
উঠবে নাই বা কেন? সন্দেশখালিতে সিবিআই, এনএসজি রীতিমতো এক্সপ্লোসিভ অর্ডিন্যান্স ডিসপোজাল রোবোট নিয়ে সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় বিস্ফোরক নিস্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া শুরু করে টানা আড়াই ঘণ্টা চালাল সেই প্রক্রিয়া। এই এক্সপ্লোসিভ অর্ডিন্যান্স ডিসপোজাল রোবোট সন্দেহজনক সেই মাটির বাড়িতে ঢুকল, সেখান থেকে একটা ব্যাগ উদ্ধার করে এনএসজি কমান্ডোদের তৈরী একটি নির্দিষ্ট স্থানের থেকে ৫০ মিটার দূরত্বে রেখে দিল। বালির বস্তা দিয়ে ভেড়ির পারে নিরাপদে আগেই এনএসজি কমান্ডোরা ঘিরে ফেলেছিল। যেখানে রোবোট ওই ব্যাগটি রাখে সেখান থেকে ৫০ মিটার দূরের সেই স্থান, যেখানে বালির বস্তা দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। সম্ভবত এখানেই বিস্ফোরক নিস্ক্রিয় করা হবে। এই জায়গা থেকে। Cable বা তার ২০০ মিটার দূরে নিয়ে গেলেন এনএসজি কমান্ডোরা। তারপর রোবোটের রেখে দেওয়া ব্যাগটির সামনে গেলেন এনএসজি-র বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের এক বিশেষজ্ঞ। তিনি সম্ভবত বিস্ফোরক নিস্ক্রিয় করার ব্যবস্থা চূড়ান্ত ব্যবস্থা করলেন। তারপর এনএসজি-র ওই কমান্ডো দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন, মাঝে মাঝে রোবোটের উদ্ধার করা ব্যাগটির সামনেও তিনি পৌঁছে যান এবং আবার দূরে সরে যান। দুপুর থেকে টানা প্রায় চার ঘণ্টা ধরে এই কাজ সিবিআই, ইডি, এনআইএ এবং এনএসজি এই ভাবে বোমা নিস্ক্রিয় করার কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। এনএসজি কমান্ডার একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে নীল আলো জ্বালিয়ে কোনও সংকেত দলের অন্য কমান্ডোদের দিতে দিতে যেখানে রোবোটটি ওই ব্যাগটি রেখেছে, সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন। ক্রমে তিনি বিস্ফোরক নিস্ক্রিয় করার যে জায়গায় তিনি ছিলেন, সেখান থেকে অন্য এনএসজির কমান্ডাররা যেখানে অপেক্ষা করছিলেন সেখানে চলে এলেন। দুপুর ২টো থেকে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি চলল সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত। তখনও কিন্তু এনআইএ, সিবিআই, ইডি, এনএসজি জানায়নি কত সংখ্যক বিস্ফোরক, অস্ত্র, বিদেশী অস্ত্র, বোমা, কার্তুজ তারা উদ্ধার করল এবং নিস্ক্রিয় করতে পারল কি না। এবার অপেক্ষার পালা।
এরই মধ্যে শুভেন্দু অধিকারী বললেন, “সন্দেশখালিতে এনএসজি বিদেশী অস্ত্র উদ্ধার করছে। তৃণমূল নেতাদের বাড়ি থেকে আরডিএক্স উদ্ধার হচ্ছে। আমরা এনআইএ, সিবিআই, ইডি দেখেছি, এবার এনএসজি দেখলাম। এরপর কি আর্মি দেখবে বাংলা? এই ঠগি পিসি রাজ্যকে কোথায় নিয়ে গেলেন? তৃণমূলকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে নিতে হবে, আমি বিরোধী দলনেতা হিসাবে এই দাবি করছি।”
এদিকে কুণাল ঘোষ এই “ঘটনাকে সুসজ্জিত বিস্ফোরক কাণ্ড”, বলে মন্তব্য করলেন।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা, তাও এনএসজি, এনআইএ, সিবিআই, ইডি জানাল না বা সংবাদ মাধ্যম জানতে পারল না সন্দেশখালিতে কত সংখ্যক বিদেশী অস্ত্র, বিস্ফোরক, বোমা, কার্তুজ ভেড়ির পাশের ওই বাড়ির মেঝে খুড়ে পাওয়া গেছে বা তার পাশের মাটির বাড়ি থেকে ওই অত্যাধুনিক রোবোট কতটা শক্তিশালি এবং কত পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করতে পারল বা আদৌ বিস্ফোরক নিস্ক্রিয় করা গেল কি না!
অবশেষে সিবিআই এদিন সন্ধ্যা সাতটা ২০ নাগাদ প্রেস রিলিজে জানিয়ে দেয় তিনটে বিদেশী রিভলভর, একটি কোল্ড অফিসিয়াল পুলিশ রিভলভর, তিনটি দেশী রিভলভর, ৩৫০টি কার্তুজ, ১২০টি ৯এমএম কার্তুজ, কিছু দেশী বোমা, শেখ শাহজাহান সম্পর্কিত কিছু তথ্য, শেখ শাহজাহানের আইডি কার্ড এবং কিছু রশিদ পাওয়া গেছে সন্দেশখালির ওই বাড়ি থেকে। শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডি গত ৫ জানুয়ারি তল্লাশি করতে গেলে যখন আক্রান্ত হয় তখনই ইডি বলেছিল কিছু আড়াল করতে শাহজাহান বাহিনী তাদের আক্রমণ করেছে। শুক্রবার সিবিআই, এনএসজি অভিযান চালিয়ে এবার ইডির সন্দেহ সত্যি প্রমাণ করল, উদ্ধার হল শেখ শাহজাহানের অস্ত্র ভান্ডার। তারেও ওই বাড়িতে সিবিআই, এনএসজি স্নিফার ডগ দিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ কেন এই অস্ত্রের সন্ধান পেল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।