মহানগর ডেস্ক : জলবায়ুর কৃত্রিম পরিবর্তনের জন্ঢ় তথাকথিত নগরায়ন, সভ্যতা দায়ী। বারংবার জলবায়ু পরিবর্তনে বিজ্ঞানী থেকে বিশেষজ্ঞ সকলেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বারংবার। সে কথা এখনও কেউ কানে তোলেননি। তাই ধ্বংসের কিনারায় এখন এসে দাঁড়িয়েছে বাস্তুতন্ত্র! এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রার পারদ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাও বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা কেউ কানেই তুলছেন না। প্রত্যেক বছরই বন্যায় ভেসে যাচ্ছে উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ। মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বানের প্রকোপও রয়েছে। এরই মাঝে উদ্বেগের কথা শোনাল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো।
ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ থেকে সৃষ্ট হ্রদের প্রসার ঘটেছে হু হু করে। শতাংশের হিসেবে এই বৃদ্ধি ৮৭%। কয়েক বছরে কিছু হ্রদের আয়তনও ফুলে ফেঁপে দেড় থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। একটি বা দু’টি হ্রদেই বিষয়টি থেমে নেই, আয়তন বেড়েছে ৬৭৬টি হ্রদের।
আরও উদ্বেগের বিষয় হল যে ৬৭৬টি হ্রদের আয়তন বৃদ্ধির হিসেব ইসরো জানিয়েছে তার মধ্যে ১৩০টি হ্রদই ভারতে অবস্থিত। ৬৫টি হ্রদ অবস্থিত সিন্ধু অববাহিকা অঞ্চলে, সাতটি অবস্থিত গাঙ্গেয় অববাহিকা অঞ্চলে, ৫৮টি অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অঞ্চলে। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে হ্রদগুলির ভৌগলিক অবস্থান নিয়ে। ৩১৪টি হ্রদ যেগুলি মুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০০-৫০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সেগুলির আয়তন বেড়েছে বিপজ্জনক ভাবে। মুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় অবস্থিত ২৯৬টি হ্রদ। ইসরো উদাহরণস্বরূপ হিমাচল প্রদেশের ঘেপাং ঘাট হিমবাহ হ্রদের কথা উল্লেখ করেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ এটি অবস্থিত ৪০৬৮ মিটার উচ্চতায়। ১৯৮৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১৭৮ শতাংশ শতাংশ এই হ্রদের প্রসার হয়েছে। আগে এই হ্রদটির অবস্থান ছিল ৩৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে। বর্তমানে এটির আয়জন বেড়ে হয়েছে ১০১ হেক্টর।
ইসরো গত তিন-চার দশক ধরে মহাকাশ থেকে কৃত্রিম উপগ্রহ একাধিক ছবি তুলে ও তথ্য সংগ্রহ করেছে। তার ভিত্তিতেই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বিপজ্জনক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে এই রিপোর্ট। ১৯৮৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে নদী অববাহিকায় কী কী পরিবর্তন ঘটেছে ইসরো রিপোর্টে তার বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করেছে। ২০১৬-২০১৭ সালে চিহ্নিত করা হয়েছিল ১০ হেক্টর আয়তনের ২,৪৩১টি হ্রদকে। কিন্তু ১৯৮৪ সাল থেকে এর মধ্যে ৬৭৬টি হ্রদের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে।
৬০১টি হ্রদের আয়তন দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০টি হ্রদের আয়তন ১.৫ থেকে ২ গুণ বেশি হয়েছে। ৬৫টি হ্রদের আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে ১.৫ গুণ।
ইসরো-র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সিন্ধু অববাহিকায় অবস্থিত ঘেপাং হ্রদে দীর্ঘ সময় ধরেই পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ১৯৮৯-২০২২ সালের মধ্যে হ্রদটির আয়তন ৩৬.৪৯ হেক্টর থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১.৩০ হেক্টর। অর্থাৎ গত তিন দশকে, হ্রদটির প্রতি বছর ১.৯৬ হেক্টর করে আয়তন বেড়েছে। ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, হিমবাহ গলে যেভাবে হ্রদের আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে জল বিস্ফোরণের সম্ভাবনা ক্রমে বেড়েই চলেছে। এতে সংলগ্ন এলাকার পরিকাঠামো, জনজীবন এবং পরিবেশের উপর বিরাট প্রভাব পড়তে পারে বলে ইসরো উদ্বেগ প্রকাশ করে লাগাতার নজরদারি চালানোর পাশাপাশি, ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও সতর্ক করছে। তবে শাসক দল থেকে সাধারণ মানুষ কারও সময় নেই ইসরো-র সতর্কবার্তা শোনার।