মহানগর ডেস্ক: সন্দেশখালি থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে ভোজের হাটে আটকে দেওয়া হল স্বেছাসেবী সংস্থার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমকে। পুলিশের সঙ্গে তীব্র বচসায় জড়ালেন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্যরা। সন্দেশখালির অত্যাচারিত পুরুষ-মহিলাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য এই দলটি সন্দেশখালি যাওয়ার পথে ১৪৪ ধারা জারির কথা বলে ভোজেরহাটে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমকে পুলিশ আটকে দেয়। প্রসঙ্গত, ভোজেরহাটে ১৪৪ ধারা জারি নেই।
এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের নেতৃত্বে আছেন পাটনা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি নরসিমা রেড্ডি সহ মোট ছয়জন। প্রতিনিধি দল ও রাজ্যের বেশ কয়েকজন আইনজীবী সন্দেশখালি এলাকায় যাবেন বলেই প্রাথমিক ভাবে জানা যায়।
নরসিমা রেড্ডির বক্তব্য, “আমরা কোনও আইন ভাঙিনি। আমাদের রাস্তায় বাধা দিয়ে পুলিশ আইন ভেঙেছে।”
পুলিশি বাধা পেয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়েন প্রতিনিধিরা। রবিবার সকালেই মধ্য কললাতার যে হোটেলে এই প্রতিনিধি দলটি ছিলেন সেখানে গিয়ে পুলিশ তাঁদের সদেশখালি যেতে নিষেধ করে নোটিশ দিয়ে আসে।
পুলিশ জানিয়েছে, বসিরহাট থানা থেকে কলকাতা পুলিশকে বলা হয়েছে সন্দেশখালির পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে এই প্রতিনিধি দলকে ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের বক্তব্য, “আমরা সন্দেশখালি যাবোই। এই বাধা আইন বিরুদ্ধ। আমরা কোনও আইন ভাঙিনি।”
এদিকে টিমের সদস্যরা ভোজেরহাটে রাস্তায় বসে পড়ার ফলে এই রাস্তায় ব্যাপক জানজট সৃষ্টি হয়েছে। বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে রয়েছে।
সন্দেশখালিতে কি শুধু শাসকদলেরই যাওয়ার অধিকার আছে? এই প্রশ্ন তুলে পুলিশের সঙ্গে তুমুল বচসায় জড়িয়ে পড়েন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সন্দেশখালি আশান্ত হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত শাসকদল ছাড়া অন্য কাউকে এলাকায় ঢুকতে বারবার বাধা দিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। বাম, বিজেপি, বিজেপি মহিলা মোর্চা সদস্য সবাইকেই পুলিশ সন্দেশখালিতে ঢুকতে বাধা দিয়েছে। তবে এরই মধ্যে ব্যতিক্রম রাজ্যের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা, তাঁরা সন্দেশখালিতে বিনা বাধায় প্রবেশ করতে পারছেন।
পুলিশের যুক্তি, সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সেখানে কেউ গেলে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। তবে শনিবার দেখা গেছে রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুজিত বসু এবং পার্থ ভৌমিক সদেশখালির পাঠকপাড়ায় পৌঁছলে স্থানীয় মানুষেরা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারির দাবিতে দুই মন্ত্রীর সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অথচ শুভেন্দু অধিকারী, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে দেখে সন্দেশখালির স্থানীয় মহিলা-পুরুষেরা তাঁদের ওপর অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেছেন অভিযোগের মাধ্যমে।
বিরোধীরা বলছে, “শাসকের এই অত্যাচারের কাহিনী যাতে কেউ জানতে না পারে সেই কারণেই বিরোধী দল এবং বিভিন্ন সংগঠনকে সন্দেশখালিতে ঢুকতে দিতে চাইছে না পুলিশ এবং প্রশাসন।
এদিকে এর আগে সন্দেশখালির ঘটনায় জাতীয় মহিলা কমিশন, এসসি,এসটি কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এলাকায় এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে গিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি সংগঠন সন্দেশখালির ঘটনায় রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন দরকার বলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানিয়েছে। রাজ্যের শাসক এবং শাসকদল ৫২ দিনে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতেমনা পারলেও গ্রামের প্রতিবাদী মানুষদের কাউকে কাউকে গ্রেফতার করেছে এবং বিরেধীদের বাধা দিয়ে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের পাহারা দিয়ে সন্দেশখালিতে ঢুকতে দিচ্ছে।