মহানগর ডেস্ক: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাগিং কাণ্ড ঘিরে তোলপাড় চলছে। ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল চলছে এ রাজ্যের আনাচে কানাচে। প্রতিদিনই প্রকাশ্যে আসছে নানা তথ্য। ইতিমধ্যে পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে আসরে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক মহল, সুধীসমাজও। দিকে দিকে চলছে প্রতিবাদ,বিক্ষোভ। আর এসব ঘটনার মধ্যেই ভারতের পাঁচটি হাড়হিম করা রাগিংয়ের ঘটনার কথা অনেকই হয়তো ভুলেই গিয়েছেন। আর সেই ঘটনাগুলি পৈশাচিক বর্বরতায় সারা দুনিয়াকে এক কথায় স্তব্ধ করে দিয়েছিল।
সব থেকে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৬ সালে, রাগিং কাণ্ডের শিকার তামিলনাডুর ১৯ বছরের পন নাভারাসুর টুকরো টুকরো দেহ সে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গিয়েছিল। নাভারাসু পড়তো চিদম্বরমে আন্নামালাইলা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজা মুতাইয়া মেডিকেল কলেজে। সে সিনিয়র ছাত্র জন ডেভিডের পাশবিক অত্যাচারের শিকার হয়। নাভারাসু জামাকাপড় খুলতে এবং ডেভিডের পায়ের চটি চাটতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর অকথ্য অত্যাচার করে ওই সিনিয়র ছাত্র।
পরে জানা যায় কলেজে ডেভিড বদরাগী হিসেবে পরিচিত ছিল। ডেভিডকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সে অপরাধের কথা স্বীকার করে। বিচারে তার পরপর দু বার যাবজ্জীবন সাজা হয়। ২০০১ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্ট তাকে খালাস দেয়। শুধু তাকে এক বছর জেলে থাকতে হয়েছিল। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দেওয়ার পর ডেভিডের জেল হয়। সেসময় ডেভিড একজন বিপিও কর্মী হিসেবে কাজ করছিল।
এরপরের ভয়ঙ্কর রাগিংয়ের ঘটনাটি হিমাচল প্রদেশে ঘটেছিল ২০০৯ সালে। উনিশ বছরের আমন সত্য কাচরু পড়তো ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ মেডিকেল কলেজে। সেখানে চারজন সিনিয়র ছাত্রের রাগিংয়ের কারণে আমনের মৃত্যু হয়। তার মাথায় প্রবল আঘাত লাগার ফলে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর একদিন আগে আমন তাকে রাগিং করার অভিযোগ জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ করেছিল।
অভিযোগে ওই চারজন সিনিয়র ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। আমন জানিয়েছিল মদ্যপ অবস্থায় ওই চারজন তেরোজন প্রথম বর্ষের ছাত্রকে জড়ো করে তাকে থাপ্পড় মারতে বলে এবং পরস্পর আঘাত করার কথা বলে। ভোর চারটে পর্যন্ত সেই কাণ্ড চলে। পরের দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সে জানায় তার মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে। সেইরাতেই তার মৃত্যু হয়। তার শরীরের ষাট শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
চারজনকে পুলিশ ধরলেও ২০১৩ সালে ভালো ব্যবহারের জন্য তারা মুক্তি পেয়ে যায়। চারজন সিনিয়র সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। তবে কোনও সরকারি চাকরি তারা পায়নি। তবে ভয়ঙ্কর রাগিংয়ের ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালে সতেরো বছরের আজমল পিএমের বেলায়। বেঙ্গালুরুর অ্যারোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওই ছাত্রকে রাগিংয়ের নামে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় সিনিয়ররা।
তবে যাদবপুরের আগেও কলকাতায় রাগিং সন্ত্রাসে এক ফার্মাসি ছাত্রের মৃত্যু হয়। সালটা ছিল ২০১৪। ক্যালকাটা ইনস্টিটিউট অব ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজির ওই ছাত্রের দেহ রেলের লাইনের ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তদন্তে জানা যায় সিনিয়র ছাত্রদের রাগিং ও প্রচণ্ড মারধরের ফলে কুড়ি বছরের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়।
এরপর রাগিংয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল দিল্লির নয়ডায় দিল্লির পাবলিক স্কুলে রাগিংয়ের জেরে ওই ছাত্রটির মৃত্যু হয়েছিল। সতেরো জন সিনিয়র ছাত্র তাকে লাঠি ও ধাতুর রড দিয়ে বেধড়ক মারধরের পর হাসপাতালে ওই ছাত্রটির মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর ছাত্রটির বাবা সতেরোজন সিনিয়র ছাত্রের মধ্যে ছজনের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেন ছাত্রটির বাবা।
জানা যায় স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে সিনিয়রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় তার প্রতিশোধ নিতে তার সঙ্গে নৃশংস অত্যাচার করা হয় বলে জানা গিয়েছিল। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত সিনিয়র ছাত্রদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তুলে নিতে মৃত ছাত্রটির বাবাকে অনুরোধ জানিয়েছিল।