মহানগর ডেস্ক: এদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সাইবার প্রতারণার ঘটনা। তবে এক ধরণের প্রতারণাই নয়। প্রতিদিনই নিত্য নতুন ভাবে সাইবার অপরাধীরা প্রতারণা চালিয়ে যেতে শুরু করেছে। আর তাদের নিত্যনতুন প্রতারণার ফাঁদে পড়ে খোয়া যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। কিছুদিন আগেও পর্যন্ত লিংক পাঠিয়ে বা ওটিপি পাঠিয়ে তাতে ক্লিক করে টাকা আত্মস্যাতের ঘটনা চলছিল।
মানুষ ওই ধরণের প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার পরই প্রতারকরা নতুন পথে প্রতারণা শুরু করেছে। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের এক পিএইচডি ছাত্রী নতুন ধরণের প্রতারণার অভিযাগ জানান পুলিশের কাছে। ফেডএক্সের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়া এক প্রতারকের পাল্লায় পড়ে (Courier Scam Racket) দেড় লাখ টাকার কাছাকাছি তিনি খুইয়েছেন।
তাঁকে ফোন করে জানানো হয় কেউ একজন তাঁর নামে একটি পার্সেল পাঠিয়েছে। প্যাকেটের মধ্যে অবৈধ বেশ কিছু আইটেম রয়েছে। তাঁর পরিচয় ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এরপরই ওপারের লোকটি তাঁকে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।
লোকটি নিজেকে মুম্বইয়ের নারকোটিকস ডিভিশনের বলে দাবি করে। দুজনে ওই ছাত্রীকে স্কাইপে যোগাযোগ করতে বলে তাঁর বয়ান চায় এবং সিবিআই, আরবিআইয়ের নথি দেওয়ার কথা বলে। সেইসঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাচাই করার জন্য টাকা চায়।
ওই দুই প্রতারক নিজেদের মুম্বইয়ের নারকোটিক্স ডিভিশনের অফিসার পরিচয় দিয়ে বেআইনিভাবে এমডিএমএ সরবরাহের ব্যাপারে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ভয়ে, আতঙ্কে তাদের অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ চৌত্রিশ হাজার পঞ্চাশ টাকা পাঠাতে বাধ্য হন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ছাত্রীটি।
তাঁর মতো মুম্বইয়ের এক আইটি কর্মীও নারকোটিক্স বিভাগের অফিসার সেজে সাইবার অপরাধীদের ফাঁদে পড়ে প্রায় দু লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে দিল্লির এক চিকিৎসক চার কোটি সাতচল্লিশ লক্ষ টাকা প্রতারকদের দিতে বাধ্য হন। আর্থিক পরিষেবা সংস্থা জেরোধার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও নীতিন কামাথাও পার্সেল প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে টাকা খুইয়েছেন।
এই কুরিয়ার প্রতারণা কী? নতুন এই প্রতারণাকাণ্ডে প্রতারকরা বিশেষ করে তরুণ তরুণীদের নিশানা করে থাকে। আসলে তাদের নিশানা করে শিকার বানানো সোজা। প্রতারকরা ফোন করে বলে তাদের নামে কুরিয়ার পার্সেল রয়েছে। তাতে মাদক বা অবৈধ কিছু জিনিস বিদেশ থেকে পাঠানো হয়েছে। তাদের ফাঁদে পা দিলেই প্রতারকরা স্কাইপে যোগাযোগ করতে বলে। স্কাইপে নারকোটিক্স বিভাগের অফিসার হিসেবে প্রতারকরা পরিচয় দিয়ে নানা রকম ভয় ও চাপ দিয়ে থাকে।
শিকারদের আধার কার্ড, অন্যান্য পরিচয়পত্র ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চায়। তাদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য টাকা পাঠাতে বলে প্রতারকরা এবং জানায় টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। টাকা পাঠানোর পর তারা ফোনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আর কোনওভাবেই প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। এখন এই নয়া প্রতারণা থেকে বাঁচার মূলমন্ত্র হল বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হওয়া। এ ক্ষেত্রে পাঁচটি জিনিসে নজর রাখা জরুরি। প্রথম হল কোনও অবাঞ্ছিত ফোন কল এলে সতর্ক হওয়া। আপনাকে বলা হতে পারে তারা কুরিয়ার সার্ভিস বা ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি থেকে ফোন করতে পারে। ধরে নেবেন প্রতারকরা ফোন করেছে। ফোন এলে উপযুক্ত জায়গা থেকে ফোন যাচাই করে নেবেন। কুরিয়ার সংস্থা থেকে সত্যিই ফোন এসেছে কিনা, তা সরাসরি যাচাই করে নিতে হবে। তাড়াহুড়ো করবেন না। প্রতারকরা এ ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে থাকে। ফোনে বা অপরিচিত ওয়েবসাইটে প্রতারকদের আধার কার্ড থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কের তথ্য দিলেই প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা একশো ভাগ নিশ্চিত। কুরিয়ারে পার্সেল,যা আসার কথা নয়, তা এলে সংশয় প্রকাশ করে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে ভালো করে যাচাই করে নিন। নাহলে বিপদ অনিবার্য।