Home Lifestyle রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কমে গেলে জানেন কি কি রোগ শরীরে দানা বাঁধে?

রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কমে গেলে জানেন কি কি রোগ শরীরে দানা বাঁধে?

by Mahanagar Desk
69 views
মহানগর ডেস্ক:  রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নেমে গেলে বা কমতে থাকলে বা একেবারে কমে গেলে দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কম পৌঁছয় যার জন্য একটু নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হয় । তাছাড়া দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে, শরীর ক্লান্তি অনুভব করে, এর পাশাপাশি শরীরে ঝিমানি, দুর্বলভাব,  হার্টের দ্রুত স্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, ফ্যাকাসে ত্বক এরম কিছু উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায়। রক্তের  অন্যতম উপাদান হল – লোহিত রক্তকণিকা। লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে একধরনের প্রোটিন থাকে, যা অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়। এই প্রোটিনটিই হল হিমোগ্লোবিন। দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কোষ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড বের করে নিয়ে আসে, এরপর সেই বিষাক্ত গ্যাস দেহের বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য, ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। সেই হিসেবে দেখলে হিমোগ্লোবিন এর মারাত্মক ভূমিকা রয়েছে। মানবদেহে বা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সতেজ তরতাজা স্বাস্থ্যকর রাখতে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ হিমোগ্লোবিন থাকা দরকার। হিমোগ্লোবিনের আবার দু’টি অংশ রয়েছে, হিম এবং গ্লোবিন। হিম অংশে উপস্থিত থাকে আয়রন। তাই হিমোগ্লোবিনের গঠনে আয়রনের ভূমিকা অপরিহার্য।
শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অতিরিক্ত নেমে গেলে শরীরের মধ্যে নানা রোগের উৎপত্তির আশঙ্কা বেড়ে যায়। শরীরে আয়রন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা দরকার তা নাহলে আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিনের স্তর নামতে থাকে। যার ফলে ক্লান্তিবোধ, মুখে ঘা হওয়া, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা অনুভব করা, অ্যানিমিয়া, হাত ও পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, ত্বকের রঙ পরিবর্তন হওয়া, পিরিয়ডসে অধিক ব্লিডিং হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া এরম অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরষের হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটার রক্তে- ১৪ থেকে ১৮ গ্রাম এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা, প্রতি ডেসিলিটার রক্তে -১২ থেকে ১৬ গ্রাম। এর থেকে কম হয়েগেলে আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রার পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব। খাদ্যাভ্যাসে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলেই রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানো সম্ভব ।
১. সবুজ শাকসব্জি: সবুজ শাকসবজি মানেই জানবেন ভরপুর পুষ্টি সমৃদ্ধ আছে এতে। সব্জি তে প্রচুর পরিমাণে নানা ধরনের ভিটামিন নিযুক্ত থাকে, এগুলো ভক্ষণ করার ফলে শরীরে উপযুক্ত পরিমাণে প্রোটিন পৌঁছয়। আপনি যদি চান রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে, তাহলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আপনাকে শাকসব্জি রাখতে হবে।  পালং, সর্ষে, ব্রকোলির মতো শাকসব্জিও আয়রনে পূর্ণ, এছাড়া ভিটামিন বি১২, ফোলিক অ্যাসিডও রয়েছে পর্যাপ্ত মাত্রায়। ভিটামিন বা প্রোটিনের দিক থেকে ব্রকোলির কথা আলাদা করে একটু বলতে হয়, কারণ এতে রয়েছে আয়রন এবং বি কমপ্লেক্স ভিটামিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফোলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম। সবুজ শাকসব্জিতে যেই পরিমাণে ফাইবার থাকে তা অন্য কিছুতে একই সঙ্গে পাওয়া জুড়ি মেলা ভার। যা হজমে আপনাকে সাহায্য করে। যেহেতু এতে ক্যালোরি কম থাকে, তাই বেশি পরিমাণে খেলেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকেনা।
২. ভিটামিন সি- ভিটামিন সি ছাড়া আয়রনের শোষণ সম্ভব হয় না। স্ট্রবেরি, গোলমরিচ, পেঁপে, কমলালেবু, আঙুর, টমেটো, সবুজ ফুলকপি এবং টক জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
৩. ফলিক অ্যাসিড-  লাল রক্তকণিকা তৈরিতে এই ফলিক অ্যাসিড খুবই সাহায্য করে।  বাদাম, কলা, লিভার, শিমের বীজ, সবুজ সবজি, ব্রকোলি ফলিক অ্যাসিডের উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবে কাজ করে।
৪. বিট-  বীটে প্রচুর পরিমাণে লোহা রয়েছে। এছাড়া এর মধ্যে রয়েছে- তামা, ফসফরাস, ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম,  ভিটামিন বি১, বি২, বি৬, বি১২ । এমন অনেক চিকিৎসক আছেন যারা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেককেই। বীট ফলিক অ্যাসিড ফাইবার, আয়রন ও পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ থাকে, যার ফলে এটি লাল রক্ত কণিকা বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. আয়রন জাতীয় খাবার- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। খেজুর, আপেল, বেদানা, মুরগির ডিম, লিভার,  ডালিম, তরমুজ, কুমড়োর বীজ,  জলপাই খেলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানো যায়। দিনে একটি করে আপেল খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ঠিক থাকে,আরও নানা উপকার পাওয়া যায়। আবার সমপরিমাণে বিট ও আপেলের রস মিশিয়ে পান করতে পারেন ভালো উপকার পাবেন।
৬. বেদানা- বেদনাতে  ক্যালসিয়াম, ফাইবার, শর্করা, আয়রনে ভরপুর। বেদানা দেহে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একটি বেদানা খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো। বেদনা চিবাতে ভালো না লাগলে বেদনার জুস বানিয়ে পান করুন, আপনি সুফল পাবেন।
৭. সজনা পাতা: সজনে পাতার ভূমিকাও যথেষ্ট রয়েছে। এতে লোহা, তামা, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ সহ ভিটামিন এ, বি, সি দ্বারা পূর্ণ রয়েছে। সজিনা শাক বা পাতা তরকারি তে, ভাতে, বা ভেজে, সিদ্ধ করে খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
৮. শরীরচর্চা: একটা নির্দিষ্ট যথাযথ ডায়েটের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্সারসাইজের সময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়ে, কার্যক্ষমতা বাড়ে, ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হয়।যার ফলে শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়, যার জন্য ইতিবাচক ভাবে হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়।

You may also like

Mahanagar bengali news

Copyright (C) Mahanagar24X7 2024 All Rights Reserved