মহানগর ডেস্ক: টানা তেরো বছর ধরে তিল তিল করে তিনি বুনে চলেছিলেন তাঁর স্বপ্ন। স্বপ্ন ছিল একেবারে জাহাজের আদলে বাড়ি তৈরি করা। ঠিক রয়াল মেইল স্টিমার টাইটানিকের মতো (Farmer Is Building Titanic House)। তেরো বছর পর তিল তিল করে গড়ে তোলা সেই সেই স্বপ্ন এবার বাস্তবের রূপ নিতে চলেছে )। বাড়িটি একেবারে জাহাজের আদলে। জাহাজে যেমন সিঁড়ি থাকে,তেমনই সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে ওই জাহাজবাড়িতে।
দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) প্রান্তিক চাষি বাহান্ন বছরের মিন্টু রায় পরিবার নিয়ে ফাঁসিদেওয়া ব্লকের নীচবাড়ি গ্রামে থাকেন। ২০১০ সালে তাঁর ৯.৫ ডেসিমেল জমিতে তিনি তৈরি শুরু করেছিলেন তাঁদের জাহাজবাড়িটি। তবে তাঁর জাহাজবাড়িটি তৈরি করতে যে অনেক বছর লাগবে এবং সেজন্য পরিবারের লোকজনকে টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হবে,তাও ভেবেছিলেন। তবে জীবনে এমন বাড়িই বা কজনের হয়!
তবে শুরুতেই বিপত্তি। টাকা দিতে না পারায় যেসব ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন, তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে দমে না গিয়ে মিন্টু চলে যান নেপালে। সেখানে বাড়ি তৈরির কায়দাকানুন শিখে আসেন। তিন বছর পর বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর নিজের জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেন তাঁর জাহাজ বাড়ি তৈরির কাজ।
মিন্টুর স্ত্রী ইতি জানিয়েছেন, এই জাহাজবাড়ি তৈরি করতে গিয়ে ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে,তার হিসেব তাঁরা লিখে রাখেননি। তবে তাঁর ধারণা লাখ পনেরো টাকা খরচ হয়েছে। ইতি জানালেন তাঁরা খুবই গরিব। মেয়ে হওয়ার পর তাঁরা অন্যের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন। এরপর শ্বশুরের কাছ থেকে তাঁরা তিন বিঘে জমি পান। সেখানে চা-পাতা চাষ শুরু করেন।
তাঁর স্বামী টোটোও চালিয়ে রোজগার করেন। মিন্টু জানিয়েছেন আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে তাঁদের জাহাজবাড়িটির তৈরি শেষ করতে হবে। তিনি জাহাজবাড়ির ডেকে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান চালু করতে চান। এখনও কাঠের অনেক কাজ বাকি আছে। সেই কাজ হলে টাইটানিক বাড়িটি রাজকীয় আভিজাত্য পাবে। মিন্টুর ছেলে কিরণ জানান যখন আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ তাদের জাহাজ বাড়ি দেখতে আসেন, ছবি তোলেন, তখন তাঁদের ভীষণ আনন্দ হয়। সাংবাদিকেরাও প্রায় রোজই আসেন। ফোনে খোঁজ নেন। বাবার এই জাহাজবাড়ির স্বপ্ন সফল করতে সেও সাহায্য করতে চায় বলে জানিয়েছে কিরণ।