মহানগর ডেস্ক : ১৯ হাজার চাকরিপ্রাপককে যোগ্য বলে অবশেষে মানল স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি ! সেইসঙ্গে যোগ্য চাকরিহারাদের মুখে হাসি ফোটার মতো ঘটনা ঘটল। এসএসসি মেনে নিয়েছে প্রায় ৭ হাজার অবৈধ নিয়োগ হয়েছে । তবে এসএসসি আদালতে মুখে বললেই ১৯ হাজার চাকরি প্রার্থী যোগ্য হয়ে যাবে না, এটা আদালতে তথ্য প্রমাণ দিয়ে এসএসসিকে জানাতে হবে। সেই সঙ্গ উল্লেখযোগ্য ভাবে উঠে এল রাজ্যের অবস্থান। তারা কার্যত সরাসরি এই যোগ্য-অযোগ্য বাছার দায় ঠেলে দিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপরই। প্রশ্ন একটাই, তাহলে এতোদিন কেন এসএসসি এই কথা কললাতা হাই কোর্টে জানায়নি? কেন এখন রাজ্য সরকার এসএসসির উপর সব দায় ঠেলে দিচ্ছে? যদি রাজ্য সরকারের এই অবৈধ নিয়োগে কোনও ভূমিকা না থাকে তাহলে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কেন রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে গেল? আর এখন কেনই বা রাজ্য সরকার সব দায় এসএসসির উপর চাপাচ্ছে? এদিকে শীর্ষ আদালত এসএসসি-র এই সওয়ালের পর বলেছে, প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট জানতে চায় নাইসা নামক যে সংস্থাকে ওএমআর শিট এর কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের কি টেন্ডারের মাধ্যমে নেওয়া হয়? ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ কি আছে? না হলে কিসের ভিত্তিতে এসএসসি দাবি করছে ১৯ হাজার যোগ্য?
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এসএসসি চাকরি বাতিল মামলার শুনানি ছিল। প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় রাজ্যকে। গত সপ্তাহের সোমবার শুনানিতে রাজ্য, এসএসসি, পচিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, চাকরিহারা- সবপক্ষের বক্তব্য শুনতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার নির্দিষ্ট সময়ে শুনানি শুরু পর থেকেই রাজ্যকে প্রধানবিচারপতির প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আর যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করার প্রশ্নে এসএসসি-র কোর্টে বল ঠেলল রাজ্য। তারপরই এসএসসি জানায় তাদের কাছে তালিকা আছে, ১৯ হাজার চাকরিপ্রাপক যোগ্য ! স্বাভাবিক ভাবেই আদালত প্রশ্ন করে, কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য, তাহলে এতদিন বলতে পারেনি এসএসসি?
আদালতে রাজ্যের দাবি, কারা যোগ্য-কারা অযোগ্য, বলতে পারবে এসএসসি। পুরো প্যানেল বাতিলের প্রয়োজন ছিল কি না, তা বলতে পারবে এসএসসি। অংশবিশেষ বাতিলের সুযোগ ছিল কি না, তাও জানাতে পারবে এসএসসি-ই। অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরির প্রশ্নে রাজ্য সরকারকে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “কেন রাজ্য অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিল?” আদালত প্রশ্ন করেন, ২০১৬-র নিয়োগ প্রক্রিয়া অথচ ২০২২-এ কেন অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি করা হল, ততদিনে তো প্যানেলের মেয়াদি শেষ হয়ে যায় ! ৬ বছর পরে তো প্যানেলেরই মেয়াদ পার হয়ে যায়। তাহলে সেই প্যানেল থেকে অতিরিক্ত শূন্যপদে লোক নেওয়া হল কেন? রাজ্য সরকারকে প্রশ্ন করেন দেশের প্রধান বিচারপতি। ২০২১-এ হাইকোর্টে মামলা, অভিযোগ উঠতেই শূন্য পদ তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করে রাজ্য। রাজ্যের দাবি, ৬ হাজার ৮৬১ অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু, হাইকোর্টের নির্দেশে তা কার্যকর হয়নি। তাতে কোর্টের প্রশ্ন, “ওয়েটিং লিস্ট থাকা সত্ত্বেও কেন অতিরিক্ত শূন্য পদ? নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হলে ওয়েটিং লিস্টও তো বাতিল হয়ে যায়”, রাজ্য সরকারের সওয়ালে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারি চাকরির উপর যদি মানুষের ভরসা চলে যায় তাহলে আর কি বাকি রইল? এর ফলে সরকারি চাকরির উপর থেকে মানুষ ভরসা হারাবে। ডেটা স্ক্যান টেক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত।
এখন রাজ্য যতোই এসএসসির উপর দায় চাপাক অভিজ্ঞরা বলছেন, সরকারের শীর্ষ কর্তাদের সম্মতি ছাড়া কোনও ভাবেই এই ভাবে চাকরি বিক্রি হতে পারে না। রাজ্য এখন মন্ত্রিসভাকে বাঁচাতেই এসএসসির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছে এবং বোঝা যাচ্ছে উপরোধে থেকি গেলার মতো করে এসএসসি ১৯ হাজার প্রার্থীকে যোগ্য বলছে। এখন এসএসসির প্রমাণ করতে হবে ১৯ হাজার প্রার্থী যোগ্য। তারপরই তাঁদের চাকরি নিশ্চিত হবে।