মহানগর ডেস্ক: ওয়ার্ক ফ্রম হোমের চাকরির মেসেজ এসেছিল হোয়াটস অ্যাপে। আর সেই ইউটিউব প্রতারণার শিকার হলেন (You Tube Video Like Job Fraud) গ্রেটার নয়ডার একটি বহুতলের মহিলা বাসিন্দা। হোয়াটস অ্যাপে ইউটিউবে আসা ভিডিও দেখে লাইক করে সাবস্ক্রাইব করতে হবে। তারপর তাঁকে মোটা লাভের টোপ দিয়ে ন্যাসড্যাক নামে একটি ভুয়ো ওয়েবসাইটে বিনিয়োগ করতে বলে। ওই লিঙ্কে মহিলাকে টাকা পাঠাতে বলা হয়। ওই লিংকে টাকা পাঠাতে থাকেন তিনি। এরপর মোটা প্রাপ্তির আশায় ৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে সে টাকাও ওই লিংকে পাঠান ওই মহিলা। গ্রেটার নয়ডা ওয়েস্টের পঞ্চশীল হাইনিস সোসাইটির বাসিন্দা কার্তিকা জানিয়েছেন প্রতারকরা তাঁর কম্পিউটারে একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে। কার্তিকা জানান গত ৬ এপ্রিল তিনি তাঁর মোবাইলে পার্ট টাইম কাজের প্রস্তাব পান। তাতে জানানো হয় তাঁকে একটি কাজ দেওয়া হবে। সেখানে ইউটিউবে ভিডিও দেখার কথা জানানো হয়। সেই ভিডিও লাইক এবং সাবস্ক্রাইব করতে হবে। এরপর প্রতারকরা তাঁকে একটি টেলিগ্রাম হ্যান্ডেলের সঙ্গে যুক্ত করে। এরপর টেলিগ্রামে কাজের জন্য প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা দেবে বলে প্রস্তাব দেয়।
যে তিনটি ভিডিও লিংক পাঠানো হয়েছিল, সেগুলো লাইকড ও সাবস্ক্রাইব করার জন্য প্রথম পারিশ্রমিক বাবদ দেড়শো টাকা মহিলার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। পরের তিনটি ভিডিও লাইক ও সাবস্ক্রাইব করার জন্য আবার দেড়শো টাকা পাঠায় প্রতারকরা। কার্তিকা জানান একজন গৃহবধূ হিসেবে কাজটা খুব সহজ লেগেছিল এবং এরকম কাজ করলে তাঁর তিন বছরের ছেলেকে যত্ন করতে কোনও অসুবিধে হবে না। প্রতারকরা আমেরিকার ন্যাসডাক ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে বলে। সেই লিংকটি তাঁকে পাঠানো হয়। এরপর তাঁকে ন্যাশডাকে দু হাজার টাকা জমা দিতে বলে। তারপরই ওইদিনই লভ্যাংশ হিসেবে ৩,১৫০ টাকা ফেরত দেওয়া হয়। এরপর সাইবার প্রতারকরা তিনটি বাধ্যতামূলক কাজ দেয়। কার্তিকা তাদের তিন দফায় পাঁচহাজার, তিরিশ হাজার ও নব্বই হাজার টাকা পাঠায়। কিন্তু কোনও টাকাই ফেরত পাননি কার্তিকা। তাঁকে প্রতারকরা জানায় যে তিন নম্বর কাজটি দেওয়া হয়েছে, সেটি ভুল হয়েছে। এরপর মহিলাকে নতুন দুটি লেনদেনের কাজ দেয়। সেখানে তিনি ২,১৮,৪০০ ও ৩,৮১,২০০ টাকা পাঠান। প্রতিবারই তারা জানায় এটিই শেষ লেনদেন। এরপর তাঁর টাকা ফুরিয়ে যায় এবং প্রচণ্ডে আতঙ্কে ভুগতে থাকেন। টাকা ফেরতের আশায় কার্তিকা কিছু সময় চেয়ে নেন প্রতারকদের কাছ থেকে। এরপর স্বামীর নামে পার্সোনাল লোনের আবেদন করেন। তাদের আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়ার পর সমস্ত টাকা ফেরত চান কার্তিকা। দাবি জানানোর পর তাঁকে জানানো হয় তাঁর টাকার অঙ্ক দশ লাখেরও বেশি এবং পনেরো লক্ষ টাকা ফেরত পেতে আরও পনেরো লক্ষ টাকা দিতে হবে। প্রতারকরা জানান গোটা প্র্রক্রিয়া শেষ করতে তাঁকে ৩,৩৭,৬০০ টাকা দিলে সব টাকা ফেরত পাবেন। কার্তিকা জানান সেসময় তাঁরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং বুঝতে পারেন তাঁরা গত কয়েকঘণ্টায় আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন। তবে এরপর তাঁদের কাছ থেকে কর হিসেবে ৫,২০,০০০ টাকা চাওয়া হয়। তখনই কার্তিকা ও তাঁর স্বামী বুঝতে পারেন, তাঁরা সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ন্যাশডাক থেকে টাকা ফেরতের অনেক চেষ্টা করেও একটি টাকাও ফেরত পাননি তাঁরা। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একটি প্রতারণার মামলা রুজু করেছে। অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মালা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।