Home Offbeat রঙ তো সকলে খেলেন, প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনিও যে হোলির কথা বলে তা জানেন কি?

রঙ তো সকলে খেলেন, প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনিও যে হোলির কথা বলে তা জানেন কি?

by Mahanagar Desk
19 views
মহানগর ডেস্কঃ  আগামীকাল অর্থাৎ ২৫মার্চ সকলের রঙের প্রিয় জনপ্রিয় উৎসব দোল উৎসব। ২৬মার্চ হোলি। বাংলার দোল উৎসবের পরদিন প্রায় গোটা দেশ জুড়ে হোলি উদযাপন করা হয় বা পালন করা হয়। মানুষ, রঙের উৎসবের আগে কোথাও বুড়ির ঘর পুড়িয়ে অশুভ শক্তির বিনাশ করেন, তো আবার কোথাও হোলিকা দহনের মাধ্যমে অশুভ শক্তি বিনাশ করা হয় । রঙ খেলার উৎসব পালনের জন্য গোটা দেশ উৎসুক এইমুহূর্তে। তবে হোলির আগের দিন হোলিকা দহনের মাধ্যমে বা ন্যাড়াপোড়ানোর কার্যক্রমের দ্বারা এর সূচনা ঘটে। তারপর গোটা বাংলা জুড়ে দোল উদযাপন শুরু হয়ে যায়, আর শুধু বাংলাই নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দোল উৎসব উদযাপন হয় বা চলে রঙের খেলা। দোল বা হোলি মানেই রঙের উৎসব, খুশির উৎসব, সবার রঙে রং মেশানোর উৎসব। একে অপরকে রং লাগানোর উৎসব। গোটা দেশের মানুষ রঙের উৎসব উদযাপন করেন। আর সেই প্রস্তুতি পর্ব চলে প্রায় মাস খানেক আগে থেকে। তবে অনেকেরই অজানা এই উৎসবের শুরু কোথা থেকে হয়েছিল। রঙের উৎসব যেন সবার মনে সুখ শান্তি বয়ে নিয়ে আসে। তবে আপনি কি জানেন এই রঙের সাথে অনেক প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনিও হোলির সঙ্গে জড়িত।
এই উৎসব প্রথম শুরু হয় ঝাঁসির বুন্দেলখন্ডের আর্চ শহর থেকে। এক সময় এটি রাজা হিরণ্যকশ্যপের রাজত্ব ছিল। দৈত্যরাজের ছেলে প্রহ্লাদ ও তার বোন হোলিকার একটি ঘটনা ঘটে। এই বিশেষ কারণেই হোলি উৎসবটি শুরু হয়। হোলির এই পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে আজ বলার আর শোনার দিন। পূর্বে এই দোল উৎসবটি হোলিকা নামে পরিচিত ছিল। আর্যরা এই দিন নবত্রৈষ্টি যজ্ঞ করতেন। আবার মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের আমলে হোলি ঈদ-ই-গুলাবি নামে পরিচিত ছিল। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, হিমালয় কন্যা পার্বতী দেবাদিদেব শিবের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শিব তখন তপস্যায় মগ্ন ছিলেন। কামদেব, পার্বতীর অনুরোধে সেই সময় শিবের দিকে মদনবাণ ছোঁড়েন। ভঙ্গ করেন শিবের তপস্যা সময়ের পূর্বে। তাতেই মহাদেব প্রচণ্ড রেগে যান। এতটাই রেগে গেছিলেন যে তিনি তাঁর ত্রিনয়ন দ্বারা কামদেব অর্থাৎ মদনদেবকে ভস্ম করেন । কিন্তু তাতে পার্বতীর উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। পার্বতীকে, শিব তাঁর স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেন। হোলির আগুনে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল তাঁদের ভালবাসার মিলনের বিজয় উৎসব।
হোলিতে হিরণ্যকশিপুর কাহিনি জানেন? পুরাণ অনুযায়ী অত্যাচারী হিরণ্যকশিপু দীর্ঘ তপস্যা করে ব্রহ্মার কাছ থেকে অমরত্ব লাভ করেছিলেন । হিরণ্যকশিপু, ব্রহ্মার কাছ থেকে বর চেয়েছিলেন যে, দিনে বা রাতে, ঘরে এবং বাইরে কোনও প্রাণী, দেবতা, রাক্ষস বা মানুষ তাঁকে যেন  কখনও হত্যা করতে না পারে। তারপর এই বর লাভের ফলে তিনি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। বিষ্ণুর প্রতি অটল বিশ্বাসী ছিলেন তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ। প্রহ্লাদ তার কর্মের দ্বারা ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। হিরণ্যকশিপু তাঁর নিজের ছাড়া অন্য জনের কেউ প্রশংসা করুক তা সহ্য করতে পারতেন না। এদিকে তাঁর ছেলে প্রহ্লাদ বিষ্ণুর ভক্ত ছিলেন। তাঁর ছেলে বিষ্ণুর প্রশংসা করলে তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেন হিরণ্যকশিপু। প্রহ্লাদাকে হত্যার জন্য তাঁর বোন হোলিকার কোলে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, হোলিকা ভেবেছিলেন তাঁর মায়াবী বলে তিনি বেবহে যাবেন প্রহ্লাদ মারা যাবে। কিন্তু ঘটলো তার বিপরীত। কারণ বিষ্ণু আশীর্বাদ বা বর দান করেছিল যার জন্য প্রহ্লাদ বেঁচে গিয়েছিলেন, কিন্তু হোলিকা আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন। তারপর থেকে হোলির উৎসব এবং হোলিকা দহন হিসেবে উদযাপিত হয়।
রাধা-কৃষ্ণের দোলযাত্রায় যদি হোলির বিষয়ে বিবরণ করা হয় তাহলে বলতে হয়- তৃতীয় পৌরাণিক কাহিনি বলছে, পুতনা রাক্ষসী এক সুন্দর রমণীর বেশ ধারণ করে কৃষ্ণকে মারার জন্য এসেছিল।এমনকি কৃষ্ণকে বিষাক্ত দুধ পান করিয়েও মারার চেষ্টা করেছিল। শিশু কৃষ্ণও প্রাণ বরং পুতনার প্রাণ নিয়েছিলেন। পুরানে কথিত আছে যে, শিশু কৃষ্ণ তার প্রাণ নেওয়ার পর, পুতনার দেহ অদৃশ্য হয়ে যায়। তারপরেই গোয়ালারা গোবরের মূর্তি বানিয়ে তাকে জ্বালিয়ে দেয়। তারপর কৃষ্ণনের বড়ো হয়ে ওঠার পর রাধার সাথে তাঁর প্রেমের সম্পর্কও কিন্তু এই হোলির সাথে জড়িত। আজও তাঁদের প্রেমকাহিনী বর্তমান যুগেও চর্চিত। এই হোলির উৎসবের সাথে রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমলীলাও কিন্তু জড়িত রয়েছে। তাঁরাও বসন্তের এই মরশুমে একে অপরকে রঙ দিয়ে রাঙিয়ে দিতেন। বৃন্দাবনে রাধা ও কৃষ্ণের একে অপরকে রঙে রাঙিয়ে দেওয়া, এই প্রেম লীলা হোলির আখ্যা পায়।
এছাড়া প্রাচীন ভারতীয় মন্দিরগুলির দেয়ালেও হোলি খেলার মূর্তি পাওয়া গেছে। বিজয়নগরের রাজধানী হাম্পিতে একটি ষোড়শ শতাব্দীর মন্দির আছে, সেই মন্দিরেও হোলির অনেকগুলি দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়, যার থেকে প্রমাণ মেলে তখনও হোলি খেলা হত। রাজকুমার এবং রাজকন্যারা তাঁদের দাস-দাসীদের সঙ্গে নিয়ে হোলি খেলায় মত্ত এমন চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।
দোল পূর্ণিমার সময় ২৪মার্চ- ৯:৪২:১১ থেকে ২৫ মার্চ ১১:৪৭:২২ মিনিট পর্যন্ত। হোলিকা দহন এর সময়- ২৪মার্চ রাত ১১:১৩ – ১১:৫৩ পর্যন্ত। দোলের এই মরশুম আপনিও উপভোগ করুন। মেতে উঠুন আনন্দ উৎসবে। দোলের রঙে আশপাশের মানুষকেও রঙিন করে তুলুন। সব দুঃখ কষ্ট গ্লানি ভুলে এই রঙের সাথে নিজেকেও রাঙিয়ে তুলুন। পুরোনো সব কিছু শেষ করে নতুন করে সব কিছু শুরু করুন হোলিকা দহনের মাধ্যমে অশুভ শক্তি যেভাবে নাশ করা হয়। রঙিন হয়ে উঠুক সবার মনপ্রাণ। 

You may also like

Mahanagar bengali news

Copyright (C) Mahanagar24X7 2024 All Rights Reserved