মহানগর ডেস্ক: আদানি-আম্বানী ইস্যুতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসকে তেলেঙ্গানার জনসভা থেকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তবে সেই ঘটনার পর ২দিন অতিক্রান্ত। এখনও “মোদী কা পরিবার”-এর কোনও সদস্য অর্থাৎ কোনও বিজেপি নেতা এই ইস্যুতে মুখ খোলেননি। অথচ এতকাল যেটা দেখা গেছে মোদী বিরোধীদের কিছু বললেই সেই সুরে সুর মিলিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে পড়েন বিজেপির বড়, ছোট, মেজ নেতানেত্রীরা, তবে এই ইস্যুতে তাঁর আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব। তাহলে কি আদানি-আম্বানী ইস্যুতে রাহুলের সমালোচনা করে মোদী যা বলেছেন তাতে দলের সায় নেউ? আপাতভাবে বিজেপি দলের এই ইস্যুতে নীরবতা দেখে সেটাই মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা।
বুধবার তেলঙ্গানার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রশ্ন তুলেছিলেন, গত পাঁচ বছর অম্বানী-আদানীর কথা বলার পরে ভোট আসতেই কেন চুপ করে গেলেন রাহুল? তাঁদের কাছ থেকে রাহুল কত টাকা পেয়েছেন? টেম্পো ভরে কত ঝুলি কালো টাকা কংগ্রেসের কাছে পৌঁছেছে? কিন্তু আর কোনও বিজেপি নেতার মুখে এই কথা শোনা যায়নি।
রাহুলের নেতৃত্বে বুধবার থেকেই কংগ্রেস মোদীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছে, প্রধানমন্ত্রী যদি জেনে থাকেন, শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী ও গৌতম আদানির কাছে কালো টাকা রয়েছে, তা হলে তিনি ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতরকে পাঠাচ্ছেন না কেন? সিপিআই সাংসদ বিনয় বিশ্বম নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে একই দাবি জানিয়েছেন।
কংগ্রেসের দাবি, রাহুলের চাপেই বাধ্য হয়ে মোদীকে তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই শিল্পপতিকে নিশানা করতে হচ্ছে। আদানিদের চার্টার্ড বিমানে মোদীর ছবি নিয়েও কংগ্রেস এবার প্রচারে নেমেছে। কংগ্রেসের দলীয় মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেছেন, ‘‘আগে কখনও প্রধানমন্ত্রীর এত দুর্বল ও মরিয়া ভাব দেখা যায়নি। তিনি নিজেই এখন বন্ধু শিল্পপতিদের কালো টাকার কথা বলছেন।’’
এদিকে রাহুল মোদীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, টেলিপ্রম্পটারেরও মিথ্যে বলার সীমা আছে কিন্তু মোদীর মিথ্যা বলার কোনও সীমা নেই। ভিডিয়ো-বার্তায় যুব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে রাহুল বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর হাত থেকে ভোট বেরিয়ে যাচ্ছে। আগামী ৪-৫ দিনে তিনি আপনাদের নজর ঘোরাতে কোনও না কোনও নাটক করবেন। তাঁর মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। ৪ জুন ইন্ডিয়া জোটের সরকার আসছে। কথা দিচ্ছি, ১৫ অগস্টের মধ্যে আমরা ৩০ লক্ষ সরকারি চাকরির শূন্য পদে নিয়োগের কাজ শুরু করব।’’
তবে মোদীর এই উক্তি নিয়ে বিজেপি এখনও নীরব। উল্টে তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাই সাফাই গেয়ে বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস ২০১৯ থেকে শিল্পপতিদের দুর্নাম করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী আসলে বলতে চেয়েছেন, এত দিন যখন রাহুল গান্ধী বিজেপির বিরুদ্ধে শিল্পপতিদের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলছিলেন, এখন তা হলে চুপ করে যাওয়ার জন্য তিনি কত টাকা নিয়েছেন, সেটা বলুন, এর মধ্যে অন্য কিছু নেই।’’
বৃহস্পতিবার মোদীর কোনও জনসভা ছিল না। জে পি নড্ডা, অমিত শাহের জনসভা থাকলেও কারও মুখে মোদীর আদানি-আম্বানিকে টেনে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ শানাবার পুনরাবৃত্তি বা প্রতিধ্বনি শোনা যায়নি।
এদিকে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের প্রশ্ন করেছেন, ‘‘আজ টেম্পো ধীরে চলছে কেন? মিথ্যের রাজা নরেন্দ্র মোদী কিছুই বললেন না! তিনি নিজের দুই বন্ধুর কালো টাকা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলার পরে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন?”
কংগ্রেস সহ গোটা দেশের বিজেপি বিরোধীরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদী বুঝেছেন, তাঁর চলে যাওয়ার সময় আসন্ন, তাই তিনি নিজে বিভ্রান্ত হয়ে এসব কথা বলছেন। আসলে কোনও ভাবেই তিনি হিসেব মেলাতে পারছেন না।