মহানগর ডেস্ক : বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী প্রতিবাদী কন্ঠ রেখা পাত্রর ব্যক্তিগত নথি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য। এই ঘটনায় জাতীয় মহিলা কমিশন এবং জাতীয় এসসি-এসটি কমিশনে দেবাংশুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান রেখা পাত্র। রেখা পাত্রর আইনজীবী অভিযোগে জানিয়েছেন, এসসি/এসটি প্রোটেকশন আইন ১৯৮৯ এর উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয়েছে, একজন মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল নাম্বার নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে দেবাংশু ভট্টাচার্য ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ আইন ও মৌলিক অধিকার আইন লঙ্ঘন করেছেন। দেবাংশুর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান হয়েছে কমিশনে। এদিকে এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “এই প্রকল্পে তাঁর মঙ্গল হচ্ছে বলে তো তিনি ফর্ম ফিলআপ করেছেন। একজন তৃণমূলের মঙ্গলকামী প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে তৃণমূলের বিরোধীতা করেন কি করে?”
কুণাল ঘোষের এই বক্তব্যের যোগ্য জবাব দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “স্বাস্থ্যসাথীর টাকা কি তৃণমূলের পৈতৃকসম্পত্তি?”
কুণাল ঘোষের এই যুক্তি একদিকে যেমন রাজতন্ত্রের, আধিপত্যবাদের প্রতিধ্বনি তেমনই অযৌক্তিক বলে সাধারণ মানুষের বক্তব্য। বিরোধীরা বলছেন, কুণালের যুক্তি মানলে তো জাতীয় সড়ক দিয়ে, রেল লাইল দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে না কোনও বিজেপি বিরোধী দল এবং মানুষ। এটা কোন আইন? তৃণমূল সরকারি প্রকল্পে রাজ্যের মানুষের জন্য সুবিধা প্রদান করতেই পারে। রাজ্যের যে কোনও বাসিন্দা রাজ্য সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতেউ পারে, সেটা তাদের নাগরিক অধিকার। কিন্তু কোন অধিকারে তৃণমূল বলে, রাজ্যের সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিলে তৃণমূলের বিরোধীতা করা যাবে না?
তৃণমূলের তরফে রেখা পাত্রর বিরুদ্ধে মূল বক্তব্য ছিল,তিনি স্বাস্থ্য সাথী-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তা। সেই সমস্ত নথি সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেছে তৃণমূল। পাশাপাশি, সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রেখা পাত্রর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করেছেন তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য।
এ বার দেবাংশু এবং সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর এই অভিযোগ নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিলেন রেখা। রেখা পাত্র প্রশ্ন তুললেছেন, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিয়েছে বলেই কি সবাইকে তৃণমূল করতে হবে নাকি? একই সঙ্গে বিজেপি বিষয়টি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। পাশাপাশি, তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের নামে রেখার আইনজীবী তফসিলি কমিশন এবং মহিলা কমিশনেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বুধবার দিনভর সন্দেশখালিতে প্রচার করেন রেখা। তার পর তিনি গিয়েছিলেন কল্যাণীতে। সেখানকার এমসে ভর্তি ছিলেন তাঁর কন্যা। সেখানে গিয়ে রেখাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুধবার রাতেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় এমস থেকে। এমস সূত্রে খবর, রেখার শরীরে জলের ঘাটতির কারণে তাঁর ‘ডিহাইড্রেশন’ হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা রেখাকে সাত দিন ‘বেড রেস্ট’ নেওয়ার পরামর্শ দেন। রেখার সেই অসুস্থতা নিয়ে মুখ খোলেন স্থানীয় বিধায়ক সুকুমার। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি, রেখা পাত্র অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য সাথী কার্ড রেখা পাত্রের আছে। শুধু তাই নয়, রেখা পাত্র লক্ষ্মীর ভান্ডারও পান। আমাদের দিদির সব প্রকল্প রেখা পাত্র পান। যাঁরা দিদির বিরোধিতা করছেন, তাঁরা একটু ভেবে দেখুন, দিদির স্বাস্থ্য সাথীর কার্ডেই কিন্তু রেখা পাত্রের চিকিৎসা হতে পারে।’’
সুকুমারকে পাল্টা জবাব দিয়ে রেখা বলেন, ‘‘তৃণমূল কি বলতে চাইছে যে, সরকারি সুবিধা নিতে গেলে তৃণমূল করতে হবে?’’ এর পরেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে এনে রেখা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যে সুযোগ-সুবিধাগুলো দেন পশ্চিমবাংলায়, তিনি কিন্তু এক বারও বলেননি যে, এই সুযোগ-সুবিধাগুলো পেতে গেলে বিজেপি করো। আর করোনা টিকা, যেটা নরেন্দ্র মোদী দিয়েছেন, যেটা নিয়ে বেঁচে আছেন তৃণমূলের নেতারা। এক বারও নরেন্দ্র মোদী বলেননি যে, আমি টিকা দিয়ে ওদের বাঁচিয়ে রেখেছি।’’ একই সঙ্গে বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী অভিযোগ করেন, ‘‘দিদির ভাইপো স্বাস্থ্য সাথীতে চিকিৎসা করান না। চিকিৎসা করাতে যান আমেরিকায়।’’
সরকারি উপভোক্তা হিসাবে রেখার যাবতীয় তথ্য বৃহস্পতিবার তৃণমূল সমাজমাধ্যমে দিয়েছে বলে অভিযোগ করে বিজেপি। তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যও একই তথ্য নিজের সমাজমাধ্যমে তুলে ধরে লেখেন, ‘‘বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের স্বাদ পেয়েছেন।’’
এর বিরুদ্ধে তফসিলি কমিশন এবং মহিলা কমিশনে দেবাংশুর বিরুদ্ধে রেখার আইনজীবী অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর দাবি, দেবাংশুর পোস্টে শালীনতা লঙ্ঘিত হয়েছে। এ ছাড়াও দেবাংশুর পোস্টে রেখার গোপনীয়তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলেও দাবি করেছেন রেখার আইনজীবী। আইনজীবী তাঁর মক্কেল রেখার তফসিলি এবং মহিলা পরিচয়ের কথাও অভিযোগের চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। এখন দেখার এই অভিযোগের ভিত্তিতে দেবাংশুর বিরুদ্ধে জাতীয় মহিলা কমিশন এবং তফসিলি কমিশন কি ব্যবস্থা নেয়।