Home Bengal রাষ্ট্রপতি ভবনে “নকল” নির্যাতিতারা? সংশয় রেখার!

রাষ্ট্রপতি ভবনে “নকল” নির্যাতিতারা? সংশয় রেখার!

by Mahanagar Desk
20 views

মহানগর ডেস্ক : সন্দেশখালি নিয়ে আরও একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। এর আগে গত শনিবার সন্দেশখালি নিয়ে ৩২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের একটি স্টিং ভিডিয়ো ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়। তৃতীয় ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
নতুন এই ভিডিয়োয় রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করা নির্যাতিতাদের পরিচয় নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে একই প্রশ্ন তুলেছেন সন্দেশখালির আর এক আন্দোলনকারিণী মাম্পি দাস। তবে ভিডিয়োটি কবে এবং কোথায় তোলা, তা স্পষ্ট নয়। এই ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি মহানগর 24X7.

তৃতীয় এই ভিডিয়োর শুরুতেই রেখার পাশে দাঁড়ানো মাম্পি দাসকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে সন্দেশখালির কিছু নির্যাতিতাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তা হলে আমরা কারা?” পাশে দাঁড়ানো আর এক মহিলা বলছেন, “আমরা তো সন্দেশখালির আন্দোলনকারী বা নির্যাতিতা। আমরা সবাই তো গিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী বা পিএম স্যরের সঙ্গে দেখা করতে। তা হলে আমাদেরকে ছাড়া রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে কারা গেল? আমরা তা হলে কারা?”

এই ভিডিয়োতেই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তথা সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম মুখ রেখা পাত্রকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “আমরা নির্যাতিতা মেয়েরা সন্দেশখালিতেই পড়ে রয়েছি। তা হলে আমাদের মুখ হয়ে কারা গিয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনে, এটা তো জানার প্রয়োজন রয়েছে। আর ওখানে যে রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে গিয়েছে, আমাদের কিছু জানিয়েছে? আমরা তো নির্যাতিতা, আমরাই আন্দোলনের মেন মুখ।”

এখন প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কে বা কারা, কাদের “নির্যাতিতা” সাজিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে গিয়েছিল? এই বিষয়টি নিয়ে শুধু সংশয়ই নয়, ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন রেখা পাত্র ও তাঁর সহযোগিরা। রেখা পাত্রদের দাবি করেছেন যে, “নকল” নির্যাতিতাদের দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছেন বিজেপি নেতা অনুপ দাসের কারসাজি। অভিযোগ, এই অনুপ দাস হচ্ছেন শাহজাহান শেখের “ঘনিষ্ঠ”।বর্তমানে জেলবন্দি শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবুর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে মাসোহারা অনুপ দাস নিতেন বলেও ভিডিয়োতে অভিযোগ করেছেন মাম্পি। রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়া এক অভিযোগকারিণী “তৃণমূলের লোক” কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রেখা-মাম্পিরা। ভাইরাল ভিডিয়োটিতে মাম্পি বলছেন, “খবর পেয়েছি যে অনুপ দাস নিয়ে গিয়েছেন। অনুপ দাস তো ভিতরে ভিতরে শিবু হাজরার কাছ থেকে মাস গেলে ১০ হাজার টাকা করে পয়সা নিত। খবর আছে ওঁর সঙ্গে পদ্মা মণ্ডলও গিয়েছেন। তা হলে কি এটা বুঝব যে, পদ্মা মণ্ডল টিএমসির লোক? উপরে উপরে বিজেপি করে?” বিজেপির একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, অনুপ এক সময় বিজেপি করলেও পরে তাঁকে দল থেকে “বের করে দেওয়া হয়”।

নতুন এই ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে মুখ খুলেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “যে অনুপ দাসের কথা বলা হচ্ছে, তাঁকে আমি চিনি। উনি দীর্ঘ দিনের বিজেপি কর্মী।” সন্দেশখালির আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক দল ছিল না বলে দাবি করে শমীকের সংযোজন, “যাঁরা এই ভিডিয়োয় বক্তব্য রাখলেন, তাঁরা এই আন্দোলনের মধ্যে নতুন এসেছেন। রেখা পাত্রও নতুন এসেছেন। ছোট ছোট দ্বীপে মহিলারা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন করেছিলেন। এর মধ্যে কোনও বিজেপি, তৃণমূল, সিপিএম ছিল না। ভবিষ্যতেও এই আন্দোলন হবে।”
এদিকে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবং বর্ধমান দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “কে জানে যে যাঁদের সামনে আনা হয়েছে, তাঁরাই নির্যাতিতা? যাঁরা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না, তাঁরা কি নির্যাতিতা নন? তাঁরা রাষ্ট্রপতির সামনে মুখ খুলেছেন। এখানে খোলেননি। সন্দেশখালিতে পাড়ায় পাড়ায় নির্যাতিতা রয়েছেন।”

নতুন ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে বিজেপিকে তোপ দেগে তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, “রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলকে বদনাম করার জন্য সন্দেশখালির চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছিল। মহিলাদের সম্ভ্রমকে ভোট বৈতরণী পার করতে ব্যবহার করেছিল বিজেপি। সেই মুখোশ খুলে গিয়েছে। আরও বেআব্রু হচ্ছে।”

সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, “পুরোটাই নাটক ছিল। কখনও রেখা পাত্র, কখনও অন্য মহিলাদের নিয়ে গিয়ে বলানো হয়েছে আমরা নির্যাতিতা। বিজেপি এই ষড়যন্ত্রটা করে সন্দেশখালির মহিলাদের অপমান করেছে।”

সিপিএম অবশ্য বিজেপি এবং তৃণমূল– দু’পক্ষকেই একই বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানিয়েছে। সন্দেশখালির প্রাক্তন বাম বিধায়ক এবং বর্তমান বসিরহাটের সিপিএম প্রার্থী নিরাপদ সর্দার বলেন, “আন্দোলন বাস্তবসম্মত ছিল। ওখানে জমি লুট হয়েছে, ১০০ দিনের কাজের টাকা লুট হয়েছে। মা-বোনেরা এর প্রতিবাদ করলে তাঁদের উপরে অত্যাচার হয়েছে। তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। তৃণমূল আর বিজেপি মিলে এই আন্দোলনটাকে ভাঙল।”

গত ১৫ মার্চ সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন সন্দেশখালির ১১ জন “নির্যাতিত”। এঁদের মধ্যে ছিলেন পাঁচ জন মহিলা এবং ছ’জন পুরুষ। শাহজাহান এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীর কাছে প্রতিকার চান ওই ১১ জন। রাষ্ট্রপতি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। এমনকি, দুঃখপ্রকাশও করেন। অন্য দিকে, গত ৬ মার্চ বারাসতে জনসভা করার পর সন্দেশখালির “নির্যাতিতা” মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ভিডিয়োয় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নির্যাতিতাদের দেখা করার প্রসঙ্গটি ওঠায় কেউ কেউ মনে করছেন ভিডিয়োটি ওই সময়েই তোলা হয়ে থাকতে পারে। ওই সময় বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী হিসাবে রেখার নামও ঘোষণা করেনি বিজেপি।
রেখা পাত্র এবং মাম্পি দাস যা বলছেন সেটা সত্যি হলে বিষয়টা এমন দাঁড়ায় অনুপ দাস নির্যাতিতা সাজিয়ে ১১ জনকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবার ব্যবস্থা করেছেন এবং এই অনুপ দাসকে ছদ্ম বিজেপি আসলে তৃণমূল বলে অভিযেগও করছেন রেখা এবং মাম্পি। তাহলে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে অনুপ দাস যদি সত্যিই শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ হবেন তাহলে তিনি শেখ শাহজাহান এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে মহিলাদের সম্ভ্রম লুঠের অভিযোগ জানাতে যাবে কেন? এতে তৃণমূলের লাভ কোথায়? আবার শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, <span;>যে অনুপ দাসের কথা বলা হচ্ছে, তাঁকে তিনি চেনেন। অনুপ দাস দীর্ঘ দিনের বিজেপি কর্মী। সন্দেশখালির আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক দল ছিল না বলে দাবি করেন শমীক, তিনি বলেন,  “যাঁরা এই ভিডিয়োয় বক্তব্য রাখলেন, তাঁরা এই আন্দোলনের মধ্যে নতুন এসেছেন। রেখা পাত্রও নতুন এসেছেন। ছোট ছোট দ্বীপে মহিলারা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন করেছিলেন। এর মধ্যে কোনও বিজেপি, তৃণমূল, সিপিএম ছিল না। ভবিষ্যতেও এই আন্দোলন হবে।” তাহলে রেখা পাত্র সন্দেশখালি আন্দোলনের নতুন মুখ, আগে তিনি ছিলেন না, এটা শমীক ভট্টাচার্য নিজেই বলছেন? অন্যদিকে রেখা পাত্রর হয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “রেখা পাত্র শক্তিস্বরূপা, তৃণমূলের অত্যাচারের শিকার। রেখা পাত্রকে ভোট দিন।”
আসলে রেখা পাত্র এবং মাম্পি দাসদের কথায় প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে অত্যাচারিত বলে যাদের রাষ্ট্রপতির কাছে অনুপ দাসের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তারা আসল অত্যাচারিত নয়। আর রেখা ও মাম্পির বক্তব্য যদি সঠিক হয় তাহলে সবটা বিজেপির সাজানো ঘটনা বলেই মনে মনে হতেই পাতে। তাই এই সংকট থেকে দলকে রক্ষা করতে শমীক ভট্টাচার্য কি অনুপ দাসকে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন? রেখা পাত্র, যিনি বিজেপি প্রার্থী তাঁকে বলছেন সন্দেশখালি আন্দোলনের নতুন মুখ? এদিকে মাম্পি দাসের নামে সন্দেশখালি থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

You may also like

Mahanagar bengali news

Copyright (C) Mahanagar24X7 2024 All Rights Reserved